চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া এডিপি বরাদ্দের ৫০ লাখ টাকার কাজ দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভাগাভাগি করে নিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দের আওতায় রাস্তার বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকার কাজ অর্থ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব নামধারী রাজিন দাশ রাহুলের সহযোগিতায় দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। দরপত্র প্রক্রিয়া না মেনে আরএফকিউ পদ্ধতি দেখিয়ে কাজের আগেই এই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
দুই প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা তোলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি জানান, কর্ণফুলীতে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৫০ লাখ টাকার এডিপি বরাদ্দ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি। আর স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী এডিপি বরাদ্দ দিয়েছেন ২৫ লাখ টাকার। এডিপি-৩-এর অধীনে ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তথ্যমতে আরও জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এডিপি ফান্ডের অর্থায়নে আরএফকিউ প্রকল্প দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকার এই কাজগুলো পেয়েছেন মেসার্স প্রত্যাশা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স দি কনস্ট্রাকশন ট্রেড। প্রতিষ্ঠান দুটি কর্ণফুলীর বাইরের। মেসার্স প্রত্যাশা এন্টারপ্রাইজের মালিক নির্ঝর বড়ুয়া জয় ও মেসার্স দি কনস্ট্রাকশন ট্রেডের মালিক মো. আলাউদ্দিন।
কর্ণফুলী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ তিনটি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় উপজেলার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থপ্রতিমন্ত্রী এই ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ দিয়েছেন।
৫০ লাখ টাকার ১০ প্রকল্প হলো:
বড়উঠান ইউনিয়নের (৮নং ওয়ার্ড) সরস্বতী সড়কে বরাদ্দের পরিমাণ ৫ লাখ টাকা, জুলধা ইউনিয়নের (৪নং ওয়ার্ড) আনিস তালুকদার সড়কে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা, শিকলবাহা ইউনিয়নের (১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড) ছুয়ের বাড়ি ও দেওয়ান বিবি সড়কে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা, বড়উঠান ইউনিয়নের (৩নং ওয়ার্ড) গুরুন খান সড়কে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা, বড়উঠান ইউনিয়নের (৮ নম্বর ওয়ার্ড) আনোয়ার আলী সড়কে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা ও শিকলবাহা ইউনিয়নের (৬নং ওয়ার্ড) ইসহাক মেম্বার বাডড়ি সড়কে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা। এই ৬টি প্রকল্পে ৩০ লাখ টাকার কাজ পেয়েছেন মেসার্স দি কনস্ট্রাকশন ট্রেডের মালিক মো. আলাউদ্দিন। অপর প্রকল্প চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের (৪ ও ৫নং ওয়ার্ড) হাজি আলিম উদ্দিন সড়কে বরাদ্দের পরিমাণ ৬ লাখ টাকা, চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের (৩নং ওয়ার্ড) জাগির মেম্বার সড়কে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের (৫নং ওয়ার্ড) সারদা আলম সড়কে ৪ লাখ টাকা ও আরও একটি প্রকল্পে ৫ লাখ টাকাসহ এই ৪টি প্রকল্পে ২০ লাখ টাকার কাজ পেয়েছেন মেসার্স প্রত্যাশা এন্টারপ্রাইজের মালিক নির্ঝর বড়ুয়া জয়। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১০টি প্রকল্পে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া ৫০ লাখ টাকার কাজ ভাগ করে নিয়েছেন। যদিও কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো ঠিকাদারকে একইসঙ্গে একাধিক প্রকল্পের কাজ দেওয়া যাবে না।
কর্ণফুলী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাওয়া হয় অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া ৫০ লাখ টাকার এডিপি বরাদ্দে কিভাবে শুধুমাত্র দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ পেলেন? জবাবে প্রকৌশলী মো. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘অর্থবছরের শেষ হওয়ার কারণে জুনে বিলটি পে-অর্ডার করার জন্য দুটি লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজ সম্পাদনের স্বার্থে টাকা তোলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনই কাজগুলো করবেন। ওই লাইসেন্সের স্বত্তাধীকারীরা কেউ কাজ করবে না। সেটা আমি নিশ্চিত করব।’
মেসার্স প্রত্যাশা এন্টারপ্রাইজের মালিক নির্ঝর বড়ুয়া জয়কে প্রশ্ন করা হয়—কর্ণফুলী উপজেলার কোনো টেন্ডারে তিনি অংশগ্রহণ করেছে কিনা? জবাবে জয় বলেন, ‘আমি সরাসরি কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করিনি। শামীম ভাই লাইসেন্স চেয়েছেন রাহুল দাদাকে দেওয়ার জন্য, তাই ওনাকে আমি দিয়েছিলাম। উনি রাহুল দাদাকে দিয়েছেন। আপনারা রাহুল দাদার সাথে কথা বলুন।’
পরে, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপির একান্ত সচিব পরিচয় প্রদানকারী রাজিন দাশ রাহুলকে (প্রকাশ আর.ডি রাহুল) বিস্তারিত জানানো হলে তিনি বলেন, এসব প্রকল্পের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না, একটি চক্র ওনার নাম বিক্রি করে ৫০ লাখ টাকার কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
অপরদিকে, নগরীর সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএর মতো বড় হাউসে কাজ করা দুটি লাইসেন্স কিভাবে কর্ণফুলী উপজেলা প্রকৌশল অফিসের প্রকল্প নিয়ে গেলেন জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা লাইসেন্স কোনো ব্যাপার না। স্থানীয়ভাবে কাজটি যে করবে তাকেই বিল দেওয়া হবে। জুনের শেষ দিকের বিষয় ছিলো তাই আমরা সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাতকে কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপির মুঠোফোনে ফোন করেও সংযোগ না পাওয়ায় হোয়াটসঅ্যাপে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
Leave a Reply