বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিবাহবহির্ভূতভাবে নিজ বিভাগের ছাত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও যৌন হয়রানির অভিযোগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমানকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজিদ হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে সোমবার (২৬ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান এর বিরুদ্ধে একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একজন নারী শিক্ষার্থী কর্তৃক আনীত অভিযোগ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা,২০০৮ এর বিধি ৩(৩.১) (ঝ) এবং (ঠ) এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২(খ) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন,২০০১ এর ধারা ৪৭(৮) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নোবিপ্রবি’র যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটি আনীত অভিযোগের তদন্ত শেষে রিপোর্ট গত ১৭ মে অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের ৬৫তম সভায় উত্থাপন করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কমিটির সুপারিশ এবং “উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী হতে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হলো।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে একই সালের ৩০ অক্টোবর অভিযুক্ত শিক্ষককে সব ধরনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০২৫ সালের, ৬ ফেব্রুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত এবং ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁকে শোকজ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত শেষে এখন স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো।
তবে শিক্ষকের শাস্তি হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। অনেক শিক্ষার্থী দাবি করছেন, ছাত্রীও পূর্ণবয়স্ক এবং বারবার সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত ছিল। তাই শুধুমাত্র শিক্ষক নয়, ছাত্রীর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
এ ব্যাপারে নোবিপ্রবির এসিসিই বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মেহেদী বলেন, ” যেখানে রাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই শাস্তি পেয়েছে সেখানে নোবিপ্রবিতে শুধু শিক্ষককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দোষ তো উভয়েই করেছে, তাহলে শাস্তি কেন একজনকে পেতে হলো? তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের প্রতি দূর্বল আপুদের প্রোটেকশন দিচ্ছে? বৈষম্য না করে অতিসত্বর দুনিয়ার সব সুখ একসাথে পেতে চাওয়া আপুটাকে ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে”।
উক্ত ছাত্রীকে শাস্তির আওতায় আনা হবে কিনা জানতে চাইলে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, “আমরা এ ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের উক্ত রিজেন্ট বোর্ডে তাকে তিরস্কার করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যদি এরকম কোন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে পাওয়া যায় তাহলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারী সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে”।
Leave a Reply