গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে বিভাগীয় “প্ল্যানিং কমিটির” মিটিং চলাকালে বিভাগের এক প্রভাষকের ফোনে কথা রেকর্ড করাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। অভিযোগ -পাল্টা অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার গ্রুপ ও পেইজে “টক অব দ্যা ইউনিভার্সিটি ” হয়েছে বিষয়টি।
জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক টিএন সোনিয়া আজাদ একই বিভাগের সভাপতি বিতান খানমের বিরুদ্ধে তার উপর শারীরিক নিগৃহ ও হত্যার হুমকির অভিযোগ আনেন।তবে এ ঘটনার সমাধান করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিবাদমান দু’পক্ষকেই উপস্থিত হওয়ার জন্য বললেও সেখানে উপস্থিত না হয়ে রেকর্ডটি অন্যদের কাছে দিয়ে দেন টিএন সোনিয়া আজাদ।এই রেকর্ড বাইরে ছড়িয়ে পরাই ও সংবাদ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের সুনাম নষ্ট হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুর রউফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুর রউফ বলেন ” এটা তো শিক্ষকদের ইন্টার্নাল বিষয়। এটা বাইরে প্রকাশ হলো কিভাবে? এভাবে তো শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ের সুনাম নষ্ট হয়ে যাবে। ”
এ ঘটনায় মানহানি হয়েছে বলে দাবি করে বিতান খানম বলেন ” আমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রের স্বীকার। প্লানিং কমিটির সভায় ঐ দিন উপস্থিত সদস্য সংখ্যা ছিল ০৩ (তিন) জন। আমি বিতান খানম, জনাব টি.এন. সোনিয়া আজাদ, প্রভাষক, লোকপ্রশাসন বিভাগ ও জনাব মোঃ নাসির উদ্দিন, প্রভাষক, লোকপ্রশাসন বিভাগ। সেখানে সকল সদস্যকে আপগ্রেডেশনের সকল তথ্য উপাত্ত পর্যবেক্ষন করে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। আমাদের সাথে জনাব টি.এন সোনিয়া আজাদ সহমত পোষন করেন। জনাব ইমা সুলতানা চারু এর অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা গণনা ঠিক আছে বলে মত দিলেও তিনি স্বাক্ষর এর সময় নোট অব ডিসেন্ট সহ স্বাক্ষর করেন। তখন আমি ও জনাব মোঃ নাসির উদ্দিন, টি.এন, সোনিয়া আজাদ এর কাছে জানতে চাই কেন সহমত পোষন করার পর নোট অব ডিসেন্ট সহ স্বাক্ষর করলেন। জনাব টি.এন. সোনিয়া আজাদ এর যদি আপত্তি থাকত তবে তা মিটিং এ উপস্থাপন করলে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তখন তিনি একপর্যায়ে মিটিং ছেড়ে চলে যেতে চাইলে আমি জনাব টি.এন. সোনিয়া আজাদ কে মিটিং শেষ করে যেতে বলি। কারন এর আগে অনেকবার মিটিং শেষ না করে তিনি চলে গেছেন। কিন্তু তিনি আমাকে বলেন যদি মিটিং শেষ করে না যাই তো আপনি আমাকে মারবেন নাকি? আমি বলি কেন আপনাকে মারবো? আমি মনে করি প্লানিং কমিটির সভার কার্যক্রম শেষ করা জনাব টি.এন. সোনিয়া আজাদ এর দায়িত্ব ছিল।”
সেখানে শারীরিক ভাবে নির্যাতনের কোনো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি জানিয়ে তিনি আরো বলেন ” আমি আমার প্রজেক্টের রিপোর্ট পিন-আপ করার জন্য স্ট্রাপলার হাতে নিলে সবলে হাতে নিয়েছেন কি আমাকে মারার জন্য? তখন আমি বলি আমি যাই হাতে নিই তাতে-ই আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি আপনাকে মারবো? আমি এটা টেবিল ও রাখতে পারি, এটা দিয়ে পিন আপ ও করতে পারি বা এটা ফেলে দিতেও পারি, এই বলে আমি পাশে ফেলে দেই।
তখন সোনিয়া ম্যাডাম চিৎকার করে বলেন যে বিতান ম্যাডাম আমাকে মারছেন।
এ কথা বলার কারন সে ঐ সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রেকর্ড করছিলেন।
এছাড়া টিএন সোনিয়া আজাদ শিক্ষক সমিতির কাছে মিথ্যা অভিযোগ করার পর থেকে বিতান খানম তার সাথে কথাই বলেননা জানিয়ে বলেন ” আমি একাডেমিক উদ্দেশ্য ছাড়া তার সাথে কথাই বলি না, তাহলে আমি তাকে মানসিক নির্যাতন কিভাবে করলাম?”
এদিকে এ ঘটনার সময় উপস্থিত ও প্রত্যক্ষদর্শী বিভাগের আরেক শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন “সোনিয়া আজাদ ম্যাডামকে পেপার ওয়েট ও স্ট্রাপলার দিয়ে মারার ঘটনা উল্লেখ করা হলেও আমাদের বিভাগে কোন পেপার ওয়েট নেই।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের আরেক শিক্ষক বলেন “সোনিয়া আজাদের বিরুদ্ধে এর আগেও গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এর সময় রেকর্ড করার ঘটনা ঘটেছে। একটা বিভাগের জন্য যা খুবই ভয়ঙ্কর। তাছাড়া যেটুকু রেকর্ড করে শোনানো হয়েছে, তার আগের রেকর্ড শুনলে হয়তো বোঝা যেতো ঘটনাটা অন্যরকম ছিলো। ”
বিভাগের একাধিক শিক্ষকের দাবি টিএন সোনিয়া আজাদ ইচ্ছাকৃতভাবে প্ল্যানিং মিটিং চলাকালীনে বিতান খানমকে উত্তেজিত করার চেষ্টা চালিয়ে পরবর্তীতে কিছু অংশ রেকর্ড করে ব্যক্তিগত কোন সমস্যার জন্য এভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করেছেন।
বিষয়টি সমাধান হওয়ার উপায় থাকলেও সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডাকলেও তাতে টিএন সোনিয়া আজাদ কোন সাড়া না দেয়ায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঘটনা বলেই দাবি বিভাগের একাধিক শিক্ষকের।
এ বিষয়ে প্রভাষক সোনিয়া আজাদের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
Leave a Reply