চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিংগা হাইওয়ে থানা পুলিশের ইনচার্জ মাহবুবুল হক ভূইয়া’র যোগদানের পর থেকে মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহন থেকে বেপরোয়া টোকেন বাণিজ্য। টোকেনবিহীন গাড়ি রাস্তায় পেলেই আটক করে হাইওয়ে থানায় নিয়ে সন্ধ্যার পর মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। চালক ও শ্রমিকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন অনুসন্ধান চালান সাংবাদিকরা। পরে এ অনুসন্ধানে চালক ও শ্রমিকের কথার সাথে সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, চকরিয়ার চিরিংগা স্টেশনস্থ বিভিন্ন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিদের মাধ্যমে একধরনের জলছাপ কাগজে মাসের নাম ও সাল উল্লেখ করে দেওয়া হয় টোকেন। এসব প্রতিটি টোকেনের মূল্য নেওয়া হয় গাড়িভেদে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা করে। যা প্রতিমাসেই বহন করে আসছে বলে জানিয়েছেন চালকরা। প্রাথমিকভাবে মাসের ১-২ তারিখের মধ্যে টোকেনগুলো শ্রমিক সংগঠনের কর্তাব্যক্তি ও অর্ধডজনের অধিক দালালের মাধ্যমে চালকদের কাছে সরবরাহ করা হলেও ৫-১০ তারিখের মধ্যে শুরু হয় এসব টোকেনের টাকা উত্তোলন। এতে কেউ এসব টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি ধরে নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে দেওয়া হয় হুমকিধামকি। ডাম্পার ট্রাক চালক খোকন নামের এক ব্যক্তি জানান, টোকেনের জন্য মাসিক মাসোহারা হিসেবে গাড়ি প্রতি দেওয়া হয় ১০০০টাকা করে। জাহেদুল ইসলাম নামের এক সিএনজি চালক সাংবাদিকদের জানান, প্রতিমাসে ৪০০ টাকা করে টোকেনের টাকা দিয়েও অনেক সময় মেলেনা তাদের নিস্তার। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে গাড়ি ধরে নিয়ে গিয়ে দেওয়া হয় মামলা। আর এসব মামলার টাকা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা দেওয়ার পরেও গাড়ি ছাড়তে ফের আলাদাভাবে টাকা দাবি করে তারা। তাদের এমন অমানবিক আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চালক ও শ্রমিকরা। অন্যদিকে দেলোয়ার হোসেন নামের আরেক সিএনজি চালক বলেন, অন্য ১০ জনের মতো সে ও প্রতিমাসে ৪০০ টাকা দিয়ে টোকেন ক্রয় করেন। কিন্তু এরপরেও নিস্তার মেলেনি তার। গত ফেব্রুয়ারী মাসের ২৭ তারিখ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে চকরিয়া শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে আটক করে হাইওয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দেওয়া হয় ৭ হাজার ৫০০টাকার জরিমানা আদায়ের মামলা। মামলা পরবর্তী খোদ ইনচার্জ রিসিট নিয়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা দিলেই ছেড়ে দিবেন বলে জানান বলে দাবী করেন সে। কিন্তু, আটকের গত ৬ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তাকে গাড়ি দিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বার বার হাইওয়ে থানায় নিয়ে গিয়ে গাড়ি না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছেন বলে জানান এ চালক। জমির উদ্দিন নামের আরেক সিএনজি চালক জানান, প্রতিমাসে টোকেন বাবদ ৪০০ টাকা করে মাসোহারা দেওয়ার পরেও যদি সড়কে গাড়ি চালিয়ে হালাল ইনকাম করতে না পারি তাহলে বউ বাচ্চা নিয়ে আমাদের মরণ ছাড়া আর কোন ধরনের উপায় নেই। অন্যদিকে, চালক শ্রমিকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে চিরিংগা হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মাহাবুবুল হক ভূইয়ার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এবিষয়ে, কুমিল্লা হাইওয়ে রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিলানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, টোকেন আছে এমন কোন গাড়ি সড়কে পেলে সাথে সাথে আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবিষয়টি কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সুবাদে আমিও অবগত হয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে।
Leave a Reply