আজ আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস । সরকারি-বেসরকারিভাবে জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবসটি ভেড়ামারাতেও আনুষ্ঠানিক ভাবে পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন, ভেড়ামারা থানা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহন করেন । এবারের প্রাতিপাদ্য বিষয় “আপনার অধিকার আপনার দায়িত্ব” দূর্নীতি কে না বলুন। দিবসটি উপলক্ষে মানববন্ধন, বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভাসহ নানাবিধ কর্মসূচি পালিত হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান মিঠু বলেন,
আপনার অধিকার আপনার দায়িত্ব” দূর্নীতি কে না বলুন এই প্রতিপাদ্য বিষয় কে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদযাপন হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীনেশ সরকার বলেন, দুর্নীতি বৈশ্বিক সমস্যা বলেই বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন হচ্ছে। এদেশে দিবসটি সরকারিভাবে পালন হতো না। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে কমিশন সরকারিভাবে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। সরকার কমিশনের প্রস্তাবটি আমলে নিয়ে ২০১৭ সাল থেকেই এ দিবসটি সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে। দিবসটি সরকারিভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান আরও সুস্পষ্ট ও সুদৃঢ় হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভেড়ামারা দৌলতপুর সার্কেল ইয়াছির আরাফাত বলেন, আপনার অধিকার আপনার দায়িত্ব” দূর্নীতি কে না বলুন এই প্রতিপাদ্য বিষয় কে সামনে রেখে আমরা দূর্নীতির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হই।
ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান বলেন, আমরা দূর্নীতির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ। এসব কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে হবে, প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, সকল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি এবং তরুণ প্রজন্ম কে সংপৃক্ত করতে হবে।
ভেড়ামারা অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি লায়ন ডাঃ কামরুল ইসলাম মনা বলেন, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজ। প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারিভাবে জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। আপনার অধিকার আপনার দায়িত্ব” দূর্নীতি কে না বলুন এই প্রতিপাদ্য বিষয় কে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদযাপন হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস। দূর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং সোচ্চার হতে হবে।
জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। দুদক ২০০৭ সালে দিবসটি পালন শুরু করে। দিবসটি উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে দুদকের নতুন নেতৃত্ব নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবি জানানো হয়েছে।
দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার দুদক চেয়ারম্যান সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেন, দুর্নীতির মাত্রা কিছুটা হলেও কমেছে। তবে জন-আকাক্সক্ষা অনুসারে হয়তো কমেনি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কমিশনের মামলার সাজার হার ছিল ৬৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে এটা ছিল ৬৮ শতাংশ। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি তাতে সাজার হার প্রায় ৭৭ শতাংশ। দুদকের মামলায় একসময় সাজার হার ২০ শতাংশে নেমেছিল। আমাদের সবার সমন্বিত উদ্যোগেই মামলায় সাজার হার ক্রমাগত বাড়ছে। কমিশন চায় শতভাগ মামলায় আসামিদের সাজা হোক। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ডে দুর্নীতি কিছুটা হলেও কমেছে। করোনাকালে ত্রাণ ও চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে যেসব দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে দুদক। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুদকের প্রতি প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষের আস্থা রয়েছে। যদি দুর্নীতি মাত্রাগতভাবে কিছুটা না কমে, তাহলে বিশালসংখ্যক মানুষের দুদকের প্রতি আস্থার কারণ কী? আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি অনুসন্ধানই একই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। কাকে কোথায়, কীভাবে, কখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে-এ বিষয়গুলো অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন।
আন্তর্জাতিক দূর্নীতি বিরোধী দিবসে এক বিবৃতিতে টিআইবি জানায়, সুশাসিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে দেশে আইনের শাসন ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তাই সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন, বিচার প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি, গণমাধ্যম ও দেশবাসীর স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যে যেসব অভাবিত ঘটনা সামনে এসেছে, তাতে দুর্নীতি যে দেশে সর্বব্যাপী একটা রূপ নিয়েছে, এটাই এখন অপ্রিয় সত্য।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যাপক দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আর কী করণীয় আছে, সেটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা থাকলেও এখনকার বাস্তবতায় তা কী অর্থ বহন করে, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। এ ঘোষণার বাস্তবায়ন আটকে যাচ্ছে শুধু চুনোপুঁটিদের টানাটানিতে।
রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক অন্য যে কোনোভাবে ক্ষমতাবানরা বিচারহীনতা উপভোগ করছে-এমন অভিযোগ করে ড. জামান বলেন, দুদক এক্ষেত্রে কার্যত ক্ষমতার বি-টিমের ভূমিকা পালন করছে। দুর্নীতি দমন ও এর কার্যকর প্রতিরোধে দুদককে কাগুজে বাঘের পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
Leave a Reply