দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে শেষ সময়ে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। উপাচার্য তার অনুগত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়ার আয়োজন করেছেন এবং গণনিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন। গত ১৭ জুন লিখিতভাবে অভিযোগ করেন তিনি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষকরা মিলেই এই অভিযোগ আমরা করেছি। বর্তমান উপাচার্য মেয়াদের শেষ দিকে এসে অনেকটা স্বেচ্ছাচারীর মতো আচরণ করছেন। প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা উপাচার্যকেও বলার চেষ্টা করেছি, শেষ মুহূর্তে এগুলো করবেন না। কিন্তু কোনোভাবেই তিনি শুনতে চাচ্ছেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন উপ-উপাচার্য যোগদান করেছেন। বিষয়টি তাকেও বলেছি। তিনি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন যে, শেষ মুহূর্তে এগুলো হওয়া উচিত নয়। তারপরও উপাচার্য শুনছেন না। সে কারণেই মন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীর বরাবর দেওয়া চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৮ জুলাই। এর আগেই শিক্ষকদের মতামত উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড, প্রক্টর, প্রভোস্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে উপাচার্যের অনুগত ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়ার আয়োজন করেছেন উপাচার্য।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রায় দুই বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ পর্যায় রিজেন্ট বোর্ডের মেয়াদ শেষ হলেও সম্প্রতি উপাচার্য তার আস্থাভাজন লোকদের রিজেন্ট বোর্ডে আনার তোড়জোর শুরু করেছেন।
মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠির সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির আস্থাভাজনদের মধ্যে একজন হচ্ছেন এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম। বর্তমান উপাচার্য বিভাগীয় প্লানিং কমিটির আপত্তি থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতির নীতিমালা উপেক্ষা করে সিরাজুল ইসলামকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষা জীবনের সকল পর্যায়ে প্রথম বিভাগ থাকা বাধ্যতামূলক থাকলেও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. খাদেমুল ইসলামের স্নাতক পর্যায় দ্বিতীয় বিভাগ থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতির নীতিমালা লঙ্ঘন করে ২০১৯ সালে তাকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন উপাচার্য। এছাড়া ড. খাদেমুল ইসলাম প্রক্টরের দায়িত্বে থাকাকালীন একজন ছাত্র হত্যা এবং দুই জন ছাত্র নিখোঁজ হয়। এসব ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় প্রক্টর খাদেমুলের ভূমিকা।
এ ছাড়াও গণিত বিভাগের শিক্ষক ড. পিনাকি দে বেসরকারি কলেজের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে ২০১৯ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন উপাচর্যের ইচ্ছায়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা বহির্ভূত বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
এছাড়া সম্প্রতি উপাচার্য ড. আলাউদ্দিন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত হিসাব শাখার পরিচালক এ. কে. এস. এম তোফাজ্জল হকের বিরুদ্ধে সমন্বয়হীনভাবে প্রায় ১৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হয় শিক্ষামন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. উমর ফারুক বলেন, ‘উপাচার্যের নানা অনিয়ম, বাণিজ্য ও দুর্নীতির সহযোগী শিক্ষকদেরকে অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমান উপাচার্য তার সহযোগীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে বিদায় নিতে চাইছেন, যেন তার দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রকাশিত না হয়। এটি পরবর্তী প্রশাসনের জন্য হুমকি হতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘নিয়মের বাইরে আমি কিছুই করিনি। মনে রাখতে হবে, ভাইস চ্যান্সেলর একা কিছু করেন না, যা করেন নিয়ম অনুযায়ী পর্ষদের মাধ্যমে। যিনি অভিযোগ করেছেন, তার কাছে ব্যাখ্যা চান কেনও অভিযোগ করেছেন।’
Leave a Reply