কক্সবাজারের মহেশখালীর পাহাড়ি ঢালে আবারও অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান মিলেছে। কারখানা থেকে অস্ত্র ও বিপুল সরঞ্জামসহ ৩ কারিগরকে আটক করেছে র্যাব। শনিবার (১৬ মার্চ) ভোরে এই অভিযান চালানো হয়।
র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে মহেশখালীর বিভিন্ন দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্র তৈরির কারখানা হতে রোহিঙ্গাদের নিকট অস্ত্র সরবরাহ হয় বলে র্যাবের আভিযানিক দল তথ্য পায়। যার প্রেক্ষিতে গোপন তথ্যের মাধ্যমে অস্ত্র তৈরির কারখানা সনাক্তকরণ ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা কার্যক্রম ও নজরদারি শুরু করে র্যাব-১৫। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যসহ স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৬ মার্চ ভোর ৬ টার দিকে র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর সিপিএসসি ক্যাম্পের একটি চৌকস আভিযানিক দল মহেশখালী হোয়ানক ইউনিয়নের পূর্ব পুইরছড়াস্থ খঞ্জনির বাপের ঘোনা পাহাড়ি ঢাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি অস্ত্র তৈরীর কারখানার সন্ধান পায়। র্যাবের অভিযানের বিষয়টি বুঝতে পেরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা দূর্গম পাহাড়ের এদিক-ওদিক দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় ধাওয়া করে অবৈধ অস্ত্র তৈরী, কেনা-বেচার সাথে জড়িত চক্রের ৩ জনকে র্যাবের আভিযানিক দল গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তবে অস্ত্র তৈরীর কারখানার অন্যতম কারিগর বাদশা মিয়া কৌশলে দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় পালিয়ে যায়।
পরে অস্ত্রের কারখানা হতে দুটি দেশীয় তৈরী ওয়ান শুটার গান এবং অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামাদির মধ্যে লোহার তৈরী ড্রিল মেশিন, হাতুড়ী, করাত, চারটি লোহার পাইপ, দুটি লোহার ব্যারেল, হেক্সো ব্লেড, দুটি লোহা কাটার ব্লেড, ষাটটি ওয়াশার, দুটি পাঞ্চিং রড, দুটি বড় নাট, রেঞ্চ, স্টীল সীড, তিনটি লোহার অংশ ও লোহার ব্রাশসহ অস্ত্র তৈরীর আনুষাঙ্গিক ছোট-বড় ৫০টি অস্ত্র তৈরীর বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
আটকৃতরা হলো- মহেশখালী কালামার ছড়ার মৃত ফকির মোহাম্মদের পুত্র ফরিদুল আলম (৫৪), তার দুই পুত্র জিসাদ প্রকাশ সোনা মিয়া (২২) ও বাহিম (২০)। বর্তমানে তারা চকরিয়া বরইতলী সোনা মিয়ার বাড়ীতে বসবাস করে আসছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অস্ত্র তৈরীর কারখানাটি অন্যতম কারিগর বাদশা মিয়ার। তারা পাহাড়ে অবস্থান করে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে অস্ত্র তৈরী ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনাসহ ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় এবং মাদক’সহ নানাবিধ অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ কারখানায় কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে দেশীয় বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র তৈরী করতো। পরবর্তীতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব দেশীয় তৈরী অস্ত্র কক্সবাজার শহর, রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার নিকট এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধীদের নিকট উচ্চ মূল্যে বিক্রয় করে থাকে মর্মে স্বীকার করে।
উদ্ধারকৃত আলামতসহ পলাতক ও আটকদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালী থানায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
Leave a Reply