পৃথিবীর সব ধর্মেরই মূল কথা শান্তি, সম্প্রীতি, ভালোবাসা, মৈত্রী। এই শিক্ষা থেকে সরে এসে এক সম্প্রদায়ের প্রতি অন্য সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ, হিংসা ও আক্রোশেই সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন প্রকাশ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। সাম্প্রদায়িকতার কাছে পরাস্ত হয় মানবতা, সভ্যতা, মনুষ্যত্ব ও বিবেক। সাম্প্রদায়িকতা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে ঐক্য, সংহতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্তরায়। সাম্প্রদায়িকতা সমাজে শান্তি বিনষ্ট করে ধ্বংসের মুকে ঠেলে দেয়। সাম্প্রদায়িকতা তাই মানবজাতির জন্য এক ভয়ানক অভিশাপ।
জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা যেনো নির্বিঘ্নে নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতি পালন করতে পারে এবং সবার মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এবং একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মন্দির উদ্বোধন করা হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) উচ্চশিক্ষা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার পীঠস্থান। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে এখানে এমন একটি পরিবেশ গড়ে উঠেছে, যেখানে সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং সকল কর্মকর্তারা ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে এক অসম্প্রদায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে ক্যাম্পাসে। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠার তিন দশক পেরোলেও কোনো ধর্মীয় দাঙ্গার ইতিহাস নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানেই খুবি তে অসম্প্রদায়িকতার নিদর্শন লক্ষনীয়। খুলনার মধ্যে সব থেকে বড় সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পূজার মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান শেষে সব ধর্মের মানুষের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। সব মিলিয়ে সেখানে উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এছাড়া, মুসলিমদের পবিত্র ঈদের জামাতও কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একসাথে ঈদের জামাত আদায় করেন। ঈদে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে ক্যাম্পাসে সকলে একসাথে আনন্দ করে এবং সৃষ্টি হয় অসাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য উদাহরণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মতে, সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে এই পরিবেশ ভবিষ্যতেও বজায় রাখতে এই অপরুপ সুন্দর নব নির্মিত মন্দির এবং নান্দনিক দৃষ্টিনন্দন মসজিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অভিজিৎ দে
Leave a Reply