ফরিদপুরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
ফরিদপুর বাংলাদেশের দক্ষিণ- মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের একটি জেলা।১৮১৫ সালে বাংলাদেশের ১০ম জেলা হিসেবে ফরিদপুর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফরিদপুর পৌরসভা। ঢাকা বিভাগের উপবিভাগ হিসেবে ৫টি জেলা নিয়ে গঠিত ছিল ফরিদপুর যা পরিচিত ছিল বৃহত্তর ফরিদপুর হিসেবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতিতে ফরিদপুরের নেতৃবৃন্দের রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে ফরিদপুর বাংলাদেশের বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। তবে একটি বৃহত্তর জেলা হিসেবে যে ব্যাপক ভিত্তিক উন্নয়ন দৃশ্যমান হওয়ার কথা ছিল তা কিছুটা অনুপস্থিত বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে।
একটি দেশের উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা। এজন্যই বলা হয় শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ সমগ্র পৃথিবীতেই জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সমগ্র পৃথিবী যখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে তখন আমাদের দেশের প্রয়োজন ব্যাপকভিত্তিক গুনগত শিক্ষার প্রসার ঘটানো। দেশে ৫৪ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ও ৮৬ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭ টি কৃষি, ১৫ টি সাধারণ, ৫ টি ইঞ্জিনিয়ারিং, ৫ টি মেডিক্যাল,১৫ টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ৪ টি বিশেষায়িত ও ৩ টি অফ ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।সরকার দেশকে ডিজিটালাইজড করার জন্য ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
১৯৭১ সালের আগে প্রতিষ্ঠিত ১৯ টি জেলার মধ্যে একমাত্র ফরিদপুর ছাড়া বাকি ১৮টি জেলাতেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোন এক অজানা কারণে শুধুমাত্র ফরিদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো সোনার হরিণ। অথচ নতুনভাবে কোনো কোনো জেলায় ২ টি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে ২৩ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৩৬ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪টি সাধারণ, ৩ টি কৃষি, ৪ টি মেডিকেল, ৭ টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ৪ টি বিশেষায়িত ও ১ টি অফ ক্যাম্পাস (ইসলামিক এরাবিক) বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। আওয়ামীলীগ যখন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে তখন ফরিদপুরবাসী ব্যাপক আশায় ছিল তাদের জেলায় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বার ও মোট চতুর্থ বারের মতো দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু ফরিদপুরবাসীর স্বপ্ন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আজো স্বপ্নই রয়ে গেছে।
ফরিদপুর জেলায় প্রতি বছর প্রচুর শিক্ষার্থী এইচএসসি পাস করে থাকে।এদের ক্ষুদ্র একটি অংশ দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে পড়াশোনা করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ফরিদপুর জেলায় গত ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৬,৫২২ জন এর মধ্যে পাশ করেছেন ৯,২৬৭ জন এবং পাশের হার ৬১.২২%। অনেক শিক্ষার্থীর আর্থিক সমস্যা থাকায় দূরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায় না। আবার অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও আর্থিক সমস্যার কারণে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েন এমনকি অনেকে স্থানীয় কলেজে পড়তে বাধ্য হন। তাই ফরিদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে জেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের হার যেমন বাড়বে তেমনি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এগিয়ে আসার সুযোগ পাবে। যেমন মেডিকেলে ভর্তির সময় ফরিদপুরের অনেক ছেলে-মেয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজকে পছন্দক্রমের উপরের দিকে রাখে।এতে করে নিজ এলাকায় থাকার ফলে পরিবার থেকে বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ পান।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় সফলভাবে পরিচালনার জন্য যে ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তার বেশিরভাগই ফরিদপুরে বিরাজমান যেমন দেশের অন্যান্য স্থানের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের থাকার জন্য আবাসন, চিকিৎসাব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির প্রতুলতা, পণ্যমূল্য সহনশীলতা, সর্বোপরি স্থানীয় নাগরিকদের বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করার ইতিবাচক মানসিকতা। সড়কপথে রাজধানী শহর ঢাকার সাথে যোগাযোগ করার জন্য ১৮ টি জেলা ফরিদপুরকে ব্যাবহার করে থাকে। ফরিদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় হলে এই সকল জেলার শিক্ষার্থীরা যেমন সুবিধা পাবে ঠিক তেমনি পাবে অন্যান্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা।কারন পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ আরো সহজতর হবে। তাই ভৌগোলিক কারনেই এখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন অতীব জরুরী।
সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ফরিদপুরবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করি।
লেখকঃ মোঃ হাফিজুর রহমান,শিক্ষক,মার্কেটিং বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ-৮১০০।
Leave a Reply