গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) এক নারী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে এক কথিত সাংবাদিককে গণধোলাই দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা তাকে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করে। কথিত ওই সাংবাদিকের নাম গোলাম রাব্বি। তিনি পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী।
শনিবার (২৮ জুন) বিকাল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাতে ছড়িয়ে পড়ে চাঁদা দাবি ও লেনদেনের বিভিন্ন কল রেকর্ড। অভিযোগ রয়েছে, সাংবাদিক পরিচয়ে রাব্বি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে নিয়ে নিউজ করার ভয় দেখিয়ে অর্ধ লক্ষ টাকা দাবি করে। শনিবার বিকালে ভুক্তভোগী ছাত্রী ৫০ হাজার টাকা অভিযুক্ত রাব্বিকে প্রদান করতে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে সেখানেই গণধোলাই দিয়ে প্রশাসনিক ভবনে আনা হয়।
পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে এলে তাকে হেফাজতে নিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগী এএসভিএম বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া বর্নি বলেন, “রাব্বি আমার কাছে বিভাগের সমস্যা সমাধান ও আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় গোপন রাখার কথা বলে অনৈতিকভাবে ৫০০০০ টাকা দাবি করে। আজকে দুপুরে আমি টাকাটা নিয়ে রাব্বিকে দিতে আসি। আমি টাকা দেওয়ার পূর্বেই হঠাৎ ছাত্ররা এসে হট্টগোল শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তারা রাব্বিকে ধরে গণপিটুনি দেয়।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাব্বি জানায়, “আগে একবার একটা তথ্যের জন্য সে আমাকে ১০০০ টাকা দেয়। কিন্তু আমি ওকে টাকার জন্য ডাকি নি। ”
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাতে ছড়িয়ে পড়ে একাধিক অডিও। সেখানে রাব্বিকে টাকা প্রদান করলে বিভিন্ন বিষয় ধামাচাপা দেয়া হবে বলতে শোনা যায়। এছাড়া ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ভুক্তভোগী জানালে রাব্বিকে ‘ওকে’ বলতে শোনা যায়।
পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাব্বির বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে সরব হয় শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, এই রাব্বি এক সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ ক্যাডার ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা দিবস হলে ত্রাস সৃষ্টি করলেও বর্তমানে ছাত্রদলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজেকে ‘সেইফ জোনে’ নেয়ার চেষ্টা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, স্বাধীনতা দিবস হলে সে সিটে উঠতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে তাকে হল থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন এই রাব্বি। এছাড়া গত ৩০ এপ্রিল গুজব ও অপপ্রচার চালিয়ে গোবিপ্রবি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতিকে হত্যা চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে রাব্বির বিরুদ্ধে। গোবিপ্রবি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কে.এম. ইয়ামিনুল হাসান আলিফ বলেন, গত ৩০ এপ্রিল আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা ফেরার আগে হলে যাই। এ সময় আমি হলে শিক্ষার্থীদের মারতে গেছি,কমিটি খেয়ে দিতে চেয়েছি এমন বিভ্রান্তিকর পোস্ট সে ফেসবুকে প্রকাশ করলে কতিপয় বিপথগামী শিক্ষার্থীরা আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় এবং এখনো আমি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছি।
এ বিষয়ে গোবিপ্রবি প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজিবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাঁদাবাজের অভিযোগে কথিত সাংবাদিককে গণপিটুনির কথা স্বীকার করে বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আছি। বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেব।”
Leave a Reply