গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ টি সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে অভিন্ন নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করার দাবি জানিয়েছে।
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বৃত্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্মসচিব সৈয়দ আলী রেজা সাক্ষরিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পিরোজপুর আইন, ২০২০ এর খসড়ার ওপর মতামত আহ্বানের একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরে।পরবর্তীতে একই নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা চেষ্টার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অভিন্ন নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে আজ (২৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৩ টি সংগঠন যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছে।
বিবৃতি প্রদানকারী সংগঠনগুলো হলোঃ
বশেমুরবিপ্রবি প্রেসক্লাব;বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক ফোরাম;বশেমুরবিপ্রবি রিপোর্টার্স ইউনিটি;কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ;পোল্ট্রি প্রফেশনাল’স বাংলাদেশ;বশেমুরবিপ্রবি সাহিত্য সংসদ;যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম;বিডি ক্লিন;ইয়াস বাংলাদেশ;এগারজন;রাইজিং বিডি রাইটার্স ফোরাম;আত্মার বাঁধনে সমৃদ্ধি (আবাস);আই+ওয়ান সোস্যাল সার্ভিসেস ক্লাব;গ্রীন ভয়েস;বাঁধন ;আলোক ভেলা;ফটোগ্রাফিক সোসাইটি; বশেমুরবিপ্রবি ফিল্ম সোসাইটি;বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ;বশেমুরবিপ্রবি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার কাউন্সিল ;আমি পাঠক; বশেমুরবিপ্রবি শিল্প ও সাহিত্য সংঘ; ইকো নেটওয়ার্ক।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ২০১৯ সালের ২ জুলাই তারিখে স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম পিরোজপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদনের প্রেক্ষিতে সেবছরই ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যৌক্তিকতা জানতে চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠান। একই বছরেরই ১৫ ই সেপ্টেম্বর মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানায়। সর্বশেষ এবছর ২০২০ ইং সালের ১৬ই জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব সৈয়দ আলী রেজার স্বাক্ষরিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায় গোপালগঞ্জে অবস্থিত জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেই হুবহু পিরোজপুরের বিশ্ববিদ্যালয়টিরও নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া আইনটির ওপর ১০ দিনের মধ্যে মতামতও চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও মাননীয় মন্ত্রী জনাব শ. ম. রেজাউল করিমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন প্রণয়নের পর্যায়ে বলে জানানো হয়েছে।
কিন্তু গোপালগঞ্জে ইতোমধ্যেই রয়েছে হুবহু “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাই ২০০১ সালে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমিতে তাঁরই নামে স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স প্রায় দুই দশক হলো। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে আসন সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম, ৩৪ টি বিভাগে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ এই বিশ্ববিদ্যালয়।
মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির পিতা। তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক হতেই পারে। বর্তমানে তাঁর নামে মেডিকেল, কৃষি, মেরিটাইম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস, ডিজিটাল ও একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বমোট মোট ৭ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় নামে আরও একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের কাজ চলছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জাতির জনকের নামে হলেও প্রতিটি নাম স্পষ্টভাবে স্বতন্ত্র ও একটি অপরটি থেকে আলাদা। কিন্তু পিরোজপুরে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হুবহু গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেই প্রস্তাব করা হয়েছে। ”
একই নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে জানিয়ে বিবৃতিতে আরো বলা হয় “বিশ্ববিদ্যালয় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এর নাম নিয়ে বিভ্রান্তি হবে, এমনটা হওয়া উচিৎ নয়। পৃথিবীর হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনদেশে হুবহু একই নামের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে বলে আমাদের জানা নাই। আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে, হুবহু একই নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বিভিন্ন সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করতে গিয়ে প্রয়োজনের তাগিদেই স্থানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করবে। তখন জাতির পিতার নাম মৌখিকভাবে থাকবেনা, স্থানের নামেই বিশ্ববিদ্যালয় দুটি পরিচিত হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণের বিশেষ কোন স্বার্থকতাই থাকবেনা। আলোচিত পিরোজপুরের বিশ্ববিদ্যালয়টি কেবল প্রস্তাবনা পর্যায়ে। এখনো যেকোনো ভূল সংশোধনের সময় ও সুযোগ আছে। আমরা আবেদন করতেছি যে, প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম দেবার ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে দেয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয়টি একক, স্বতন্ত্র ও আলাদা নামে প্রতিষ্ঠিত হোক।”
Leave a Reply