সকাল ১১টা বেজে ৫ মিনিট। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রওনক দাঁড়িয়ে আছেন পাবনা পৌরসভার অন্তর্গত মুজাহিদ ক্লাবের সামনে, অপেক্ষা করছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের জন্য। বিশ্ববিদালয় থেকে ছেড়ে টার্মিনাল-মেরিল-গাছপাড়া-শহর-অনন্ত-মুজাহিদ ক্লাব মোড় ঘুরে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলাচলকারী এ বাসটি নির্দিষ্ট সময়েই এসে দাঁড়াল। ছুটে গেলেন রওনক, ধাক্কাধাক্কি করে কোনোভাবে নিজেকে দরজা পর্যন্ত ঠেসে ঢোকালেন। কাঁধে ব্যাগসমেত এক হাতে বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতে ঝুলতে তাকে যেতে হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অবধি।
শুধু রওনক নয়, তার মতো অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বাসের দরজায় ঝুলে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজারেরও অধিক। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে দুটি আবাসিক হল। আবাসিক হল পর্যাপ্ত না থাকায় শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় স্থানীয় ব্যক্তি মালিকানাধীন মেস এবং পাবনা শহরের মেস অথবা হোস্টেলে। ফলে শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশ পাবনা শহর থেকে যাতায়াত করে। তাই নির্ভর করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থার উপর। ক্যাম্পাসে আনা-নেওয়ার জন্য নিজস্ব বাসের সংকট থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাসেরও ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এতেও পর্যাপ্ত না হওয়ায় ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী রওনক বলেন, ‘ আমার মেস থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মুজাহিদ ক্লাব মোড় থেকে বাস ধরতে হয়। বাস মুজাহিদ ক্লাবে আসতেই দেখি কানায় কানায় ভর্তি। বাসে সিট পাওয়া তো দুরের কথা প্রায় প্রতিদিনই বাদুড়ঝোলা হয়ে ভার্সিটিতে আসি। আর এই রমজান মাসে ভার্সিটির বাসে উঠলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট পরিবহন সমস্যার দ্রুত সমাধান দাবি করছি। ‘
সরেজমিনে গিয়ে যেখা যায় , এভাবেই অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বাসের দরজায় ঝুলে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে হয়। নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে বাসে উঠতে গেলে সিট পাওয়া যায় কিন্তু বাস ছাড়ার সময় এমন অবস্থা যে অনেক শিক্ষার্থী বাসে পর্যন্ত উঠতে পারে না। ঠেলাঠেলি করে বাসের মধ্যে উঠে অনেক শিক্ষার্থীকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে সাইদ সাইমুন নামের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন- ” আমার দেখা সবচেয়ে বাজে পরিবহন পুল পাবিপ্রবির পরিবহন পুল। এই পরিবহন পুলের অন্যতম কাজ হল কিভাবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি, বিড়ম্বনা বাড়ানো যায়।
প্রথমেই স্টপেজ সিস্টেম এর নামে এক ভোগান্তির সৃস্টি করে রেখেছে তার উপরে বর্তমানে বাসের সংখ্যা কমিয়ে, কম্বাইন্ড বাস সিস্টেম করে ভোগান্তি দ্বিগুণ করেছে। যেখানে রমজান মাস বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কথা সেখানে একের পর এক ভোগান্তি তৈরী করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কিছু বলছেনা বলে একের পর এক অনিয়ম বেড়েই চলেছে এই পরিবহন পুলের। দ্রুত এসব অনিয়মের সমাধানের দাবি জানাই। ”
পরিবহন সংকটের এই দুরবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবহন পুলের দায়িত্বে থাকা ড. রাশেদুল ইসলাম রাহী বলেন, ইউজিসি এর নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ২০% জ্বালানি খরচ কমাতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে খাতে জ্বালানি (পেট্রোল, ডিজেল) দরকার হয় প্রতিবছর ৬০ লক্ষ টাকার কিন্তু আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিলো ৩৫ লক্ষ টাকা যার ভেতর ২০% জ্বালানি খরচ আরো কমাতে বলে ইউজিসি। তাতে আমাদের কাছে জ্বালানি বাবদ ২৮ লক্ষ বরাদ্দ ছিলো। পাশাপাশি তেলে দামও বৃদ্ধিও পেয়েছে । বরাদ্দকৃত টাকা গতবছর ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়ে গেছে। যার ফলে জ্বালানি অভাবে সব বাস গুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাও আমরা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কিছু সংখ্যক বাস কমিয়ে বাকি বাস গুলো চালাচ্ছি এবং আমরা ২ টা বিআরটিসি বাস ভাড়া করে চালাচ্ছি শিক্ষার্থীদের সুবিধা কথা ভেবে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে, দুপুরের শিফটে আরো ২ টি বাস বেশি যুক্ত করা হবে।
জানা যায় শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসের সংখ্যা ১১টি। এর মধ্যে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি ২ টি ভাড়া করা। এর মধ্যে প্রায় এক ধরে একটি বাস নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
আগের সিডিউল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ টা শিফটের ক্লাসের জন্য ৬ টা শিফটে বাস চলাচল করত, প্রতি শিফটে ছেলেদের ৪ টা মেয়েদের ৪ টা করে বাস চলাচল করত। কিন্তু রমজান মাসে নতুন সিডিউল অনুযায়ী একটা শিফটের বাস সম্পন্ন বন্ধ রাখা হয়েছে সকাল দুপুরে ১:২৫ এর শিডিউলে ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য মাত্র ৩ টা বাস রাখা হয়েছে। যার ফলে ভোগান্তি বেড়েছে প্রচুর।
Leave a Reply