প্রতিবছরের ন্যায় এবারো পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাহাড়ে বর্ষায় সবুজ প্রকৃতি সাজতে শুরু হলেও সেই পাহাড়ের বুকে আঘাত শুরু করেছে ইটভাটার মালিকরা। লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে অন্তত ৩০টি ইট ভাটায় মাটির জন্য সাবাড় করা হচ্ছে অসংখ্য সবুজ পাহাড় ও ফসলী জমি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন উন্নয়নের জন্য ইটভাটা প্রয়োজন। তবে ব্যঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভাটার কারনে পাহাড়ের প্রকৃতির সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে এবার গড়ে উঠেছে ৩০টি ইটভাটা। সবগুলো ভাটা স্কুল, জনবসতী গ্রাম, খালেরপাড় এবং সড়কের পাশে তৈরী করা হয়েছে। চলমান বর্ষার শুরু থেকে এই ইটভাটাগুলো এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মৌসুমের জন্য মাটি মজুদ করেছে। এখনো চলছে পাহাড় কাটার কার্যক্রম। আর কয়েকদিন পরেই এই ফাইতং এলাকায় যন্ত্রের গর্জন ও ধুলাবালুতে বর্ষার সবুজ প্রকৃতি হারিয়ে যাবে এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শুধু ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে ৩০টি অবৈধ ইটভাটা থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক। ফাইতং ইউনিয়নের মে অংপাড়ার বাসিন্দা মংপ্রুচিং মারমা ও অতই মারমা বলেছেন, শুধু এ বছর নয়, কয়েক বছর ধরে কাটতে কাটতে পাড়ার পাহাড়টি এখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে। তিনি আরো জানান, যেভাবে দিন-রাত অবিরাম কাটা হচ্ছে, তাতে এ বছর আর এ পাহাড়ের অস্তিত্ব থাকবে না। পাহাড়টি পাড়াবাসীকে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করত। ইটভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী। পাহাড় কাটতে বাধা দিলে তাঁরা মামলা-হামলার হুমকি দেন। সরেজমিন গেলে আরো দেখা যায়, ইউনিয়নের রাইম্যাখোলা শিবাতলীপাড়া ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় এবিসি ব্রীকফিল্ডের মালিক বেলাল উদ্দিন স্কেভটর দিয়ে কাটতে শুরু করেছে সবুজে ঘেরা পাহাড়। বনবিভাগের নেই কোন তদারকি। ইটভাটা মালিক ও পাহাড় খেকোদের কাছে বনবিভাগ যেন এক নীরব দর্শক। পাহাড় কাটার বিষয়ে সাংবাদিকরা বেলাল উদ্দিনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু তার ব্রীকফিল্ডের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাইকে ম্যানেজ করেই তারা এ পাহাড় কাটতেছে। এদিকে বেলাল উদ্দিন রাত দিন সমানভাবে পাহাড় কেটে গেলেও নীরব পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও। শিবাতলীপাড়া এলাকার ইউসুফের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর বর্ষা মৌসুমেও পাহাড় কাটা হয়েছে। এরপর বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে পাহাড় কাটা। ইট পুড়ানো মৌসুম এলে পুরো ফাইতং ইউনিয়নের মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়ে। অবৈধ ইটভাটাগুলোতে পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন তৎপর হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। এবিষয়ে কথা বলতে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক মো: ফখর উদ্দিন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে পরিদর্শক মুহাম্মদ আশফাকুর রহমানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং অফিস প্রধানের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
Leave a Reply