সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড করোনা মুক্ত হয়েছে।আমরা কবে নিউজিল্যান্ডের মতো করোনা মুক্ত হবো? কবে বাড়ির বাইরে খোলা আকাশের নিচে এক বুক শ্বাস নিতে পারবো?
করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে ১০২ তম দিন (১৭ জুন) অতিবাহিত করছে বাংলাদেশ। গতকাল রেকর্ড সংখ্যক ৫৩ জন মারা গেছে, যা দেশের এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ করোনায় আক্তান্ত হয়ে মৃত্যু সংখ্যা। করোনা সনাক্তেও প্রতিদিন রেকর্ড গড়ে চলেছে বাংলাদেশ। যদি পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ানো যেতো তবে এর পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে ধারণা অনেকের। প্রতিনিয়ত করোনা আক্রান্তদের অনেকেই নীরবে ছড়িয়ে যাচ্ছেন এ ভাইরাস। করোনা পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ছে তাই আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে, অনেকেই এখন পরীক্ষা করতে ভয় পাচ্ছেন, কেউবা ইচ্ছা করেই সব লুকিয়ে আত্নীয়, প্রতিবেশীদের বিপদে ফেলছেন তারা আবার অন্যদের সংক্রামিত করে চলেছে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যখন করোনার প্রকোপ কিছুটা কমছে কড়াকড়ি লকডাউন দেয়ার মাধ্যমে। তখন বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মহামারী করোনার বিস্তার আরও বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রায় সব অঞ্চলে। দেশের অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় লকডাউন শিথিলতা আনা হয়েছে যদিও দেশকে রেড, গ্রিন, ইয়োলো জোনে ভাগ করা হয়েছে। কিছু জায়গায় এসব জোন ভিত্তিক লকডাউন এর কার্যকারিতা থাকলেও অধিকাংশ এলাকায় এটি মানা হচ্ছেনা।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস পরবর্তীতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বহু দেশে। গতকাল ১৬ জুন ২০২০ পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী মোট করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৯৪ হাজার ৪৮১ জন, সুস্থ হয়েছ ৩৬ হাজার ২৬৪ জন। মারা গেছে ১ হাজার ২৬২ জন, যেখানে দেশে মোট পরীক্ষার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৭১৭ জন। শুধুমাত্র ঢাকা শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ১৮৭ জন।
আর বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭জুন সকাল ১১টা ৩০মি. পর্যন্ত হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট অনুসারে ৮২ লাখ ৬৪ হজার ৪৬৮ জন, মারা গেছে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ১৩৫ জন করোনা আক্রান্ত মানুষ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে মারা গেছে ১১ হাজার ৯০৩ জন। যা আমাদের দেশের মানুষের জন্য কড়া সতর্ক বার্তা দেয়।
করোনার সাথে যুদ্ধ করে করোনা মুক্ত হয়েছে পৃথিবীর অনেক দেশ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, নিউজিল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, ভিয়েতনাম, ফিজি ও ভ্যাটিকানের মতো ছোট রাষ্ট্রও। এছাড়া তানজানিয়া, পূর্ব তিমুর, হলি সি, ইরিত্রিয়া, মন্টিনেগ্রো সহ অনেকেই।
আল জাজিরার সর্বশেষ তালিকায় করোনাকে পুরোপুরি আটকে রাখা ১২টি দেশের নাম প্রকাশ করে, তারা হলো- উত্তর কোরিয়া, টঙ্গো, সলোমন আইল্যান্ড, তুর্কেমেনিস্তান, কিরিবাতি, মার্শাল আইল্যান্ড, মাইক্রোনেশিয়া, সামোয়া, নাউরু,ভানুয়াতু, পলাউ ও তুভালু। এসব রাষ্ট্রের সাথে অন্যান্য রাষ্ট্রের যোগাযোগ নেই বললেই চলে আর এগুলো প্রায় সবই দ্বীপ রাষ্ট্র।
আমাদের দেশে যেহেতু আক্রান্তের পরিমাণ অনেক বেশি তাই আমাদের এর থেকে বাচার উপায় কঠোর লকডাউন, এটি ছিল নিউজিল্যান্ড করোনা মুক্তের একমাত্র সফলতার মাফকাঠি। দেশটিতে ৪ স্তরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তার ফলাফলে করোনা মুক্তির শেষ ১৭ দিনে প্রায় ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষার পরে একটি রোগীও খুঁজে পায়নি নিউজিল্যান্ড আর তখনই ঘোষণা দেয়া হয় তারা করোনা মুক্ত দেশ। আমাদের দেশও এই নিউজিল্যান্ডের মতো হবে এমন স্বপ্ন দেখে দেশের প্রতিটি জনগণ তবে তা পূরণের জন্য যা করা প্রয়োজন তার কতটুকু আমরা পালন করি এমন প্রশ্ন জনমনে জাগে কি? জাগে তবে বাস্তবে তা রুপ নেয় না।
সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে করোনাভাইরাসের গতিপথ রোধের চেষ্টা চলছে। কিন্তু কিছু মানুষের অসচেতনতা, অসতর্কতা আর নিয়ম-নীতি না মানার ফলে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা; এর শেষ কোথায় সেটি সময়ই বলে দেবে।
লেখকঃ রিফাত নূর রাব্বি, শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।
Leave a Reply