কি শিক্ষা দিচ্ছে করোনা?কোনদিকে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ সামনের দিনগুলো?
কিছুটা পিছনে ফিরে দৃষ্টি দেয়া যাক। করোনা কালীন মহাসঙ্কটটি গত বছর শেষের দিকে চীন থেকে উদ্ভুত হয়।
মার্চ মাসের শুরুর দিকে আমাদের দেশে ধরাপড়ায় জনমনে কিছুটা সংশয় ভীতি দেখা যায়।
তবে যাই হোক, অনেকটা সময় এই ভীতি স্থায়ী করেনি,যখন দেশের জনগণ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিতে বের হতে শুরু করে। ঠিক তখন থেকে জনজীবণে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়।
এপ্রিলের শেষ হতে শুরু হয় রমজান আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ পূর্ব কেনকাটাও ছিল লক্ষণীয়। ঈদে বাড়ি ফেরায় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অসংখ্য মানুষ যেভাবে পারেন বাড়ি পথে ছুটেছেন।
সরকার কর্তৃক বেশ কয়েকমাত্রায় সরকারি ছুটি দেওয়া হলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে পরতে হয় বিপাকে।
বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে একদিকে যেমন হয়েছিল শ্রমিক দের ভোগান্তি অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের হার।
করোনাকালীন সময়ে দেশের জন্য সবথেকে সংকট হয়ে দাড়িয়েছে জনগণকে ঘরে রেখে তাদেরকে লকডাউন মান্য করানো।
ধাপে ধাপে লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে।
ঈদ পরবর্তী সময়ে নিয়ম মেনে সড়ক বিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানায় কিছুটা অনীহাও দেখা গেছে। অপরাধ প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ষণসহ ছিনতাই ও অন্য অপরাধের ধরণ। আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার বা অর্ধলক্ষ ছাড়াল।ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই নিয়ে ছিল সঙ্কট।
তবে আশার আলো যে ছিল না তা নয় আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা এ পর্যন্ত কম ছিল। প্লাজমা থেরাপী নিয়ে আশার আলো দেখছেন চিকিৎসকরা। কিছু গবেষক দাবী করেছেন জুলাইয়ের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে বিশ্বের অন্যদেশগুলোর মত। কিছু আকারে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে যদিও অনীহা দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে।
করনা পরিস্থিতিতে বাহ্যিক মূল্যবোধের অভাব দেখা দেয় ব্যাপক মানবিক মূল্যবোধের অভাবে অসংখ্য অপরাধী দের নতুন উপায়ে অপরাধ করতে দেখা যায়। ফেসবুকে কিছু ভুয়া নিউজের খবরও প্রকাশ হয়।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর একটা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছিলো করনার সুযোগ নিয়ে ঝাড়ফুঁক এর মাধ্যমে করানো সাড়াচ্ছে কিছু অসাধু লোক তারা সাধারণ কিছু মানুষের বিশ্বাসকে নিয়ে করোনার চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে, শুধু তাই নয় সোস্যাল মিডিয়ায় কয়েক স্থানে করোনার ওষুধ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের মধ্যে পাওয়া গেছে এমন নিউজও দেখা যায়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তৈরী র্যাপিড টেস্ট কিট নিয়েও ওষুধ প্রশাসন এ দুয়ের মাঝে একটি দ্বন্দ্বেরও তৈরী হয়।
করোনা সংকটে আমাদের দেশের মানুষের সবচেয়ে অসচেতনা প্রথম অবস্থায় দেখা গিয়েছিল মাস্কের ব্যবহার মাস্ক নিয়ে যেন মাথাব্যাথাই নেই তাদের কিছু শ্রেণীর মানুষ তো মুখের মাস্ক খুলে গলায় ঝুলিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পজিটিভ দৃষ্টিকোণও কিছু ছিল অনেক এ নতুন কোন কাজ কিংবা বই পড়েছেন কেউবা ভাল কিছু সিনেমা দেখে কিংবা উদ্ধাবণী কিছু শিখে সময়কাটিয়েছেন। তবে নিম্নবিত্তের জীবণে নেমে আসে সংকট কাজ না থাকায় আর জনপ্রতিনিধি দের দূর্নীতি এর কারণে ঠিকভাবে ত্রাণ পায়নি তারা।
সিলেটে গতকাল বাস শ্রমিক গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। করনো কালীন সংকটের পুরোটা সময় পরিবহন শ্রমিকরা তাদের পেশায় অর্থোপার্জন করতে পারেননি। ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে নিয়ম নীতি মানার কথা থাকলে বাড়ি ফেরা জনগণ এর তীব্র চাপে তা প্রায় দেখাই যায় নি।
পুরোপুরি বিষয় বিবেচনায় আমাদের দেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কোভিট ১৯ এর নিয়ম নীতি মেনে চলাটা অনেকটাই দূরহ হয়ে পড়ে।
করোনাকালীন শিক্ষা নিয়ে প্রকৃতির প্রতি সদয় হতে পারি আমরা।প্রকৃতির যেন এই সময়ে নতুন রুপে ফিরেছে।স্বাস্থ্যখাতের প্রয়োজনীয়তাও উপলব্ধি করায় সংকটটি। মনে করিয়ে দেয় স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সেনাবাহিনীদের প্রয়োজনীয়তা যে সবচেয়ে বেশী।
দেশের জনসংখ্যা ও সার্বিক দিক বিবেচনায় ভীতি এড়িয়ে সামনের ভবিষ্যতে করোনা জয়ী মানুষের পৃথিবীতে আমরা ফিরব বলে আশা রাখি।
লেখকঃ সিফাত সাব্বীর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply