পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম ও কর্মকর্তা নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, অতিরিক্ত পরিচালক, অতিরিক্ত গ্রন্থাগারিক ও অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদগুলোতে প্রতি অর্থ বছরে অডিট আপত্তি থাকা সত্ত্বেও অনিয়ম করে আপগ্রেডেশন দিয়েছে পূর্বের প্রশাসন। আবারও অনিয়ম করে চারজন কর্মকর্তাকে আপগ্রেডেশন প্রদানের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে প্রশাসন। চারজনের মধ্যে উপাচার্যের একান্ত ব্যক্তিগত সচিবও রয়েছেন। আজ এমনটি অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্যরা। এ নিয়ে তারা রেজিস্ট্রার অফিসে একটি স্মারক লিপি প্রেরণ করেন।
ঐ স্মারক লিপিতে কর্মকর্তারা আরো বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পূর্ববর্তী নির্দেশনা অমান্য করে নতুন করে ৪ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/অতিরিক্ত পরিচালক পদে ২৬ সেপ্টেম্বর গোপনে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে অতিরিক্ত পদে পদন্নোতি দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে তারা মৌখিকভাবে অবগত হয়েছেন। এই চার জন কর্মকর্তা হলেন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মনিরুজ্জামান, অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ পরিচালক জিএম শামসাদ ফখরুল, উপ-রেজিস্ট্রার শাওলী শারমিন, জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী।
চারজনের মধ্যে একজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, দুইজন অতিরিক্ত পরিচালক ও একজনকে অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে সুবিধা প্রদানে নিয়মবহির্ভূতভাবে আপগ্রেডেশন দেওয়ার জন্য প্রশাসন চেষ্টা করছে।
এর আগে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম ও কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন নীতিমালা অমান্য করে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, অতিরিক্ত পরিচালক, অতিরিক্ত গ্রন্থাগারিক এবং অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে সাতজনকে আপগ্রেডেশন প্রদান করা হয়েছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তাদের আপগ্রেডেশন দেওয়ায়, বাংলাদেশ শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন অর্থ বছরে আর্থিক অডিট আপত্তি দিয়ে আসছে। শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন অডিট আপত্তিতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে যে, চতুর্থ গ্রেডভুক্ত পদ অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের প্রদানকৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট থেকে আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা দিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্চুরী কমিশনকে অবহিত করতে হবে। সেই সাথে কর্মকর্তাদের পুন:পদায়ন করতে হবে। বর্তমানে অর্গানোগ্রামে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত কোনো পদ নেই।
উক্ত কর্মকর্তাদের নিয়ম বহির্ভূতভাবে আপগ্রেডেশন প্রদান করায়, ২০১৭-১৮ হতে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৯ লক্ষ ৩৪ হাজার ৯৩৫ টাকা এবং ২০২০-২১ হতে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৭০০ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি হারুনুর রশিদ ডন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অর্গানোগ্রাম সেখানে অতিরিক্ত কোনো পদ নেই।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৮ জনকে পদন্নোতি দেন। এখন আবার নিয়মবহির্ভূতভাবে ৪ জনকে পদন্নোতি দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। আমরা এটা নিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছি। প্রশাসন যদি এবার বিধিবহির্ভূত কাজ করে তাহলে আমরা আবার মাঠে নামবো।
কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নীতিমালা ২০১৪ এ ৫ম গ্রেডের কোনো কর্মকর্তাকে ৪র্থ গ্রেডে পদন্নোতি দেওয়া যাবেনা বলে উল্লেখ আছে।
৪র্থ গ্রেডে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। এ নিয়ে ইউজিসি প্রশাসনকে চিঠিও দিয়েছেন। এরপরও ২৬ সেপ্টেম্বর প্রশাসন ৪ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত পদে পদন্নোতি দেবেন বলে আমরা জেনেছি। আমরা নতুন করে এই ধরনের কোনো অবৈধ পদন্নোতি চাই না, আমরা চাই এটা বাতিল হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, আগে যে পদন্নোতিগুলো দেওয়া হয়েছে সেটা আগের প্রশাসন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে অতিরিক্ত পদ না থাকার বিষয়টি আমরা এসে অবগত হয়েছি। এটি নিয়ে অডিট আপত্তি এসেছে। আমরা এই বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি।
Leave a Reply