ইভ্যালি’র ভেলকি,সারা দুনিয়া টাস্কি! এমন সব দর্শক মাতানো বিজ্ঞাপন দিয়ে রাতারাতি দেশের ই-কমার্স দুনিয়ায় শীর্ষ স্থান দখল করেছিল ইভ্যালি।প্রায় অর্ধেক মূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির অফার যেনো লেগেই থাকতো রাতারাতি শীর্ষ স্থান দখল করা এই “ই-কর্মাস ” সাইটে।শুরু থেকেই নানা রহস্যে ঘেরা ছিল এই ই-কর্মাস সাইট।১০০ ভাগ ক্যাশব্যাকে পণ্য বিক্রি সহ নানা লোভনীয় অফার দিয়ে আসসিলো তারা।কিন্ত এবার মুদ্রার উল্টা পিঠ দেখতে হল এই প্রতিষ্ঠানকে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাদিয়া রাফিয়া রাফা (২৪) গত বছরের ৩০ অক্টোবর ইভ্যালি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কক্সবাজারে রয়েল টিউলিপ রিসোর্টে একটি রুম বুক করেছিলেন। এক মাস পর ইভ্যালি থেকে কল করে তাঁকে জানানো হয়, হোটেলটিতে সেই রুম বুক করার অফারটি আর নেই। অথচ অ্যাপে লেখা দেখাচ্ছিল সেখানে রুম আছে। এরপর তিনি পরিশোধকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দুই মাস ইভ্যালির অফিস ঘুরেও টাকা ফেরত পাননি।
ফাদিয়া রাফিয়া রাফার মতো লাখো গ্রাহকের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় গ্রাহকদের লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে ফেলে ভয়ানক প্রতারণা করেছে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি।প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আট ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে প্রচলিত বিভিন্ন আইন ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি তদন্ত টিম অনুসন্ধান করে নানা প্রতারণা ও অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে। তদন্তে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অর্ডার করা পণ্য নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি না দেওয়া, গ্রাহকদের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ না রাখা, পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে অগ্রিম নেওয়া টাকা ফেরত না দেওয়া, ক্যাশব্যাক হিসাবে টাকা না দিয়ে ই-ব্যালেন্স দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
জানা গেছে, নানা কৌশলের আশ্রয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। অথচ কম্পানির পরিশোধিত মূলধন মাত্র এক কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় নানা অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরাও শঙ্কা করছেন, এতে মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইভ্যালি তার গ্রাহকদের সঙ্গে হটলাইন নম্বর, সাপোর্ট ই-মেইল, ইভ্যালি অ্যাপ্লিকেশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যথাযথভাবে যোগাযোগ করে না। এ ধরনের ঘটনা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শামীম হাসান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনটিতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে আট ধরনের অনিয়ম পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব অপরাধের দায়ে বিদ্যমান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর বিভিন্ন ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ইভ্যালির এসব অপরাধের দায় কম্পানির মালিক মো. রাসেল আহমেদের ওপর বর্তায়।
Leave a Reply