নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের বার্ষিক সিজিপিএ ভিক্তিতে ছাত্র পরিষদে মনোনয়নে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা যায়। ১২ জুন, ২০২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজীদ হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়।
নোটিশে সদস্য মনোনয়ন প্রক্রিয়াতে জানানো হয়, প্রতিবছরের YCGPA (Yearly Cumulative Grade Point Average) এর ভিত্তিতে সদস্য মনোনয়ন করা হবে। বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বর্ষ হতে সর্বোচ্চ YCGPA প্রাপ্ত ০১ (এক) জন করে ০৩ (তিন) জন শিক্ষার্থীর নাম নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট ডিন অফিসে প্রেরণ করবেন, যেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মৌখিক সম্মতি থাকা বাঞ্চনীয়।
ছাত্র পরিষদের উপদেষ্টা থাকবেন ০৩ জন, আহবায়ক ০১ জন, সদস্য সচিব ০১ জন এবং সদস্য হবেন ১৬ জন।
উপদেষ্টা পরিষদ ১৮ জুন ২০২৫ এর মধ্যে ছাত্র পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রেজিস্ট্রারের নিকট প্রেরণ করবেন বলে উক্ত নোটিশে জানা যায়।
এ নোটিশের পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা উক্ত নোটিশকে প্রশাসনের অদূরদর্শীতা হিসেবে দেখছেন। তবে উক্ত নোটিশে ছাত্র পরিষদের কাজ কি হবে তা না থাকায় জনমনে একটিই প্রশ্ন, তা হচ্ছে ছাত্র পরিষদ কি ছাত্র সংসদের বিকল্প হবে কিনা।
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ বলেন, টপার বলতে বুঝায় হাই সিজিপিএ শিক্ষার্থীদের। কিন্তু যাদের হাই সিজিপিএ আছে তারা কখনো ওইভাবে লিডার হয়ে উঠতে পারে না।কারণ তাদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেক দূরত্ব থাকে।তারা তাদের নিজস্ব পড়াশোনা নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকে।বাহিরের খোজ নেওয়ার যথেষ্ট সময় তাদের নেই।তারা নিজ গণ্ডির বাহিরে সচারাচর বের হয় না।এমন শিক্ষার্থীদের দ্বারা যদি কোন পরিষদ গঠন করা হয় তাহলে সেটা কখনো ফলপ্রসূ হবে না।
নোবিপ্রবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব বনি আমিন জানান, নোটিশে যেটা স্পষ্ট করেনি তা হলো ছাত্র পরিষদের আসলে কাজটা কি?তারা কি শুধু শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে কাজ করবে? যদি এতটুকুই হয় তাহলে সিজিপিএ ভিত্তি কিছুটা মানা যায়। সিজিপিএ তুলনামূলক ভাবে কম এমন শিক্ষার্থী অনেকেই আছে যারা শিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী তাদের বিষয়েও চিন্তা করা জরুরি।আর যদি তারা শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সমস্যার প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে এটা শুধুই সিজিপিএ এর ভিত্তিতে হবে কল্পনাই করা যায়না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসলে ছাত্র পরিষদকে ছাত্র সংসদের বিকল্প হিসেবে চাচ্ছে কিনা এটা ক্লিয়ার করা জরুরি বলে মনে করছি।
নোবিপ্রবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী হাসিবুল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের মতামতকে উপেক্ষা করে নোবিপ্রবি প্রশাসন একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্র পরিষদ করা শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ। নোবিপ্রবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য এমন একটি সিস্টেম চালু করতে চাচ্ছে যাতে ক্যাম্পাসের প্রতিবাদী কন্ঠস্বরদের দমিয়ে ফেলা যায় এবং তাদের পছন্দের কিছু শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে ৷ পরিশেষে প্রশাসনকে বলতে চাই নোবিপ্রবিতে স্টুডেন্ট কাউন্সিল হবে নাকি ছাত্র সংসদ হবে নাকি অন্য কোন প্রসেসে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে সেটা শিক্ষার্থীরাই ঠিক করবে প্রশাসন নয়।
নোবিপ্রবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি আরিফুর রহমান বলেন, সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র পরিষদ/ছাত্র কাউন্সিল গঠনের জন্য যে নোটিশ দিয়েছে তা সাধারণ শিক্ষার্থিদের মনে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সেখানে প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে YCGPA কে বিশেষ ভাবে প্রাধান্য দিতে দেখা যায়। প্রশাসন এখানে ছাত্র পরিষদ ছাত্র সংসদের বিকল্প হবে কিনা সেটা স্পষ্ট করেনি।এই পরিষদের পূর্নাঙ্গ কাজ কি হবে সেটিও স্পষ্ট করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০০১ এর আইন অনুযায়ী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের কোনো রূপরেখা ছিলোনা। এখন যেটাকে ছাত্র পরিষদ বলা হচ্ছে সেটার সম্পূর্ন রূপরেখা, আইন, কর্মকাণ্ড ও কার্যকারিতা শিক্ষার্থীদের সামনে প্রতমেই উপস্থাপন করা উচিত ছিলো বলে মনে করছি।যদি এই ছাত্র পরিষদ ছাত্র সংসদের বিকল্পই হয় তাহলে আমরা মনে করি এখানে যেই প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্রাইটেরিয়া উল্লেখ্য করা হয়েছে তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের গনতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ। জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে এসে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত জুলাই চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান।
শিক্ষার্থীদের তীব্র ক্ষোভের কথা জানালে নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজুয়ানুক হক বলেন, এটি আমাদের সিদ্ধান্ত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত এটা। এটি মূলত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের সাথে বারগেইন করবে। তবে এটি ছাত্র সংসদের সম্পুর্ন বিকল্প কিছু না।
নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিপরীতে ২০০৮ সালে রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক “স্টুডেন্ট কাউন্সিল/ছাত্র পরিষদ” গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। আমরা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিয়েছি। এই পরিষদের কাজ হবে অনুষদ ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও সমস্যা নিয়ে কথা বলা। মনোনয়নের ভিত্তিতে সদস্য পদ দেয়া হবে। তবে পরবর্তীতে “ছাত্র সংসদ” হলে সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ভিত্তিতে হবে।
Leave a Reply