কক্সবাজারের চকরিয়ার কৈয়ারবিলে মাতামুহুরী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ থাকা তরুণ শফি আলমের (২৬) মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজের ২৮ ঘন্টা পর তাঁর লাশটি বিএমচরের কন্যারকুম এলাকায় নদীর তীরে পড়ে থাকতে দেখে স্বজন এবং পুলিশের খবর দেয় প্রত্যক্ষর্শীরা। পরে স্থানীয় জনতার সহায়তায় পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় তাঁর মুখে ও গলায় রশি পেঁচানো ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে। এতে সবার মাঝে সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে। পুলিশ বলছে- এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড না-কি নদীতে তলিয়ে গিয়ে সে মারা গেছে তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। তাই লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে গতকাল রবিবার সকালে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। উদ্ধার হওয়া শফি আলম কৈয়ারবিল ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের নতুন খালের মুখ এলাকার মৃত আবদুস সোবহানের পুত্র। এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নতুন মুখ এলাকায় জুয়ার আসরে পুলিশ অভিযান চালাতে যায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন জুয়াড়ি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। তবে শফি আলম নিখোঁজ থাকে। নিহত শফি আলমের বড়ভাই মো. আলম ও বড় বোন মরিয়ম খাতুন অভিযোগ করেছেন- তাঁদের ছোট ভাই শফি আলমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন কৈয়ারবিল ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার এনামুল হক। শফির ভাই-বোনের দাবি- গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী বর্তমান মেম্বার এনামুল হকের প্রতিদ্বন্ধির হয়ে প্রকাশ্যে মাঠে কাজ করেন শফি আলম। এই কারণে শফির ওপর বেশ ক্ষুদ্ধ ছিলেন বর্তমান মেম্বার এনামুল হক। তাই সেই বিরোধকে পুঁজি করে শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে শফি আলমকে ধরে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে এবং মুখে-গলায় রঁশি দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ নদীর তীরে কাঁদামাটির সাথে পুঁতে রাখে এনাম মেম্বারসহ তার লোকজন। এর পর রাত দেড়টার দিকে জুয়ার আসরের কথা বলে সেখানে পুলিশ নিয়ে যায় এনাম মেম্বার। ভাই-বোন আরো জানান- নিহত শফি আলমের ব্যবহৃত মুঠোফোন এবং কিছু নগদ টাকা মেম্বার এনামের কাছে রয়েছে। যা একটি ভিডিও চিত্রে এনাম মেম্বার নিজেই স্বীকার করেন। অবশ্য সেই মোবাইল ও টাকা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন বলেও জানান মেম্বার এনাম। তবে কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক দাবি করেছেন- জুয়ার আসরে পুলিশ অভিযান চালাতে গেলেই শফিসহ বেশ কয়েকজন নদীতে ঝাঁপ দেয়। এতে নদীতে তলিয়ে গিয়ে শফি আলম মারা যায় এবং নিখোঁজ থাকে। তবে তাকে জড়িয়ে যে বক্তব্য আসছে তা নিছক ষড়যন্ত্র বলে দাবি মেম্বার এনামের। এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘শফি আলমের লাশ উদ্ধারের সময় সুরতহাল করা হয়। এ সময় শফির মুখে পেঁচানো একটি রঁশিও পাওয়া যায়। এই বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
Leave a Reply