একজন মতি ভাই
জামান শিশু পার্কের সামনে ছোট একটি ভ্যান গাড়িতে বসে খুব মন দিয়ে টুকটুক করে কাঁচা মরিচ, পেয়াজ, শসা, গাজর কুঁচি কুঁচি করে চলেছেন সবার প্রিয় মতি ভাই। কখনও দেখা যায় সেগুলো ছোট্ট একটি মগের মধ্যে নিয়ে মুড়ি মিশিয়ে হাতের সাথে ঠকঠক করে ঝাকুনি দিয়ে বলে উঠছেন ঝাল মুড়ি! আর ক্রেতাগন কাঁচা মরিচের ঝাল দিয়ে পরিবেশন করা ঝালমুড়ি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন।
আবার কখনোবা কাঠফাটা রোদে ভ্যানগাড়ির ওপর বসে বিক্রি করছেন ঠান্ডা শরবত। আর সেগুলোর স্বাদে গলা ভিজিয়ে নিতে ভীড় জমাচ্ছেন সে পথে হেঁটে যাওয়া তৃঞ্চার্ত লোকজন।
বলছিলাম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর শহরে এক ঝালমুড়ি বিক্রেতার কথা, যার নাম মতি। সবাই ভালোবেসে ডাকেন মতি ভাই নামে। তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে এই রাস্তার পাশে বসে এই ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
মতি ভাইয়ের ক্রেতা হচ্ছেন মূলত ছাত্র-ছাত্রীরা। কেননা পাশেই রয়েছে ভূঞাপুর সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ইবরাহীম খাঁ সঃ কলেজ, দক্ষিণ পাশে ভূঞাপুর ফাজিল মাদ্রাসা সহ কয়েকটি কিন্ডার গার্ডেন। যেখানে পড়তে আসা শতশত শিক্ষার্থীদের প্রিয়মুখ তিনি।
মতি ভাই সকল শ্রেনীর লোকের মন জয় করে নিয়েছেন খুব সহজেই। মুখে এক চিলতে হাসি যেন লেগেই থাকে। দেখা হলেই হাসি দিয়ে, ‘ভাই কি খবর তোমাকে এখন কম দেখি ঘটনা কি!’ বলে সেই এক যুগের সম্পর্কটা আরো গভীর করে নেন খুব সহজেই।
মতি ভাই ব্যক্তি জীবনে একজন ভদ্র মানুষ, যা তাকে না দেখলে বোঝা যায় না। একজন মানুষ যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও ভদ্রলোক হতে পারেন সেটার উজ্জল দৃষ্টান্ত এই মতি ভাই। এ সম্পর্কে মতি ভাইয়ের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আসলে এই মতি এবং তার পরিবারের লোকজন খুবই ভদ্র। কি সুন্দর ব্যবহার!’
এ ব্যবসা সম্পর্কে মতি ভাইকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বহুদিনের ব্যবসা, এখনো তোমাদের ভালোবাসা আমায় অনুপ্রেরণা যোগায়। তবে স্কুল কলেজ খোলা হলে ভালো ব্যবসা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভ্যান গাড়িও চালিয়েছি। তবে এখন ব্যবসা একটু ভালো। দোয়া কইরো এবং মাঝে মাঝে এখানে এসো।’
এভাবে সহজ-সরল মতি ভাই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুক হাজার বছর। তার নিকট থেকে অনেক কিছু শেখার এবং বুঝার আছে। ভালো থাকুক সমাজের প্রত্যেকটি মতি ভাই।
লেখকঃ আব্দল্লাহ আল মামুন,
শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
মেইলঃAbdullahalmamungbenglish27@gmail.com
Leave a Reply