পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নানা অনিয়ম এবং অসংঙ্গতি ধরা পড়েছে। সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ অডিট প্রতিষ্ঠান মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) থেকে প্রকাশিত ২০২২-২০২৩ নিরীক্ষা বছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও ২৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্টে পাবিপ্রবির চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এসব অনিয়ম ও অসংঙ্গতি ধরা পড়ে। সিএজির অডিট রিপোর্টে প্রকল্প নিয়ে ১৫টি বিষয়ের ওপর অডিট আপত্তি এসেছে, যেখানে আর্থিক অনিয়ম ও অসংঙ্গতি ১০০ কোটি টাকার উপরে। এ রিপোর্টে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৩০টি বিষয়ের ওপর অডিট আপত্তি এসেছে।
১৫টি বিষয়ে অডিট আপত্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত অনিয়মিত ব্যয় ৫২ কোটি ২৮ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা, ডিডিপি লঙ্ঘন করে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির পরিবর্তে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আর্থিক ক্ষমতা বহির্ভূত অনিয়মিতভাবে আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ১৫ কোটি ৪০ লক্ষ ৩০ হাজার ১ শত ৩৩ টাকার কার্যাদেশ, ঠিকাদারের বিল হতে জামানত কর্তনের নামে কর্তনযোগ্য জামানাতের অতিরিক্ত অর্থ প্রকল্প হিসাব হতে অনিয়মিতভাবে জামানত হিসেবে ১৫ কোটি ৫৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৫ শত ৮৬ টাকা স্থান্তান্তর, ঠিকাদার কর্তৃক নিম্নমানের বই সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির আশংকা ১২ কোটি ১৫ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬ শত ৭ টাকা, ডিপিপিতে নির্ধারিত কাজ বাস্তবায়ন না করে কম কাজ বাস্তবায়ন করায় ৯ কোটি ১৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি, সরকারি অর্থে বাস্তবায়িত প্রকল্পের অর্থ বিধি বহির্ভূতভাবে অন্য ব্যাংক হিসাবে ৭ কোটি ৪১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫ শত ৯৯ টাকা স্থানান্তর, চুক্তিমূল্যের অতিরিক্ত অর্থ ঠিকাদারকে পরিশোধ করায় ৪১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা ক্ষতি, ডিডিপি মোতাবেক প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় মূল চুক্তি মূল্য বৃদ্ধি করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এর সাথে সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর করায় ২৮ লক্ষ ৯২ হাজার ৫ শত টাকার আর্থিক ক্ষতি, কোনরূপ আর্থিক বিধি বিধান অনুসরণ ছাড়াই গাড়ির জ্বালানি সরবরাহকারী ফিলিং স্টেশনকে প্রাপ্যতা বিহীন সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ৩৭ লক্ষ টাকা অগ্রিম প্রদান করা।
এছাড়াও প্রকল্প নিয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বিতভাবে অডিট আপত্তি এসেছে। এগুলো হলো- বাজেট বরাদ্দ ছাড়াই প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে ব্যয় করায় আর্থিক ক্ষতি ৩১ কোটি ৫৩ লক্ষ ২৭ হাজার ২ শত ৭৮ টাকা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত বিল থেকে নির্ধারিত হারের আয়কর কর্তন না করায় সরকারের ২ কোটি ৪২ লক্ষ ৩ শত ৮৪ টাকার রাজস্ব ক্ষতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিল হতে নির্ধারিত হারে ভ্যাট কর্তন না করা করায় সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৯ শত ৭১ টাকা রাজস্ব ক্ষতি, প্রকল্পের জামানত হিসেবে অর্জিত সুদ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করায় সরকারের ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৩৯ হাজার ২ শত ৭৪ টাকা রাজস্ব ক্ষতি, প্রচার ও বিজ্ঞাপন বিল হতে নির্ধারিত হারে সার্ভিস কর্তন না করায় ১ লক্ষ ১০ হাজার ৬ শত ৯৭ টাকা রাজস্ব ক্ষতি, ঠিকাদারের চুক্তি মূল্যের উপর বীমা না করায় বীমা প্রিমিয়াম এবং প্রিমিয়ামের উপর ভ্যাট সহ ৩ কোটি ৫২ লক্ষ ৫১ হাজার ৭ শত ৪৭ টাকার রাজস্ব ক্ষতি।
অডিট রিপোর্ট থেকে দেখা যায় প্রকল্পের ১৫টি অডিট আপত্তির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১০টি আপত্তির জবাব দিয়েছেন। ৫টি অডিট আপত্তি গ্রহণ করলেও সেগুলোর কোন জবাব প্রদান করেননি।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্ণেল (অবঃ) আজিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় আছি, অডিট যা দিয়েছে সব আমার মনে নাই। অডিট আপত্তি যা আসছে সবগুলোর উত্তর আমরা অডিট রিপোর্টে দিয়েছি।
সবগুলো অডিট আপত্তির জবাব দেওয়া হয়নি এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আমি আপনার সাথে মোবাইলে কথা বলবোনা। অফিসে আসি তারপর এসব বিষয়ে কথা বলবো।
মঙ্গলবার উপাচার্যের মন্তব্য জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপ-পরিচালক ফারুক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া শতাব্দীকে উপাচার্যের কাছে কি বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হচ্ছে তার প্রশ্নপত্র পাঠানোর কথা বলেন। প্রশ্নপত্র পাঠানোর পরে বুধবার উপাচার্যের মন্তব্যের বিষয়ে জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপ-পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ তথ্যগুলো আগের ২০২১-২২ এর, এই উপাচার্য তখন আসেন নাই। যেহেতু আগের তথ্য সেহেতু উপাচার্য কীভাবে বলবেন! এ বিষয়ে উপাচার্যের কোন মন্তব্য নাই। আপনি যেভাবে তথ্য চেয়েছেন সেভাবে হবেনা। আপনাকে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইতে হবে। তারপর আমরা স্ব স্ব দপ্তরগুলোতে তথ্যগুলো চাইবো। তারা তথ্যগুলো দিলে তারপর উপাচার্য এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন।
Leave a Reply