দক্ষিণবঙ্গের জ্ঞান অর্জনের তীর্থস্থান ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উচ্চশিক্ষার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)। ইতিহাসের কালো অধ্যায়, একাত্তরের নির্মমতার সাক্ষ্য বহনকারী বধ্যভূমির উপর দাঁড়িয়ে আজকের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। সেশনজট আর ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করেছে।
ছাত্র রাজনীতির অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদানের গুণাবলী বিকশিত না হওয়ার ভয় কাটিয়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ৩০টির বেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। “বারো মাসে তেরো পার্বণ” আবহমান বাংলাদেশের এই প্রবাদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে লক্ষ্য করা যায়। বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর উৎসবে মেতে থাকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিবছর পিঠা উৎসব, বাউল উৎসব, পহেলা ফাল্গুন আর পহেলা বৈশাখে দক্ষিণবঙ্গের সবথেকে বড় আয়োজন করা হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের কাছে বসন্ত মানেই যেন ঈদ উৎসব। বছরের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিন ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে পালিত হয়। এ উৎসব পরিণত হয়েছে বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে। বসন্তের প্রথম মুহূর্তকে ধরে রাখতে তাই ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে নানা উৎসব ও সাজে। আর বসন্ত বরণ উৎসবের কথা না বললেই নয়। ক্যাম্পাসজুড়ে এক মহা উৎসবের আয়োজন। শিক্ষার্থীদের সাজ-সজ্জাই জানান দেয় ক্যাম্পাসে বসন্তের আগমন। সাধারণত মেয়েদের পরনে থাকে বাসন্তী রঙের শাড়ি, হাত ভর্তি চুড়ি, মাথায় থাকে ফুলের গাজরা আর ছেলেদের পরনে থাকে পাঞ্জাবী। এক উৎসব মুখর পরিবেশে মেতে ওঠে সবাই। বসন্তকে বরণ করতে কতই না আয়োজন থাকে ক্যাম্পাসজুড়ে।
এছাড়া বছরের শুরুতে নবীন শিক্ষার্থীদের আগমনে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। তিনদিন ব্যাপী শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান ‘র্যাগ ডে’ ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠানে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান তিনদিনের হলেও অন্তত এক মাস পূর্বে থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে।
এছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্তৃক অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাস থাকে সর্বদা মুখরিত। খেলার মাঠে ডিসিপ্লিনগুলোর মধ্যে আন্তঃডিসিপ্লিন ক্রিকেট খেলায় আয়োজন করা হয় প্রতিবছরই। খেলাপ্রিয় ক্যাম্পাসটিতে জয়ী হওয়ার পরে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের মধ্যে আবেগজনিত স্লোগান চোখে পড়ার মতো।
কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলে বন্ধ করে দেওয়া হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পর থেকে বিরাজমান পরিবেশ বদলে গেছে। নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো আনন্দ। মাসের পর মাস বন্ধ আছে হলগুলো। সেখানে নেই কোনো প্রাণের আভাস। বসন্তের আগমনে সেজে ওঠার বদলে জরাজীর্ণ আর বিষন্নতায় ভরে আছে ক্যাম্পাস। যেখানে বছরের শুরুতে নবীন শিক্ষার্থীদের আগমনে ক্যাম্পাস মুখরিত থাকে। এবং তাদেরকে বরণ করতে চলতে থাকে নানা আয়োজন। অথচ এবারে আগমন ঘটেনি কোনো নবীন শিক্ষার্থীর। করোনার ভয়াল থাবা পাল্টে দিয়েছে সব কিছু। হাদী চত্বর, ক্যাফেটেরিয়া, মুক্তমঞ্চ, অদম্য বাংলা, খানজাহান আলী হল চত্বরে দু একজনের দেখা মিললেও সেখানে নেই আগের মতো আড্ডা,কোলাহলে ভরপুর পরিবেশ।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে পারবে। তাই এখন রয়েছে শুধু আক্ষেপ, আর শিক্ষার্থীরা গুণছেন অপেক্ষার প্রহর।
Leave a Reply