কোরবানি ঈদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
ঈদ মানেই আনন্দ, আর তা যদি হয় কুরবানির ঈদ তাহলে তো কথাই নেই। এই সময় জম্পেশ খাওয়াদাওয়া চলে বেশ কয়েকদিনব্যাপী। আর বেশি খাওয়া হয় রেড মিট বা লাল মাংস সাথে পোলাও, বিরিয়ানির মতন ভারী খাবার। এতে হঠাৎ করেই দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে আসে এক আমূল পরিবর্তন। যার ফলে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু ঈদের আনন্দে ভাটা পড়বে বলে অনেকেই এই ব্যাপারগুলো পাত্তাই দেয় না। এতেই ঘটে যত বিপত্তি। আপনি ভরপুর আনন্দ নিয়ে খাবেন অথচ কোন শারীরিক বিপত্তি তৈরি হবে না, এই ব্যাপারটা বেশ চমৎকার ; তাই না? অনেকেই হয়তো ভাবছেন যে এ কি আদৌ সম্ভব! সবাই তো লাল মাংস গ্রহণের ক্ষেত্রে কতশত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাকে! জ্বি, এটা সঠিক যে আপনি শারিরীক সমস্যা ব্যতীত কুরবানির মাংসের স্বাদ নিতে পারবেন তবে আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মাবলি।কোরবানি ঈদের কিছু স্বাস্থ্য সুরক্ষা টিপস জেনে নেয়া যাকঃ
১। মাংস রান্নার ক্ষেত্রে ম্যারিনেশন এর দিকে মনোযোগী হতে হবে। রান্নার আধা থেকে এক ঘন্টা পূর্বে মাংসকে লেবুর রস, টক দই, সিরকা, ভিনেগার বা পেঁপে বাটা ও সাথে অন্যান্য মশলা যেমন আদা, রশুন, পেঁয়াজ, গরম মশলা ইত্যাদি দিয়ে মাখিয়ে অর্থাৎ ম্যারিনেট করে রাখতে হবে। এতে করে মাংস নরম হবে, রান্নার সময় মাংস থেকে কিছুটা তেল বের হবে যার ফলে রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না।
আমরা সাধারণত মাংসে বেশ ভালো পরিমাণে তেল ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু রেড মিট বা লাল মাংস নিজেই উচ্চ ক্যালরি সম্বলিত খাবার। তার উপর এর সাথে অত্যাধিক তেল এর ব্যবহার একে আরও ক্যালরি সমৃদ্ধ করে তোলে যা মোটেই স্বাস্থ্য সম্মত নয়। তাই রান্নার পূর্বে মাংস ভালোভাবে ম্যারিনেট করে তবেই রান্না করুন।
২। মাংস উচ্চতাপে অনেক্ষণ ধরে রান্না করা অনুচিত। কেননা এর ফলে প্রোটিনের গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। এবং কিছু টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মাংস মাঝারি আঁচে রান্না করুন এবং বারবার গরম করে বা ভাজা ভাজা করে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩। যেহেতু কুরবানির মৌসুমে প্রায় প্রতিবেলায় রেড মিট বা লাল মাংস খাওয়া হয় তাই এই সময় অন্য প্রাণীজ আমিষ তথা ডিম, মাছ বা মুরগি গ্রহণে বিরত থাকুন।
৪। মাংস খাচ্ছেন দেখে সব্জিকে আবার ভুলে যাবেন না যেনো। প্রতিবার মাংস খাবার ৩০-৪৫ মিনিট পূর্বে মাঝারি বাটির এক বাটি সালাদ খাবেন। এতে বিদ্যমান ফাইবার আপনার পরিপাক তন্ত্রকে সচল করবে এবং মাংস হজমে সহায়তা করবে।
৫। আমরা অনেকেই খাওয়ার আগে আগে বা খাওয়ার একদম পরেই পানি পান করে থাকি। এটি একদমই অনুচিত। কেননা এতে হজমে বিরূপ প্রভাব পড়ে থাকে। তাই খাওয়ার পূর্বে বিশেষ করে মাংস খাওয়ার আধা ঘন্টা পূর্বে এক থেকে দেড় গ্লাস এবং খাওয়ার প্রায় এক ঘন্টা পর থেকে পানি পান করা উচিৎ। এতে মাংস হজমের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে।
মনে রাখবেন কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তেমনই অতিরিক্ত মাংস গ্রহণও আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই একটু সচেতনতা অবলম্বন করে মাংস গ্রহণ করুন, সুস্থ থাকুন।
লেখকঃ জিনাতুল জাহরা ঐশী,
শিক্ষার্থী, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ,
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ,
আজিমপুর, ঢাকা।
Leave a Reply