আদালতের মাধ্যমে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে আজ বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দীর্ঘ ৩০ বছর পর ক্রয়কৃত জমি বুঝে পেলেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চর দামুকদিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেন। ইতোপূর্বে একাধিকবার মামলার রায় পেলেও দখলদারদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে তিনি দখলে যেতে পারেন নি বলে জানান। অবশেষে আজ বিকেল তিনটায় ভেড়ামারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সোহেল মারুফের উপস্থিতিতে বিজ্ঞ আদালতের পক্ষে জেলা জজ আদালতের নাজির মোঃ আলাউদ্দিন ও এডভোকেট কমিশনার মতিয়ার রহমান মিলন পুলিশের মাধ্যমে দখলদার আনোয়ার হোসেন বাবলু ওরফে বাবলু কমরেড এর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
পরে আদালতের ডিক্রি প্রাপ্ত আমজাদ হোসেনের ছেলে মোঃ হাবিবুল কালামের কাছে জমি বুঝিয়ে দেন এবং লাল পতাকা উড়িয়ে দেন।
হাবিবুল কালাম ও আদালতের কাগজপত্রের সূত্রে জানা যায়, চর দামুকদিয়া গ্রামের ডাক্তার আব্দুস সোবহান ৩৩ শতাংশ জমি কিনে তাঁর নাবালিকা কনিষ্ঠা কন্যা মোসাম্মৎ সেলিনা সুলতানার নামে রেজিস্ট্রি করে দেন এবং সেখানে বাড়ি করেন। পরবর্তীতে সেলিনা সুলতানা সাবালিকা হওয়ার পর দুইবারে ইসমাইল হোসেন দারোগার পুত্র আনোয়ার হোসেন বাবলু ও তাঁর ভাইদের কাছে কাছে ১৩ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ জমি ১৯৮৯ সালে সেলিনা সুলতানা আপন ছোট ভাই আমজাদ হোসেনের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে টাকা নিয়ে বায়নানামা করে দেন। কিন্তু , সেলিনা সুলতানা অসৎ উদ্দেশ্যে জমিটি আমজাদ হোসেনকে রেজিস্ট্রি করে দিতে টালবাহানা শুরু করেন। বাধ্য হয়ে আমজাদ হোসেন বোন সেলিনার বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য ভেড়ামারা সহকারি জজ আদালতে মামলা করেন। মামলা চলমান অবস্থায় সেলিনা সুলতানা উক্ত জমি আনোয়ার হোসেন ও তাঁর ভাইদের কাছে পুনরায় বিক্রি করে দেন। ফলে ওই মামলায় বিবাদী হিসেবে আনোয়ার হোসেন ও তাঁর ভাইদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মামলায় নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত আমজাদ হোসেনের পক্ষে রায় দেওয়া হয় বলে হাবিবুল কালাম জানান। এর ফলে ২০০৮ সালে দেওয়ানী জারি ৩/২০০৮ মোকাদ্দমার মাধ্যমে আমজাদ হোসেন আদালত কর্তৃক রেজিস্ট্রি প্রাপ্ত হন। কিন্তু পরাজিত পক্ষগণ জমিটি জবরদখল করে রাখেন এবং নতুন বাড়ি তৈরি করেন । যার ফলে ডিক্রিধারী পক্ষ এডভোকেট কমিশনের মাধ্যমে দখলের আবেদন করেন আদালতে। কিন্তু বিবাদীপক্ষ দখল না ছাড়ায় বাদীপক্ষ পুলিশ স্কটের মাধ্যমে দখলের আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত তা মঞ্জুর করেন। এই আদেশের বিপক্ষে পরাজিত পক্ষগণ হাইকোর্টের সিভিল ডিভিশন ২/২০০৯ মামলা রুজু করেন। উক্ত মামলায় হোসেনের পক্ষে রায় দেয়া হয়। এই আদালতে বিরুদ্ধে পরাজিত পক্ষগণ ২০১৭ সালে ২২৩৩ নং হাইকোর্টের সিভিল ডিভিশনে মামলা করেন। সেখানে মামলাটি হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যায়। এছাড়াও আনোয়ার হোসেন দিং ১৬৮/২০০৮, ১৫১/২০০৮, ১৮৮/২০০৮ ও মিস কেস ২/২০০৯ ইত্যাদি মামলা করেন এবং হেরে যান।
সর্বশেষ আনোয়ার হোসেন দিং ২০২০ সালে ১৮/২০২০ নং রায় দখল ঠকানোর উদ্দেশ্যে রায় ভুয়া বলে দেওয়ানী আদালতে মামলা করেন বলে হাবিবুল কালাম অভিযোগ করেন। এখানেও আনোয়ার হোসেন দিং পরাজিত হন। এতে আদালত বিরক্ত হয়ে স্থাপনা ভেঙে অপসারণ পূর্বক রায় প্রাপ্ত পক্ষকে উক্ত জমি দখল বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অবশেষে আজ দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল মারুফ, জেলা জজ আদালতে নাজির আলাউদ্দিন, এডভোকেট কমিশনার মতিয়ার রহমান মিলন, আমজাদ হোসেনের পক্ষের হাইকোর্টের এডভোকেট ইমন , ৫ পাঁচজন জারিকারিসহ পুলিশের তত্ত্বাবধানে অর্থ পাকা বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে আমজাদ হোসেনের ছেলেদের কাছে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে দীর্ঘ ত্রিশ বছরের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের অবসান ঘটে।
উক্ত ঘটনায় আমজাদ হোসেনের ছেলে হাবিবুল কালাম আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আদালতের সমস্ত কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
উচ্ছেদকৃত বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন বাবলু অভিযোগ করেন, তাঁদেরকে কোন ধরনের নোটিশ বা পূর্ব অবহিত না করেই আজকে বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল মারুফ এবং জজ আদালতের নাজির আলাউদ্দিন বলেন, বিজ্ঞ আদালত যখন রায় দিয়েছে তখনই অবৈধ দখলদারদের সরে যাওয়া উচিত ছিল। আজ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলো।
Leave a Reply