বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) পর্যটন এবং আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষা সফর-২০২২ সম্পন্ন হয়েছে। বিভাগটির ৩ জন শিক্ষক ও ৬৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ৫ রাত ৪ দিনের সফরে ভ্রমণের জায়গা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান এর বেশ কিছু রোমাঞ্চকর জায়গা। তবে সব ছাপিয়ে গিয়েছে ৬৯ জন মানুষের কেওক্রাডং জয়ের গল্প।
গত ২৬ জুন এই সফরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা, প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া ইত্যাদি ছিল এই সফরের উদ্দেশ্য।
৬৯ জন মানুষ নিয়ে কেওক্রাডং এর চূড়ায় পৌছানো ছিল খুবই রোমাঞ্চকর। অনেকেরই এটা প্রথম ট্রেকিং ছিল পাহাড়ে। শিক্ষকদের গাইড শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টা, সহযোগিতা সব মিলিয়ে কেওক্রাডং পর্বতের চূড়ায় পৌঁছে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহিন বলেন, কেওক্রাডং পর্বতের চূড়ায় উঠে যেন আদমাদের ক্লান্তি, কষ্ট, সকল অভিযোগ একেবারেই মুছে গেল। চারিদিকে মেঘের ছোটাছুটি। মেঘ যেন চাচ্ছিলো আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে আমাদের বশ করতে।
এ ব্যাপারে ট্যুরিজম বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক বাপন চদ্র কুরী বলেন, “আমাদের সফরের মূল বিষয় ছিল পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা, প্রতিকূল পরিবেশ নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং এডভেঞ্চার ট্যুরিজম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিখানো। এটা সত্যিই আমাদের জন্য একটি বড় সাফল্য। এত সুন্দর নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা, মেঘের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া, এক সময়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করা, সব মিলিয়ে অসাধারণ।”
কেওক্রাডং জয় ছাড়াও এই ট্যুরের অংশ হিসেবে রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, শুভলং ঝর্ণা, ঝুলন্ত সেতু, বান্দরবানের নীলাচল, রুমা, মুনলাই পাড়া, দার্জিলিং পাড়া ঘুরে দেখা হয়। তবে এভাবে এত মানুষ নিয়ে, এত ধরনের মানুষ নিয়ে কেওক্রাডং উঠতে পারা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে মনে করেন বিভাগটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, একটা মানুষ ও বাদ যায়নি কেওক্রাডং জয় করতে। যা আসলেই একটা বড় সাফল্য আমাদের জন্য।
এ বিষয়ে ট্যুরিজম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিয়া আফরিন অনন্যা বলেন, আমাদের সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কেওক্রাডং জয় করা। আসলে ৩১৭২ ফুট উচ্চতার এ পাহাড় জয়ের অভিজ্ঞতার কথা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সত্যি বলতে মনে একটা সংশয় কাজ করছিল যে এই ৬৯ জন কি আসলেই পারবে এই পর্বত শৃঙ্গ জয় করতে! কিন্তু শিক্ষার্থীদের উৎসাহ উদ্দীপনার কাছে এই সংশয় হার মেনে গিয়েছে। তারা যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার। মেঘে ঢাকা এ পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে মনে হয়েছে আমাদের এ ট্রেকিং স্বার্থক। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এত ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে কেওক্রাডং জয় এই প্রথম। আমরা আসলেই আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গর্বিত।
শিক্ষাসফর শুধু আনন্দ নয়, পাহাড়ি জনবসতির আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, ধর্ম, জীবন-যাপনের ধরন, উৎসব সম্পর্কে অবগত হওয়ার বড় সুযোগ দেয়। তাদের জীবনমান উন্নয়নের পথের সংকীর্ণতা, শিক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কে একটি বাস্তব ধারণা দেয়।
এ বিষয়ে ট্যুরিজম বিভাগের প্রভাষক সিনথিয়া ইসলাম বলেন, এই শিক্ষাসফর আমাদের বিভাগের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯ জনের এতো বড় দল নিয়ে কেওক্রাডং বিজয় এই প্রথম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল রাঙামাটি ও বান্দরবান এর পথে। আর সব থেকে বড় এবং শেষ গন্তব্য ছিল আমাদের কেওক্রাডং ট্রেকিং। পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি নিয়ে জানা এবং বাংলাদেশের ট্যুরিজম সম্পদ এর উন্নতির পথে সম্ভাবনা, বাধা ও প্রতিকূলতা গুলো বের করে আনাই ছিল তাদের এতো বড় সফরের উদ্দেশ্য।
Leave a Reply