মাসিক সম্মানী ও বিভিন্ন ভাতা পাওয়া ১ লাখ ৯৩ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম গত বছরের অক্টোবরে একটি সফটওয়্যারে যুক্ত করার পরই হঠাৎ সংখ্যাটি ২১ হাজার কমে যায়। যাঁদের নাম বাদ পড়েছিল, তাঁদের গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণসহ নাম অন্তর্ভুক্তির সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু চার মাস পরও ১৩ হাজার জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকে হয়তো একাধিক নামে, নয়তো জাল সনদে এত দিন ভাতা তুলেছেন।
ওই ১৩ হাজার ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা আর নেই বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, এত বছর ওই ব্যক্তিরা যে সুবিধা নিয়েছেন, তাতে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ১২ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। এর আগে ছিল ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, ৫ হাজার টাকা বিজয় দিবসের ভাতা এবং ২ হাজার টাকা বাংলা নববর্ষ ভাতা পান। বছরে একজন সব মিলিয়ে ভাতা পান ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়া শুরু হয়। তখন ভাতা ছিল ৩০০ টাকা। ধাপে ধাপে তা বেড়ে ২০০৮ সালে হয় ৯০০ টাকা। ২০১৪ সালে হয় ৫ হাজার টাকা। ২০১৬ সালে হয় ১০ হাজার টাকা।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এত দিন মন্ত্রণালয় ইউএনওদের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার টাকা এখন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সফটওয়্যারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার পর গত বছরের অক্টোবর থেকে সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভাতার টাকা যাচ্ছে। কারও সনদ জাল প্রমাণিত হলে বা জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যে ত্রুটি থাকলে তাঁদের নাম এমআইএসে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যাঁদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাসের কম ছিল,তাঁদের নাম এমআইএসে যুক্ত হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল বলেন, যাঁরা এত দিন মিথ্যা তথ্য দিয়ে টাকা নিয়েছেন, তাঁদের কাছে তা ফেরত চাওয়া হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ অনিয়ম করে থাকলে তাঁকে কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, নামের তালিকা এমআইএস সফটওয়্যারে যুক্ত করার পর নানা অনিয়ম বেরিয়ে আসছে।
Leave a Reply