খুলনার কয়রা উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মো.আক্তারুজ্জামান বাবুর বসতবাড়ি দখল করে অবৈধভাবে ক্যাডেট মাদ্রাসা চালু করায় উপজেলায় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে পতন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের।৫ আগস্ট বিকালে সংসদের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ভাঙচুর করে বাড়ির জানালা, দরজা,এসি খুলে নিয়ে যায়।
ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের সময় সাবেক সংসদ মো. আক্তারুজ্জামন বাবুর পরিবারের লোকজন বাড়িতে ছিল না।আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর হতে বাড়িটি খালি পড়ে ছিল।এই সুযোগে কয়রা সদরে কপোতাক্ষ কলেজের সামনে অবস্থিত সাবেক সংসদের বসতবাড়ি দখল করে কয়রা আইডিয়াল প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসা চালু করেন ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের জন্য কয়রা দারুল হিকমাহ মডেল মাদ্রাসা হতে চাকরিচ্যুত মো. সাইফুল্লাহ্ ও কয়রা সদর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফকিরের ছেলে এফএম মারুফুজ্জামান।তাদের নেতৃত্বে সংসদের বাড়ি দখল করে মাদ্রাসা চালু করা হয়, বর্তমানে মো.সাইফুল্লাহ্ কয়রা আইডিয়াল প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসার সুপার এর দায়িক্ত পালন করছেন।
জানা যায়,সাবেক সংসদ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু ২০২০ সালে অধ্যাপক রুহুল আমিন হতে কপোতাক্ষ কলেজের সামনে হতে জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন।একই দাগে আরো দুই জন অধ্যাপক রুহুল আমিন হতে জমি ক্রয় করে বহুতল ভবন নির্মাণ করলেও সেই বাড়িঘর দখল করা হয়নি।দখলের বিষয়ে কয়রা থানা ও কয়রায় অস্থায়ী নৌবাহিনী ক্যাম্পে সাবেক সংসদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ৫ আগস্টের পরে বাড়িটি নিজের বলে দখল করে নেয় কয়রা সদরে হোটেল ব্যবসায়ী শাহবুদ্দিন সরদার ।তিনি কয়রা সদর ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফকিরের ছেলে এফএম মারুফুজ্জামান ও চাকরিচ্যুত শিক্ষক মো.সাইফুল্লাহ এবং উত্তর মদিনাবাদ গ্রামের মমতাজ উদ্দীন ঢালীর ছেলে জিল্লুর রহমান মাধ্যমে বাড়িটি দখল পাকাপোক্ত করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,কয়েক জন শিক্ষার্থী বাড়ির উঠানে ঘোরাফেরা করছে। ৫ জন শ্রমিক বাড়ির সীমান প্রাচীর ভাঙার কাজ করছে।প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।প্রতিষ্ঠানে ৭ জন শিক্ষক আছেন।অন্যের বাড়ি জোর করে মাদ্রাসা পরিচলনার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান আগে এমপির বাড়ি ছিল,তিনি এখন এলাকায় নেই তাই আমরা মাদ্রাসা চালু করেছি।মাদ্রাসার সহকারী সুপার ইস্তিয়াক বলেন,এমপির জায়গা হলে তিনি আমাদের কাগজপত্র দেখালে আমরা তার থেকে ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসা করবো।আমি কাগজপত্র দেখেছি, এমপি সাহেব জমির কিছু অংশ পাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সিরাজ বলেন,সাবেক এমপি সকল নিয়মনীতি মেনে জমির মালিকের থেকে জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন।আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর কিছু মানুষ জোর করে সাবেক এমপির বাড়ি দখল করে নিয়েছে।কোটি টাকার মালামাল লুটে নিয়ে গেছে।দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাড়িটি দখল করে নিয়েছে।
জমির মালিক অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন,কপোতাক্ষ কলেজের এক সহকর্মী থেকে ১৯৯৪ সালে কলেজের সামনে জমিটি ক্রয় করি,২০০০ সালে জমিটির অংশ ব্যবসায়ী শাহবুদ্দিনের ভাইদেরও অংশ দাবি করে তারা আদালতে মামলা করে।আদালত ২০০৪ সালে জমির মালিকানা আমার বলে রায় দেয়।আমি ২০২০ সালে বৈধভাবে সাবেক এমপি বাবুর নিকট জমি বিক্রি করি।
কয়রা সদর ইউনিয়র বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান ফকিরের ছেলে এফএম মারুফুজ্জামান বলেন,ভাই ব্রাদার বন্ধু বান্ধন অনেকে বেকার।আমরা ২০১৯ সাল হতে মাদ্রাসা করার জন্য জায়গা খুঁজছিলাম।৫ আগস্টের পর টুলেট দেখতে পেয়ে আমরা বাড়িটি ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসা তৈরি করি।আমি ব্যবসা বাণিজ্য করায় মাদ্রাসার শিক্ষকতার সাথে না থাকলেও তাদের সহযোগিতা করি,ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদে আছি।বাড়িটি এক সময় এমপি সাহেবের ছিল, তবে জমিটির প্রকৃত মালিকদের থেকে আমরা ভাড়া নিয়েছি।জমিজমার কাগজপত্র সম্পর্কে ভাল ধারণা না থাকায় কাগজপত্র দেখা হয়নি।
দখল করা বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত কয়রা আইডিয়াল প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসার সুপার মো.সাইফুল্লাহ্ বলেন,মাদ্রাসাটি পরিচলনার দায়িক্তে থাকায় সবাই ভাবছে আমি বাড়িটি দখল করে নিয়েছি।মাদ্রাসা করার জন্য জমির মালিকের নিকট হতে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে পরিচলনা করা হচ্ছে।আমরা বাড়িটি দখল করেনি,মাদ্রাসার জন্য ভাড়া নিয়েছি।
কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ মো.ইমদাদুল হক বলেন,বিষয়টি আমার জানা নেই।সাবেক এমপির পক্ষে অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,কোন অভিযোগ পাইনি।অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply