মাওলানা ভাসানী একাধারে ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতা, যদিও অন্যদের সঙ্গে তার তফাৎ ছিলো এই যে তিনি কৃষকদের অধিকার নিয়ে কথা বলতেন। পাশাপাশি উঠে এসেছে মাওলানার অনাড়ম্বর জীবনের নানা অজানা কাহিনী। উঠে এসেছে মাওলানার অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের গল্প। সামনে থেকে মাওলানা সবসময় সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার যখন মতের অমিল হয়েছে সেখান থেকে বের হয়ে গেছেন চাওয়া পাওয়ার হিসাব না মিলিয়েই।
কিন্তু নীতির প্রশ্নে কখনও আপোষ করেননি তিনি। মাওলানা একদিকে যেমন রাজনীতি সচেতন ছিলেন অন্যদিকে ছিলেন সমাজ সংস্কারক। উনি ঠিকই উপলব্ধি করেছিলেন সমাজের অর্ধেক নারীকে অশিক্ষিত রেখে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নারী শিক্ষার পাশাপাশি তাদেরকে ঘোড়ায় চড়াসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কথাও বলেছেন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার অধিবাসী রণদা প্রসাদ সাহা সেই সময়ে মেয়েদেরকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলছিলেন দেখে মাওলানা বলেছিলেন, ‘সেই পঞ্চাশের দশকে রণদা বাবু তাঁর মেয়েদের ঘোড়ায় চড়া শিখাতেন, ওই সময় ক্ষণশীল ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাঙালি সমাজে এটা কম বড় কথা নয়।’
আহমদ ছফার লেখা ‘মাওলানা ভাসানী’ প্রবন্ধে ছফা বলেছেন, “বাঙলার কৃষক সমাজের সত্যিকার নেতা ছিলেন মরহুম মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। মাওলানা সাহেব কৃষক সমাজের একেবারে ভেতরে গাছের মতো বেড়ে উঠেছিলেন। গাছের বেড়ে ওঠার জন্য যেটুকু আলো, জল, হাওয়ার প্রয়োজন কৃষক সমাজের দাবিগুলোকে অনেকটা সেই চোখেই দেখতেন তিনি। পড়ে পাওয়া কোনো কেতাবি উপলব্ধি দ্বারা তাড়িত হয়ে মাওলানা রাজনীতি করতে আসেননি। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তাঁকে রাজনীতির দিকে ধাবিত করেছে। তাঁর ছিলো এক অনন্য সংবেদনশীল সহজাত প্রবৃত্তি। এই সহজাত প্রবৃত্তিই তাঁকে ‘জীবনে জীবন যোগ’ করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।”
মাওলানা ভাসানী একাধারে ছিলেন পীর ও রাজনৈতিক নেতা, যদিও অন্যদের সঙ্গে তার তফাৎ ছিলো এই যে তিনি কৃষকদের অধিকার নিয়ে কথা বলতেন। পাশাপাশি উঠে এসেছে মাওলানার অনাড়ম্বর জীবনের নানা অজানা কাহিনী। উঠে এসেছে মাওলানার অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের গল্প। সামনে থেকে মাওলানা সবসময় সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার যখন মতের অমিল হয়েছে সেখান থেকে বের হয়ে গেছেন চাওয়া পাওয়ার হিসাব না মিলিয়েই।
কিন্তু নীতির প্রশ্নে কখনও আপোষ করেননি তিনি। মাওলানা একদিকে যেমন রাজনীতি সচেতন ছিলেন অন্যদিকে ছিলেন সমাজ সংস্কারক। উনি ঠিকই উপলব্ধি করেছিলেন সমাজের অর্ধেক নারীকে অশিক্ষিত রেখে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নারী শিক্ষার পাশাপাশি তাদেরকে ঘোড়ায় চড়াসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কথাও বলেছেন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার অধিবাসী রণদা প্রসাদ সাহা সেই সময়ে মেয়েদেরকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলছিলেন দেখে মাওলানা বলেছিলেন, ‘সেই পঞ্চাশের দশকে রণদা বাবু তাঁর মেয়েদের ঘোড়ায় চড়া শিখিয়েছেন, রক্ষণশীল ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাঙালি সমাজে এটা কম বড় কথা নয়।’
মাওলানা ভাসানী কখনও নদীর বুকে জেগে থাকা চরে আটকে যাওয়া নৌকা ঠেলছেন, আবার কখনও তাঁকে দেখা যাচ্ছে অতিথির জন্য রান্না করার কাঠ চেরাতে, আবার দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তা তৈরি করতে।মাওলানা বাংলার পাশাপাশি দরকার হলে হিন্দি ও উর্দু ভাষাতেও বক্তব্য দিতেন, এমনকি তাঁকে দেখা যায় বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইংরেজিতেও আলাপ করতে। সবকিছু ছাপিয়ে এসেছে মাওলানার আন্তরিকতার গল্পগুলো। মানুষকে আপ্যায়ন না করে ছাড়তেন না কখনও, দরকার হলে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াতেন।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ – ১৭ নভেম্বর ১৯৭৬) বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক। তিনি ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
মাওলানা ভাসানী একাধারে ছিলেন পীর ও রাজনৈতিক নেতা, যদিও অন্যদের সঙ্গে তার তফাৎ ছিলো এই যে তিনি কৃষকদের অধিকার নিয়ে কথা বলতেন। পাশাপাশি উঠে এসেছে মাওলানার অনাড়ম্বর জীবনের নানা অজানা কাহিনী। উঠে এসেছে মাওলানার অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের গল্প। সামনে থেকে মাওলানা সবসময় সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার যখন মতের অমিল হয়েছে সেখান থেকে বের হয়ে গেছেন চাওয়া পাওয়ার হিসাব না মিলিয়েই।
কিন্তু নীতির প্রশ্নে কখনও আপোষ করেননি তিনি। মাওলানা একদিকে যেমন রাজনীতি সচেতন ছিলেন অন্যদিকে ছিলেন সমাজ সংস্কারক। উনি ঠিকই উপলব্ধি করেছিলেন সমাজের অর্ধেক নারীকে অশিক্ষিত রেখে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নারী শিক্ষার পাশাপাশি তাদেরকে ঘোড়ায় চড়াসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কথাও বলেছেন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার অধিবাসী রণদা প্রসাদ সাহা সেই সময়ে মেয়েদেরকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলছিলেন দেখে মাওলানা বলেছিলেন, ‘সেই পঞ্চাশের দশকে রণদা বাবু তাঁর মেয়েদের ঘোড়ায় চড়া শিখিয়েছেন, রক্ষণশীল ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাঙালি সমাজে এটা কম বড় কথা নয়।’
মাওলানা কখনও নদীর বুকে জেগে থাকা চরে আটকে যাওয়া নৌকা ঠেলছেন, আবার কখনও তাঁকে দেখা যাচ্ছে অতিথির জন্য রান্না করার কাঠ চেরাতে, আবার দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তা তৈরি করতে।
পাশাপাশি এসেছে মাওলানার ভাষা এবং রাজনৈতিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞার গল্প। মাওলানা বাংলার পাশাপাশি দরকার হলে হিন্দি ও উর্দু ভাষাতেও বক্তব্য দিতেন, এমনকি তাঁকে দেখা যায় বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইংরেজিতেও আলাপ করতে। সবকিছু ছাপিয়ে এসেছে মাওলানার আন্তরিকতার গল্পগুলো। মানুষকে আপ্যায়ন না করে ছাড়তেন না কখনও, দরকার হলে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াতেন।
মাওলানার প্রথম জীবনের রাজনীতি থেকে শুরু করে জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ের বিভিন্ন ঘটনা এ বইয়ে স্থান পেয়েছে। যেমন মাওলানার প্রথম জীবনের রাজনীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘…বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের শেষ দিকে তিনি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি উপলব্ধি করেন এইভাবে লুটতরাজ করে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। তখন তিনি সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন থেকে সরে আসেন।”
মাওলানা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সবসময়ই সাধারণ জনমানুষের অধিকারের জন্য লড়েছেন। আর শোষক বিরোধী বিভিন্ন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ওয়াজ মাহফিলেও শোষক বিরোধী বক্তব্য দিতেন। তাই উনার ওয়াজ মাহফিলে সব ধর্মের এবং সব বর্ণের শ্রোতাদের সমাবেশ ঘটতো। মাওলানা বাস্তব জীবনে ইসলামের নিয়ম কানুন পালন করলেও মনেপ্রাণে ছিলেন পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হয়েও মাওলানা কিন্তু জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের সমর্থক ছিলেন না। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের পক্ষে। পাকিস্তান শুধু মুসলমানদের আবাসভূমি হবে এ রীতির তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী। তিনি বলতেন, ‘পাকিস্তান কোনো ইসলামী রাষ্ট্র বা ধর্মরাষ্ট্র হবে না; পাকিস্তান হবে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।’ তিনি বলতেন, ‘পূর্ব বাংলা থেকে হিন্দুরা চলে গেলে বাঙালি কালচার নষ্ট হয়ে যাবে।’
পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরা বাংলা ভাষার সঙ্গে নামাজ তথা ধর্মের সাংঘর্ষিক একটা ব্যাখ্যা পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই দেওয়ার চেষ্টা করে আসছিলো। একবার পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মাওলানার কথা হলে তিনি বলেন, “ধর্মের সঙ্গে ভাষার কোন সম্পর্ক নাই। ধর্ম এক জিনিস আর ভাষা আর একটি জিনিস। একটির সঙ্গে অন্যটিকে যারা মেশায় তারা অসৎ ও মতলববাজ। উর্দুর সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক কী? আরব দেশের মানুষ উর্দুতে কথা বলে নাকি? ইরানের মানুষ কি উর্দু জানে? উর্দু কি দুনিয়ার সব মুসলমানের ভাষা? বাংলাকে যারা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা চায় তারা পাকিস্তানের দুশমন নয়। যারা চায় না তারাই পাকিস্তানের দুশমন। পাকিস্তানের যদি ক্ষতি হয় তাহলে বাংলা-বিরোধীদের দ্বারাই হবে।”
মাওলানা সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের বিরুদ্ধে বলেছেন, “যেসব মুসলমান হিন্দুদের বিধর্মী মনে করে, তাদের ক্ষতি করতে চায়, আমি তাদের বলি তোমরা কারা? খুব বেশি হইলে চার-পাঁচ পুরুষ আগে তোমরা কারা ছিলা? তোমাদের বাপ-দাদার বাপ-দাদারা ছিলেন হয় হিন্দু নয় নমঃশূদ্র। এ দেশের হিন্দু আর মুসলমানের একই রক্ত। কতজন আরব ইরান-আফগানিস্তান হইতে আসিয়াছে? পাঁচ পুরুষ আগে যারা ছিলো তোমাদের পূর্বপুরুষ আজ তাদের গায়ে হাত তুলতে তোমাদের বুক কাঁপে না? তোমরা কি মানুষ না পশু?”
মাওলানা শেকড়কে ভালোবাসতে তার সমস্যা-সুবিধার খোঁজ রাখতে বলেছেন। একবার এক কৃষকের ছেলে যে এলাকার কৃষকদের খবর জানে না কিন্তু সে ছাত্ররাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিলে মাওলানা তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার বাপ কী করে?’ ছেলেটি উত্তর দেয়- কৃষক। তখন মাওলানা বলেন, “কৃষকের ছেলে হইয়া এলাকার কৃষকদের অবস্থা বলতে পারো না। তুমি করবা ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি। তোমারে দিয়া ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি হইব না। কলেজে পড়তে গিয়া বাপ-দাদার পেশার কথা ভুইলা গেছ। সমাজতন্ত্রের আন্দোলন তোমারে দিয়া হইব না। ভালো কইরা পড়ালেখা কইরা পাশ করো গিয়া। চাকরি-বাকরি করো। তবে ঘুষ খাইয়ো না, দুর্নীতি কইরো না। ছাত্রনেতা হওয়ার দরকার নাই, ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করো।”
লেখক : শিতাংশু ভৌমিক অংকুর
দপ্তর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক,
কবি নজরুল সরকারি কলেজ সাংবাদিক সমিতি
Leave a Reply