কক্সবাজারের চকরিয়ার চিরিংগা হাইওয়ে থানার ওসি মাহবুবুল হক ভুঁইয়ার নেতৃত্বে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চিরিংগা হাইওয়ে থানা পুলিশের সদস্যরা। রাতের বেলা পণ্যবাহী ট্রাক আটক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) ও অটোরিকশা আটক করে মামলা না দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া রাতের বেলায় চকরিয়ায় প্রবেশমুখ আজিজনগর থেকে শুরু করে ঝণঝনিয়া ব্রীজ পর্যন্ত একাধিক পয়েন্টে বিভিন্ন যানবাহন আটক করে চাঁদা আদায় করছেন তারা। চাঁদা দিতে অপারগ হলে গাড়ি আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় হাইওয়ে থানায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, গাড়ি আটক হলেও চকরিয়াস্থ বিভিন্ন পরিবহন দালালদের মধ্যস্ততায় খুব কৌশলে টাকার বিনিময়ে রাতের বেলায় রফাদফা করে আটককৃত গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে, চিরিংগা হাইওয়ে থানার ওসি মাহবুবুল হক ভুঁইয়া’র যোগদানের পর থেকেই হয়রানি আর চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চিরিংগা হাইওয়ে থানা পুলিশের সদস্যরা।
আকবর আহমেদ নামের এক ব্যাবসায়ী বলেন, চকরিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে হঠাৎ করেই পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে হাইওয়ে পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই তারা গাড়ি থামিয়ে অবান্তর প্রশ্ন করেন। আবার হাইওয়ে পুলিশের দাবিকৃত টাকা দিয়ে দিলে কোনো কাগজপত্র না থাকলেও গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়।এছাড়া রাতের বেলা ট্রাক থামিয়ে চলে বেপরোয়া চাঁদাবাজি।
ট্রাক চালক এমরান বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাই। কিন্তু চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের মতো চালকদের এতোবেশি হয়রানি খুব কম জায়গাই করা হয়। চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের এ বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও হয়রানিতে অতিষ্ঠ আমার মতো আরও হাজারো ট্রাক ড্রাইভার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওসি মাহাবুবুল হক ভুঁইয়ার নেতৃত্বে দিন ছাড়াও রাতের বেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চিরিংগা হাইওয়ে থানা পুলিশের সদস্যরা। মহাসড়কে চলাচলের জন্য তাদের দেওয়া কুপন নিয়ে মাসোহারা দিয়েই চলতে হয়। আর যাদের কাছে এই গোপন কুপন থাকে না তাদেরকে আটক করে মামলার নামে দশ/পনেরো হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পরবর্তী মাস থেকে কুপন নিয়ে চলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। আর এসব গোপন কুপন নিয়েই মহাসড়কে প্রকাশ্যেই চলছে অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) ও অটোরিকশা। হাইওয়ে সড়কে এসব অবৈধ যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে মহাসড়কে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে চলছে। ফলে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ জনগণ।
সচেতন মহল এসব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য হাইওয়ে থানা পুলিশের ব্যাপক চাঁদাবাজিকেই দায়ী করছেন।
কক্সবাজারে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা প্রাইভেটকার চালক তৌহিদুল ইসলাম জানান, আমি আমার পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে যাচ্ছি। কিন্তু, বানিয়ারছড়া স্টেশনের আগে উড়ি-আম গাছতল নামক এলাকার সামনে এসেই আমি হাইওয়ে পুলিশের খপ্পরে পড়েছি। সব কাগজ ঠিক থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে তাদের ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাভার্ড ভ্যান চালক জানান, মহেশখালী, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও চকরিয়া থেকে প্রায়ই ট্রাকে করে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় লবণ পরিবহন করে নিয়ে যান চালকরা। কিন্তু পথিমধ্যেই হাইওয়ে পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, গাড়ি আটক করলেই তাদের টাকা দিয়ে আসতে হয়। অন্যথায় এই মামলা, সেই মামলা দেওয়ার কথা বলে হয়রানি করেন।
বানিয়ারছড়া উড়ি আমগাছতল এলাকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাইওয়ে পুলিশের এ চাঁদাবাজি নিত্যদিনের। শুধু দিনে নয়, রাতভর চাঁদা নিতে তৎপর এই হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। প্রতিটি ট্রাক থেকে ন্যূনতম ১০০ থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা বা তারও বেশি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
এদিকে গত ১২ই মার্চ বুধবার রাত ২টা ২৬ মিনিটের দিকে চিরিংগা হাইওয়ে থানার উত্তরদিকে আনুমানিক ৪শত গজ বা তারও কিছুটা দূরে বানিয়ারছড়া উড়ি আমগাছতল নামক জায়গায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে যানবাহন থামিয়ে হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক টাকা আদায় করার একটি ভিডিও ফুটেজ এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। এ ভিডিও চিত্রে ওই দিন রাত ২টা ২৬ মিনিটে কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায় করতে দেখা যায়।
এ ভিডিওটি হাতে আসার পর স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, চকরিয়া সহ পার্শ্ববর্তী বেশকিছু উপজেলার বিভিন্ন বাজার থেকে কাঁচা সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এসব পন্য পরিবহন করে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে মহাসড়কে চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা চাঁদাবাজি চালায়। অতি তুচ্ছ কারণ বা কোন কারণ না থাকলেও রাতের বেলা রাস্তায় চলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীসহ যানবাহন চালকরা।
অন্যদিকে, চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৯ই মার্চ (শনিবার) বিকাল ৩টার দিকে চালক ও হেলপারের ব্যানারে চিরিংগা হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মাহবুবুল হক ভুঁইয়া কর্তৃক আটক ও টোকেন বাণিজ্য এবং মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে চকরিয়া পৌরশহরে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চিরিংগা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবুল হক ভুঁইয়া বলেন, যেসকল অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সঠিক নয়। মহাসড়কে নিষিদ্ধ সিএনজি গাড়ি পেলেই ধরে মামলা দিচ্ছি তাই ক্ষোভে তাঁরা হয়তো এমন অভিযোগ করছে।
উল্লেখ্য: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে রাতের অন্ধকারে চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক- পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায়ের একটি ভিডিও ফুটেজ এবং সিএনজি গাড়ি দুপুরে আটক করে সন্ধ্যায় কোন ধরনের মামলা ছাড়াই জনৈক সাহেদ মেম্বার নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে গোপন আঁতাত করে রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দেওয়ার কল রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
Leave a Reply