বৈশ্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এ মানদণ্ড অনুসরণে উৎসাহিত করে আসছে।কিন্তু দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই মানদন্ডের ভেতরে নেই। ইউজিসির তথ্য বলছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)।এরপর যথাক্রমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)।এছাড়া তালিকায় রয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্য বলছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজার ৩৯৩ জন হলেও তাদের জন্য নিয়োজিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৮৮ জন। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:৪৪। অর্থাৎ প্রতি ৪৪ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন একজন করে।এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেরোবি উপাচার্যকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ১৩০০ দিনের মধ্যে ১১০০ দিনই অনুপস্থিত থাকেন।যেখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব তার উপরেই বর্তায়,সেখানে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্বপালনে হাজারো ত্রুটির কারনে পিছিয়ে আছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।”
শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে থাকা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বেরোবির পরের অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮ হাজার ২৯১ জন। এর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ১৯৩ জন। সে হিসেবে এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত দাঁড়ায় ১:৪৩।
পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০ হাজার ৯৮৯ জন। আর শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২৭২ জন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৪০। বিশ্ববিদ্যালয়টির তিনটি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউটের নিজস্ব কোনো শিক্ষকই নেই বলে জানা গিয়েছে।
করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কয়েক মাস আগে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য পদে যোগ দিয়েছেন ড. একিউএম মাহবুব। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “এখানে এসে দেখলাম, কয়েক বছরে একাডেমিক ও রিজেন্ট কমিটির সভা হয়নি। তাহলে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার তো কোনো সুযোগই নেই। দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষক সংকটসহ একাডেমিক সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ করছি। বেশ কয়েকটি বিভাগের ফলাফল প্রকাশের ব্যবস্থা করেছি। আর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো, অনেকেই জেলা পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র পোস্টে আসতে চান না। এজন্য আমরা ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরসহ বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের চুক্তিভিত্তিক বা সম্ভবপর অন্য কোনো উপায়ে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বলেন “অনেক দিন রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং না হওয়ায় শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন বন্ধ থাকায় ও নতুন শিক্ষক নিয়োগ না দিতে পারায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ”
তবে বর্তমান উপাচার্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া শুরু করায় দ্রুতই এই সমস্যা শেষ হবে বলে আশাবাদী তিনি।
উল্লেখ্য বশেমুরবিপ্রবিতে সাম্প্রতিক সময়ে আপগ্রেডেশনের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষকরা।
এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে রয়েছে পুরনো আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে শিক্ষক সংকট।
Leave a Reply