সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলজুর নদীর খনন কাজে নানা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নলজুর নদী যেন এখন খালে পরিণত ! এমনটাই দাবি করেছেন নদী পাড়ের মানুষ। বার বার পাউবোর কর্মকর্তা হাসান গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উটলেও তিনি থাকছেন ধরাছোয়ার বাইরে। দীর্ঘ দিন যাবৎ একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। তবে নদী খননের অজুহাতে নামে মাত্র কাজ দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হাসান গাজীর নেতৃত্বে চলছে সরকার কতৃক বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট, এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর। জানা গেছে, শুকনো মৌসুমে নদীর পানি সংরক্ষণ ও কৃষি জমিতে পানি সেচের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে এই খনন কাজ চলমান রয়েছে। কাজের সময় শেষ পর্যায়ে হলেও এখনো কাজের কাজই হয়নি বরং অতি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা পরিষদের সামনে ও জগন্নাথপুর বাজার এলাকায় নদীর কাজ এখনো সমাপ্ত হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকে পাউবোর কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নদীর নীচু প্রকৃতির জায়গা দিয়ে খননের জন্য নকশা তৈরী করে নিজেদের পকেট ভারী করার পায়তারায় লিপ্ত থাকে। কাজ শুরু হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশেনটেক এর যোগসাজশে শুরু হয় নানা কৌশলে লুটপাট। নদীর নীচু জায়গায় নামে মাত্র খনন এবং উচ্চতা ও প্রস্থ দেখিয়ে সঠিক মানের নদী খনন না করে জনস্বার্থে সরকার কতৃক বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাটে ব্যস্ত রয়েছে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের দায়ীত্বে থাকা ঠিকাদার কামরুজ্জামান খান ও সুপার ভাইজার খায়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে নদীর সরকারি মাটি বিক্রি সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। যে কোন সময় বৃষ্টির কারণে অকাল বন্যা সহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু জনসার্থে সরকারি কাজের প্রতি তোয়াক্কা না করে নদী পাড়ের কিছু সুবিধাভোগী মানুষের কাছ থেকে এক্সিবেটর মিশিন দিয়ে ঘন্টা হিসেবে বাড়ির ভিট তৈরী করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
তাছাড়া অকারণে হাওর পাড়ের মানুষ ও বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাড়ী ও দোকান উচ্ছেদের নামে চালিয়ে যাচ্ছে নীরব চাঁদাবাজি। আর এসব অপকর্মে জড়িত স্থানীয় স্বার্থানেষী একটি প্রভাবশালী মহল। তবে তাদের সংখ্যা একেবারে নঘন্য। নকশা অনুযায়ী যেভাবে পরিকল্পিত নদী খনন হবার কথা সেভাবে হচ্ছেনা খনন, যত্রতত্র স্থানে মাটি স্তুপ আকারে রাখার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তির। অন্যদিকে নদী খনন করে মাটিগুলো নিয়ম মাফিক যেভাবে স্লোপ দেয়ার কথা, সেভাবে না করায় সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ধ্বসে বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে বিশাল আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে। নদী খনন কাজে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে গত কয়েক দিন যাবত জনপ্রতিনিধি, এলাকার সচেতন নাগরিক ও স্থানীয় কৃষকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সরব করে তুলেছেন। প্রতিবাদ করেছেন কতৃপক্ষের নানা অনিয়ম দূর্নীতির। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দায়সারা ভাবে কাজ করে নদীতে পানি ছেড়ে দেয়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভর সৃষ্টি হয়েছে। খননের শুরুতেই নদীর পাড়ে মাটি এলোমেলো ভাবে ফেলে রাখায় সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ধ্বসে পূনরায় নদী ভরাটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে নামে মাত্র খনন কাজ সম্পন্ন করে নদীর পানি ছেড়ে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। খনন কাজে এমন অনিয়মের ফলে সরকারের এই মহতি উদ্যোগের সফলতা যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনই জনগণও বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ্য ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাদাউড়া থেকে এরালিয়া বাজার পর্যন্ত নলজুর নদী খনন কাজ শুরু করে। খনন কাজ বাস্তবায়ন করছেন ঢাকাস্থ ন্যাশনটেক কমিউনিকেশন লিমিটেড। এই কাজের জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ৫কোটি ২৫লাখ টাকা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী খনন কাজ করছে না এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) এর লোকজন সঠিক সময়ে তা পরিদর্শন করছেন না। তাদের যেন কোন মাথাব্যাথা নেই। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান সঠিক মানের নদী খননের জন্য চালিয়ে যাচ্ছেন অভিরাম চেষ্টা। তিনি প্রতিদিন নদী খনন কাজ পরিদর্শন করে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক ও স্থানীয় জনসাধারণ গনমাধ্যমকে জানান, শুরু থেকেই খনন কাজে অনিয়ম- দূর্ণীতি করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও কাজ ভাগিয়ে নেয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যারা কাজ করছে তারা প্রথমে বলেছিলো পাড়ের মাটি দূরে সরিয়ে আরো গভীর করা হবে। কিন্ত তা না করে তড়িগড়ি করে খনন করে নদীর পানি ছেড়ে দিয়েছে। কোন কোন স্থানে খনন কাজ করেনি শুধু দু-পাড়ে নাম মাত্র মাটি দিয়েছে । তাছাড়া সরকারি কাজ রেখে টাকার বিনিময়ে কিছু মানুষের ভিটবাড়ী করে দিচ্ছে তারা । টাকা না দেয়ায় অনেকের বাড়ীর উপর মাটি ফেলে ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। অনেকের কাছে কোন প্রকার সরকারী রয়েল্যাটি ছাড়া মাটি বিক্রয় করা হয়েছে এবং পাশ্ববর্তী ফসলী জমিতে মাটি ফেলে ফসল নষ্ট করা হয়েছে। তাদের মনগড়া খনন কাজ উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতিই হচ্ছে ।
জগন্নাথপুর পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল হক শফিক বলেন, নদী খনন করতে গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা হাসান গাজীর সহায়তায় পিংলার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ও শশ্মানঘাটের রাস্তা কেটে মাটি বিক্রয় করছেন ঠিকাদার কামরুজ্জামান খানের লোকজন। তাদের এমন দুর্নীতি মেনে নেয়া যায়না। তার এহেন কর্মকান্ডের ফলে উক্ত রাস্তা ও ফসল রক্ষা বাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ও হুমকির মধ্যে পড়েছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগন সোচ্চার। অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসান গাজী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, খনন কাজে অনিয়ম হওয়ার কথা নয় ,আমার লোক প্রতিদিন কাজের তদারকি করছে। কোন অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply