দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পথঘাট পেরিয়ে শহর নগর ছাড়িয়ে সব জায়গায় স্বেচ্ছাসেবা নিয়ে যার অবাধ বিচরণ তিনি নিঃসন্দেহেই সমাজের
একজন নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবী। মাত্র ২১ বছর বয়সেই মানুষ যাকে বলে রক্তের ফেরিওয়ালা, পড়ালেখার পাশাপাশি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার ইচ্ছে। রক্ত দেয়া এবং সংগ্রহের নেশায় ছেলেটি দিনরাত ছুটে চলেছে শহর কিংবা গ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে। কখনো সময় হলে নিজে রক্ত দেয়া ,এবং প্রতিনিয়ত মুমূর্ষ রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজনে রক্তদাতা নিয়ে পৌঁছে দেয়া হাসপাতালে। এগুলো করেই যিনি পরম শান্তি লাভ করেন তিনি-ই ‘ফারদিন আলম প্রান্ত’।
রক্ত সংগ্রহ কাজের শুরুটা কিভাবে হয়েছিলো জানতে চাইলে রক্তযোদ্ধা ফারদিন আলম প্রান্ত বলেন, ‘প্রথমেই আমার স্বেচ্ছাসেবী জীবনে আসার ক্ষুদ্রতম অনুভূতি কিংবা অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে, আমি এই পথে গত প্রায় ৬/৭ বছর যাবত ধরে কাজ যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। খুব ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে ছিলো অসহায় মানুষের জন্য কিছু করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো, এবং সব সময় এমন মানবিক কাজ করতে ইচ্ছে করতো ছোট থেকেই।
বড় হওয়ার সাথে সাথে যখন আমি সবকিছু বুঝতে শিখি এবং সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত হই তখন থেকেই এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ( প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- ইচ্ছে-পূরণ, সহ-শাখা পরিচালক- বৃহত্তর কুমিল্লা ব্লাড ব্যাংক”বাংগরা বাজার থানা শাখা’ এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র (ডিআইইউ) সহ-সভাপতি সহ আরও বিভিন্ন সংগঠনে আন্তরিকতার সহিত কাজ করে যাচ্ছি
রক্তদানের শুরুটা যেভাবে হয় বলতেই ফারদীন আলম প্রান্ত বলেন, ‘একদিন এক অপরিচিত ভাইয়ের জন্য এবি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন ছিলো তখন আমার সংগঠনের এক বড় ভাই আমাকে এই বিষয়ে জানায়, আমার বয়স তখন ছিলো ১৭ বছর ৩ মাস, আমার ব্লাড গ্রুপ এবি পজেটিভ, এবং তখন ছিলো রমজান মাস, রক্তদানের প্রচন্ড ইচ্ছে থাকার কারনে রোজা রেখেই আমি আমার জীবনের প্রথম রক্তদানের কাজটি শুরু করি।
তারপর থেকে এখন অবধি ৫ বার রক্তদানের সুযোগ হয়েছে। সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকলে আমৃত্যু চলমান থাকবে আমার রক্তদান এবং মানবিক সকল কার্যক্রম। আমার জীবনে করা সকল কিছুর জন্য পরম করুণাময় স্রষ্টার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা!
আমার এলাকায় প্রায় প্রতিটি সংগঠনের সর্বোচ্চ ডোনার সংগ্রহকারী হিসেবে আমিই নির্বাচিত হয়েছি। এলাকায় সবচেয়ে বেশি নজির সৃষ্টি করেছে আমার একটি বিষয় আর তা হলো আমার কাছে যে কেউ দিনে বা রাতে যেকোনো সময়ই রক্তের প্রয়োজন হলে একটু জানালেই আমি সাথে সাথে ব্লাড ম্যানেজ করে সম্পূর্ন নিজ উদ্যোগে। এভাবেই হাসি ফুটছে হাজারো মানুষের মুখে। মানবতার শ্রেষ্টদান, স্বেচ্ছায় রক্তদান এই স্লোগানকে বুকে ধারন করেই এগিয়ে যাচ্ছি সামনে। তবে এতো ব্যাস্ততা ও মানবিক কাজ করার মাঝেও যে বিষয়গুলো আমাকে আনন্দ দেয় তা হচ্ছে অনেক সহপাঠীই আমাকে এখন রক্ত-প্রান্ত নামে সম্বোধন করে।
রক্তদানে আগ্রহী ও রক্তগ্রহীতাদের রক্তের গ্রুপ, নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর রাখি আমি। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় প্রায় বিভিন্ন স্থানেই আমার ৩০০০+ রেডি ডোনারের তালিকা রয়েছে। তাদের কেউ কেউ কর্ম ব্যাস্ততাকে উপেক্ষা করে আমার ডাকে এসে রক্তদান করে যায়, কেউ কেউ নিজ দায়িত্বে রক্তদান করছেন বিভিন্ন হসপিটালে।
সৃষ্টি কর্তার আমাদের মানবজাতিকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য তাকে সর্বাবস্থায় সন্তুষ্ট করে চলা এবং তারই গোলামী করা, তাই যতোদিন বেচেঁ আছি মানুষের জন্য কাজ করে যাবো কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার স্বার্থে, যতদিন বেঁচে থাকবো হয়তো সাধ্য অনুযায়ী মানুষের জন্য কাজ করে যাবো,স্বেচ্ছায় রক্তদান করে যাবো, প্রকাশ্যে ও গোপন আমল করার চেষ্টা করবো কিন্তু আমাদের মৃত্যুর পরে আর কোনো আমল বা কাজ করার সুযোগ থাকবে সেই দিক বিবেচনা করা জীবনের সর্বশেষ দান হিসেবে আমি মরণোত্তর চক্ষুদান করে গিয়েছি, আমি বাংলাদেশ চক্ষুদান সমিতির একজন তালিকাভুক্ত চক্ষুদাতা “আমার চোখে পৃথিবী দেখুক অন্ধ মানুষটি” এবং তিনিও আমারই মতো মানুষের জন্য ভালো ভালো কাজ করুক এটাই জীবনের শেষ চাওয়া।
পরিশেষে ফারদীন আলম প্রান্ত বলেন, ‘আমার সর্বশেষ কথা হলো,
আমাদের দেশে অসংখ্য অভাবগ্রস্থ মানুষ রয়েছে। অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে, আমি আমৃত্যু মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই, রক্তদান ও সংগ্রহ করে মানুষের জীবন বাঁচানোতেই আমার তৃপ্তি। আমার সামান্য কষ্টে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটে- তাই আজন্ম এই কাজ চলমান থাকবে। সকলের দোয়া কামনা করছি।
Leave a Reply