গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) এর এক শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছে। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।ছাত্রলীগকে দোষী করে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে এই ঘটনা হতে পারে বলে মত ছাত্রলীগ নেতাদের।
বশেমুরবিপ্রবির কৃষি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলিফ লাইলার ফেইসবুক একাউন্টে হাসান আল মামুন নামক আইডি থেকে ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়।এসময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের পাশাপাশি প্রকাশযোগ্য নয় এমন ভাষায় কিভাবে ধর্ষণ করা হবে তার বর্ণনা দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। হুমকি দাতা ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদেরও হুমকি দেয়।
আলিফ লাইলা হুমকির এসব মেসেজ তার নিজস্ব ফেইসবুক একাউন্টে পোস্ট করলে মুহূর্তেই তা নিয়ে সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এই বিষয়ে হুমকির শিকার বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থী আলিফ লাইলা বাংলাদেশ সারাবেলাকে বলেন “আমি আজ পর্যন্ত ধর্ষণ বিরোধী যত গুলো পোস্ট দিয়েছি, তাতে কোন রাজনৈতিক দলকে অভিযুক্ত করি নাই।আমি ও আমার পরিবার কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নই। তবুও কেন আমাকে হুমকি দেয়া হলো? আমার মা বোনকে গ্যাং রেপের কথা বলা হলো? “
হুমকি দাতা ছাত্রলীগ, মাগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের নাম উল্লেখ করে মেসেজ দিয়েছে জানিয়ে আলিফ লাইলা বলেন “জাহাঙ্গীর ভাইকে আমি চিনিও না।তার সাথে আমার কখনও কথা হয়নি।তাকে শুধু ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে চিনি।আমাকে হুমকি দেয়ার সময় তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে জাহাঙ্গীর ভাই আছে,দেখিস কি হয়! আর মুক্তা ভাই মাগুরা ছাত্রলীগের সেক্রোরি, এর বেশি আর কিছু জানি না আমি তার সম্পর্কে। “
তবে জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন “কেউ হুমকির সময় তার নেতার নাম কখনোই বলবে না বলেই আমার ধারণা। “
ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ সারাবেলাকে বলেন “এই ঘটনাটা যেই ঘটিয়েছে, সে খুব খারাপ করেছে।যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে, তাতে আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবেই লজ্জিত।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাকে চেনে,জানে।আমি এই ঘটনায় বিব্রত ও হতাশ।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে সঠিক বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রলীগ নেতা আরও বলেন “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে আমার দাবি থাকবে প্রশাসন যেন অবশ্যই এর পেছনের ব্যাক্তিদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করেন।”
ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করে এই ঘটনা সাজানো হয়ে থাকতে পারে দাবি করে ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন “যেভাবে গালি ও ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে কেউ এধরনের মেসেজ করে থাকতে পারে।এধরনের ঘটনা অতীতেও আমরা দেখেছি বিএনপি -জামায়াতের কর্মীরা সোস্যাল মিডিয়ায় ছাত্রলীগ সেজে বিতর্কিত কথা বলে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে। যা পরবর্তীতে প্রমাণ হয়েছে। তাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে এর বিচার করুক।প্রয়োজনে ছাত্রলীগ সাহায্য করবে।”
তবে ছাত্রলীগ নেতার কথার সাথে দ্বিমত জানিয়ে হুমকির শিকার শিক্ষার্থী আলিফ লাইলা বলেন “অন্য দল নই বরং ছাত্রলীগই আমাকে হুমকি দিয়েছে। ”
হুমকি দেয়া আইডিটি ফেইক,তাহলে কিভাবে ছাত্রলীগেরই কেউ হুমকি দিয়েছে জানতে চাইলে আলিফ লাইলা বলেন “বিএনপি -জামায়াতের কেউ আমাকে হুমকি দিবে না।এটা ছাত্রলীগেরই কারো কাজ।নইলে তার পক্ষে ছাত্রলীগের নেতাদের চেনা সম্ভব হতো না।”
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী রোহান বলেন “প্রথমত আমি বশেমুরবিপ্রবির একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এর শাস্তি দাবী করছি। একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে আমি মনে করি এরকম আগাছা দলের বিভিন্ন ইউনিটে বিরাজমান। আমরা যদি এখনই এদের চিহ্নিত করে ছাটাই না করি তবে সামনে আরও অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়তে হবে। আমাদের ভেতরে আত্মসমালোচনার প্রবণতা থাকা উচিৎ।দলের কোন কর্মী যদি অপরাধ করে তবে তার কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা দলীয়ভাবেও করা উচিৎ।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মুগ্ধ বলেন “আমাদের নৈতিকতা ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেই প্রশ্ন নতুন করে তুলছি না। বন্ধু হিসেবে নয়, এখন মানুষ হিসেবে এই ঘটনার শেষ দেখতে চাই। দেশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম পর্যন্ত অন্তত আমাদের পৌঁছানো দরকার। আর বিষয়টি যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে হয়, সেটা উত্তম হবে বলে মনে করছি।”
এই ঘটনায় ধর্ষণের হুমকির শিকার আলিফ লাইলার বান্ধবী সানজানা রহমান জাহাঙ্গীর ভাইকে বিতর্কিত করতে এই ঘটনা ঘটানো হতে পারে জানিয়ে বলেন “আমার কথা হচ্ছে জাহাঙ্গীর ভাইয়ের নাম কেনো বলবে? আলিফের সাথে ওনার কোনো যোগাযোগ নেই। ওনার কোনো কর্মী নিশ্চয়ই এই কাজ করে ওনার নাম বলবে না।”
Leave a Reply