স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে পানছড়ি-তবলছড়ি সড়কের সাত কিলোমিটারের রাস্তা। এ সড়ক নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
তারা জানান, পা দিয়ে ঘষা দিলেই উঠে যাচ্ছে পিচ। এ সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। রাস্তায় পিচ–ঢালাইয়ের আগে ঠিকমতো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। খড় ও ময়লার ওপর বিটুমিন দিয়ে রাস্তা পাকা করা হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোপের সৃষ্টি হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে এ সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে আরো বলেন, রাস্তার কাজের জন্য যে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। আমরা এলাকাবাসী ওই সমস্ত মালামাল দিয়ে রাস্তার কাজ করতে নিষেধ করলেও ঠিকাদারের শ্রমিকরা তা শুনছেন না। যা নিয়ে এলাকাবাসী, পথচারি এবং ওই রাস্তা ব্যবহার করে চলাচলকারি বিভিন্ন যানবাহন চালকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ। তবে ঠিকাদার প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রকৌশলীরা বলছেন; কাজ দেখভাল করছি, সব ঠিকঠাক হচ্ছে। সংস্কার কাজে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি, কাজের গুনগত মান এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে।
এলাকাবাসী এলজিইডির কর্মকর্তাদের প্রতি অভিযোগ করে জানান, ঠিকাদারের সঙ্গে তাদের যোগসাজস আছে। এজন্য তারা ঠিকাদারকে কিছু বলছেন না। এমনকি ঝুলানো হয়নি কোনো কার্যতালিকার (ওয়ার্ক অর্ডার) সাইনবোর্ড।
সরেজমিনে, পানছড়ি সদর থেকে থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে এসব অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। পা দিয়ে ঘষা দিলেই উঠে যাচ্ছে পাথর কুচি। সড়কের অধিকাংশ অংশেই দেখা গেছে এমন চিত্র। এমনকি সংষ্কার কাজে ব্যবহৃত মিক্সিংয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রীসহ পরিমাপ মতো ডাস্ট, পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার হচ্ছে না। মিক্সিংয়েও হচ্ছে কারসাজি। মিক্সিংয়ে কাটা পাথরের সংমিশ্রণে নিম্নমানের ভুজুরি পাথর, ডাস্ট এর পরিবর্তে নিম্নমানের মাটি-বালু ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
এসময় স্থানীয়রা প্রশ্ন করেছেন, গ্রামগঞ্জের রাস্তা ঘাটের এমনভাবে যদি কাজ করা হয় তাহলে আমাদের বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব হবে? অসাধু ঠিকাদারদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এসব নির্মাণ কাজ নিম্নমানের হওয়ায় এতে করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে!
বিভিন্ন তথ্য মতে, পানছড়ি-তবলছড়ি প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ সড়কের কাজ পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “ইউথিমং”। তবে প্রতিষ্ঠানটি এই সড়কের কাজ করছেনা। প্রকৃতপক্ষে, থং মারমা নামের এক ব্যক্তি নিজের অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সটি ভাড়া করে এই কাজ বাস্তবায়ন করছেন। নির্মাণ কাজ চলাকালীন ঠিকাদার প্রতিনিধি হিসেবে শাকিল নামের এক ব্যক্তিকে কাজ দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি শাকিলের কাছে রাস্তার উন্নয়ন কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিকাদারের চাকরি করি। তার কথা মত রাস্তার কাজ করে যাচ্ছি। এসব বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবোনা।’
থং মারমা’র সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কল কেটে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার কাজ মানস্মত এবং নিয়ম মতো হচ্ছে বলে আর কোন ভাবেই বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী অরুন কুমার দাস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে সাফাই গাইলেন। বলেন, এ কাজের নিয়মই এটা।
তবে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহজাহান বলেন, এমন ঘটনা তার জানা নেই। এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন। সম্পূর্ণ কাজ ভালভাবে না করা পর্যন্ত কোনো বিল ছাড়া হবে না বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply