কক্সবাজারের চকরিয়ার রামপুর চিংড়িজোন এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। গত কয়েকদিন ধরে এই চিংড়িজোনে শুরু হয়েছে চিংড়িঘের দখলসহ ডাকাতির মতো ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১০ জানুয়ারী (বুধবার) ভোররাতে বিশাল একটি চিংড়িঘের দখলে নিতে গিয়ে ব্যাপক গুলি বর্ষণ করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে গুলি বিদ্ধ হয়ে ঘের সংলগ্ন বাড়ির সামনেই প্রাণ হারান রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির এক সদস্য। পরে খবর পেয়ে চকরিয়া থানা পুলিশ দুপুর বারোটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এবিষয়ে চকরিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ নিহতের লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নিহতের নাম মোহাম্মদ হোসেন (৫৬)। তিনি রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির ৬৬৮ নম্বর সদস্য। তার পৈত্রিক বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ায়। এদিকে, রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির পরিচালক শহীদুল ইসলাম জানান, সমিতির মালিকানাধীন চিংড়িজোনের সাহারবিলের রামপুর মৌজায় ৫১১২ একরের বিশাল চিংড়িঘের রয়েছে। এই ঘেরের বিশাল এলাকায় সমিতির নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণে থাকা চিংড়িঘের দখলে নিতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে চিংড়ি জোনে একাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রায় অর্ধ শতাধিক সদস্য মহড়া দিতে থাকে। এ সময় তারা সমিতির সদস্যদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশও দেয়। সেখানে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে কয়েকশ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। কিন্তু তাদের কথা মতো বাড়িঘর ছেড়ে চলে না যাওয়ায় আজ বুধবার ভোররাতে সমিতির সদস্য মোহাম্মদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিহত মোহাম্মদ হোসেনের স্ত্রী রশিদা বেগম জানান, সমিতির অধিভূক্ত সদস্য হিসেবে তাঁর স্বামী মোহাম্মদ হোসেন স্বপরিবারে চিংড়িঘেরের পাশেই বসতি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন দীর্ঘ সাতবছর ধরে। একইভাবে শত শত সদস্য স্বপরিবারে এখানে বসবাস করেন। এতদিন ধরে তারা এখানে নিরাপদে বসবাস করলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে অর্ধশত সশস্ত্র সন্ত্রাসীর আনাগোনা এবং তাদের ছোড়া বৃষ্টির মতো গুলির মুহুর্মূহ শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হওয়ায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। স্বামীহারা রশিদা বেগম আরো বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য এখানে বসবাসকারী সদস্যদের নির্দেশ দিলেও কেউ যাননি। এই অবস্থায় আজ বুধবার ভোররাতে চিংড়িঘের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করা কালে বাঁধা দিতে যান আমার স্বামী মোহাম্মদ হোসেন। এ সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে। এ ব্যাপারে পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার মো. রকীব উর-রাজা বলেন, আপাতত একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমি এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, খবর পেয়ে রামপুর চিংড়িজোনে গিয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তারিখ: ১০.০১.২০২৪ইং
Leave a Reply