পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব ক্ষেত্রেই নারী অবদান রেখে চলেছেন অবিরত। নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে নারীরা পরিবার ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও পরিবার ও সমাজে নারীর অবদান এবং কাজকে আর্থিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। নারীর কাজকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করার ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার নারীরা এমন অনেক কাজ করছেন, যেগুলো মজুরিবিহীন। যেমনঃ গৃহস্থালী কাজ, উঠানকেন্দ্রিক কৃষিকাজ, সন্তান লালন-পালন ও পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিদের সেবাযত্ন। পারিশ্রমিক ছাড়া তাঁরা এই কাজগুলো করেন বলে সেগুলোকে আমরা অবদান হিসেবে গণ্য করি না।
এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, একজন নারী প্রতিদিন একজন পুরুষের তুলনায় গড়ে প্রায় তিন গুণ সময় জাতীয় আয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না- এমন কাজে নিয়োজিত থাকেন। নারীর এই অবদানগুলোকে পরিবার ও অর্থনীতিতে স্বীকার করে নেওয়া এবং মর্যাদা প্রদান এখন সময়ের দাবি। তাই পরিবার এবং সমাজে নারীর কাজকে আর্থিকভাবে স্বীকৃতি এবং নারীর অবদান মূল্যায়ন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যদি পরিবার এবং সমাজে নারীর অবদান সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায়, পরিবার এবং সমাজ নারীর অবদানকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে থাকে, তবে সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বৈষম্য কমে যাবে।
প্রতি বছরের ন্যায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতই বাংলাদেশেও ১৬ দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ইউ কে এইড এর সহযোগিতায় “আমরাই আগামী আমরাই অদম্য” আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা , প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ৫০ এর অধিক ছবি প্রদর্শনী করা হয়। “মর্যাদায় গড়ি সমতা – সমাজে নারীদের প্রতিবন্ধকতা ও অবদান” প্রতিপাদ্যের উপর সমাজের বিভিন্ন পরিসরের ব্যক্তি বর্গদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া (মিতি), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা আফরোজ লাকি, বাংলাদেশ কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি, বৃটিশ কাউন্সিলের পরিচালক সেহনাজ করিম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম মেনেজার মোহাম্মদ জাহিদ হাসান, ডাঃ রেহনুমা তাবাসসুম জ্যোতি, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার এসোসিয়েশনের সদস্য গুলশান নাসরিন চৌধুরী, ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু সহ অনেকে।
আলোচনা সভায় সামিরা তারান্নুম রাবেয়া মিতি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হলে সবার আগে পারিবারিক সচেতনতা ও সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হবে । পরিবারের সাহায্য ছাড়া নারীরা তাদের যথার্থ মর্যাদা ও সম্মান কখনো অর্জন করতে পারবেনা। তিনি আরো বলেন বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক নারী বান্ধব ও সরকার নারীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । তবে সরকারের সকল উদ্যোগ তখনি সফল হবে যখন সবাই মিলে এক সাথে কাজ করা যাবে।
গুলশান নাসরিন চৌধুরী বলেন, নারীদের মূল্যায়ন তখনই যথার্থ হবে যখন তাকে তার স্বামী, সন্তান, পরিবার পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করবে। তিনি আরও বলেন নারীরা দিন দিন অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করলেও সমাজের মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন না করলে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবেনা। আর গৃহস্থালী কাজে অবশ্যই নারী পুরুষ সমান ভূমিকা পালন করা উচিৎ ।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি, তিনি বলেন, উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে, নারীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও বৈষম্য সৃষ্টি করছে এমন সকল দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, আচরণ পরিবর্তনে জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনসচেতনতা ও জন আন্দোলন সৃষ্টি ও পুরুষদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানের শেষে আলোক চিত্র প্রতিযোগিতার সকল বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার তুলে দেন ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা শহীদুল ইসলাম রাজন ও সভাপতি আরিফিন রাহমান হিমেল। এই সময় তারা আমরাই অদম্য নামক ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।
Leave a Reply