পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠের একাংশে খেলাধুলা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানেই মার্কেট নির্মাণের জন্য রাতের অন্ধকারে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করে। সোমবার সকালে ঘটনা জানার পর ক্ষোভ জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘অদক্ষতাকে’ দায়ী করেছেন তারা। অপর দিকে কাজ থামাতে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে অনেকবার বলা হয়েছে, কিন্তু ওরা যেহেতু এরকম পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে তাই এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য নিজস্ব কোনো মাঠ না থাকায় ধূপখোলা খেলার মাঠটি তিন ভাগ করে এক ভাগ তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজকে ব্যবহার করার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দেন। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি খেলার মাঠ হিসেবে ধূপখোলা মাঠটিকে ব্যবহার করছে। এই মাঠেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মূলত মাঠ তিনটি অংশে বিভক্ত, যার অর্ধেক অংশ ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে এবং বাকি অংশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে। সিটি করপোরেশনের অংশে বাইরে থেকে মাটি এনে রাখা হয়েছে। চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। ক্লাবের মাঠ উন্নয়নকাজ চলছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে খনন শুরু হয়েছে।
তবে স্থাপনা নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। পরে প্রকল্পের পরিচালক আবুল হাশেমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন রেখে দেন।
মাঠের এই খনন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগীতার চ্যাম্পিয়ন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিমাত্র মাঠ, এইখানেই আমরা খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ করি। এইখান থেকেই হয়ত উঠে আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খেলোয়াড়। কিন্তু এখন এই মাঠ দখলে চলে গেলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে এবং ক্রীড়া অংশে বাংলাদেশ আরো পিছিয়ে পরবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার কামালউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। রাষ্ট্রপতির মৌখিক অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কোনো কাগজপত্র না থাকায় সিটি করপোরেশন তা গুরুত্ব দেয়নি। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে কাজ থামানো যায় কি না, তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
Leave a Reply