আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে মাত্র দুটি দেশ আছে যারা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। তার মধ্যে একটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , অন্যটি হলো বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের মেলিটারি বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। বাঙালির উপর নেমে আসে কালো রাত। সারাদেশব্যাপী হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগসহ নানা ধরনের বর্বরতা চালায়। পাকিস্তানি মেলেটারি বাহিনী বাঙালির উপর যে অমানবিক নির্যাতন চালায় তার নাম দেয় “অপারেশন সার্চলাইট”। পাক হানাদার বাহিনী “অপারেশন সার্চলাইট” পরিচালনা করে সেটা ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত। এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মেজর জেনারেল টিক্কা খান।
বাঙালির স্বাধীনতা ঘােষণা এবং স্বাধীনতা লাভের পেছনে রয়েছে এক সুদীর্ঘ প্রেক্ষাপট ও সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিলো। একটি পূর্ব পাকিস্তান ও অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের উপর প্রথম থেকেই ভাষা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সহ বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছিলো। ১৯৫২ সালে ভাষার উপর আঘাত হানে। বাঙালি জাতির মুখের ভাষা কেঁড়ে নিতে চায়। যখন পাকিস্তানের একমাত্র উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন আদেশ দেয় তখন পূর্ব বাংলা বিক্ষোভে ফেটে উঠে। পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালি জাতি আছে যারা ভাষার জন্য জীবন দেয়। পশ্চিম পাকিস্তান বাঙালি জাতির উপর নির্যাতনের মাত্রা ক্রমশ বাড়িয়ে দিতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। যেটাকে বাঙালির জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়। সর্বশেষে ১৯৭০ সালের সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। কিন্তু জনগণের রায়কে উপেক্ষা করে পাকিস্তানি সরকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। বাঙালি আপামর জনতা কিছুতেই সেটা মেনে নিতে পারেনি। আর তাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সংগ্রাম। যখন ২৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের মেলিটারি বাহিনী বাঙালির অস্তিত্ব শেষ করতে বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। ঘােষণাটি তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭-এ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘােষণা । সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম। যার মাধ্যমে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশ স্থান পায়।
প্রতিবছর ২৬ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ মর্যাদায় পালন করা হয়। স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গৌরবের ও মর্যাদার।
লেখক: মোঃ মিরান হোসেন।
Leave a Reply