মানুষের বিন্দুমাত্র আনুকূল্য না পেয়েও সাড়ে সাত বছর পূর্বে মুনতাসির মাহদী তার আবেগের জায়গা “মার্কেটিং,সেলস এবং ব্যবসা ” নিয়ে কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে তিনি ‘ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে হাতেখড়ি’ ও ‘ব্রেইনফ্লুয়েন্স: দ্য সাইকোলজি অব মার্কেটিং’ নামে রকমারি বেস্ট সেলার দুটো বই লিখেছেন ২০২০-এর একুশে বইমেলায়। বইগুলো প্রকাশিত হয়েছে শব্দশৈলী প্রকাশনী থেকে। সামনে আসছে নতুন বই “দ্য ফাইনাল বুক অভ ফেসবুক মার্কেটিং এন্ড সেলস” ।
পূণ্যভূমি সিলেটে বেড়ে উঠা মুনতাসির মাহদী শুধু একজন প্রশিক্ষক ও লেখকই নন, বর্তমানে তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ‘অ্যাশেন্সি–সোশ্যাল মিডিয়া ক্রিয়েটিভ অ্যাজেন্সি’ নামে একটি অ্যাজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা ও এখন সিইও তিনি। এছাড়াও ‘উক্তি’, ‘অপ্টিমাইজার’ ও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। খুব কম সময়ে অপটিমাইজারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় অসংখ্য তরুণ ডিজিটাল মার্কেটিং এ দক্ষ হতে ভর্তি হচ্ছে।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সিএসই নিয়ে পড়াশোনা করলেও পড়াশোনা শেষ করার আগেই ‘ড্রপ আউট’ হয়ে যান তিনি। এ সম্পর্কে মাহদী বলেন, ‘‘আসলে, হুট করে একটা ক্লিক হয়েছিল আমার মধ্যে। সিএসই নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও সবসময়েই মানুষের সঙ্গে কথা বলতাম আমি। কিন্তু সেটা সিএসইতে সম্ভব নয়। সারাজীবন ‘ইঞ্জিনিয়ার হবো, ইঞ্জিনিয়ার হবো’ চিৎকার করে আসলেও আসলেই কি সেটা আমার প্যাশন ছিল? আমি কি আসলেই আমার স্বপ্নের দিকে এগোচ্ছিলাম?
আমার কাছে কোথাও একটা কিছু মিসিং মনে হচ্ছিল। আর তারপর নিজের প্যাশনটাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই মার্কেটিংয়ে চলে আসা। আর মার্কেটিংয়ে এসে যখন বুঝলাম যে, আসলে আমি আমার বাকি জীবনের পুরোটা সময় এই মার্কেটিং, সেলস আর ব্যবসাতেই দিতে চাই; তখনই ভার্সিটি থেকে ড্রপ আউট হয়ে যাই। আমার কাছে এখন মনে হয়, প্যাশনের চেয়ে শান্তি আসলেই আর কিছুতে নেই।”
মুনতাসির মাহদী হাজারবার ধাক্কা খেয়েছেন। হাজারবার হাজারটা মানুষের তিক্ত কথা শুনেও তিনি এতদূর এসেছেন আজকে। বর্তমানে বাংলাদেশে মার্কেটিং নিয়ে সক্রিয়ভাবে যে কয়েকজন কাজ করছেন; তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
কারো কোনো সাপোর্ট ছাড়াই তিনি পুরোদমে মার্কেটিং নিয়ে কাজ শুরু করলেন। তার মতে, তিনি সবসময়েই ফলো করেন টাই লোপেজ, পেং জুন, গ্যারি ভেইনারচাক, ডিজিটাল প্রতীকের মতো ওয়ার্ল্ড ক্লাস মার্কেটার ও সেলসম্যানদের। তিনি মার্কেটিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই বুঝতে পারেন, বেশিরভাগ বাংলাদেশিই মার্কেটিং সেক্টরটার ভুল সংজ্ঞা জেনে বসে আছে। সবাই ভাবতে বসেছে, মার্কেটিং মানে ফ্রিল্যান্সিং আর ফ্রিল্যান্সিং ছাড়া মার্কেটিংয়ের আর কোনো কাজই নেই।
আর তাই, তিনি একেবারে নতুনভাবে মার্কেটিং সেক্টর নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, “কন্টেন্ট হচ্ছে সবচেয়ে পাওয়ারফুল অস্ত্র, প্রত্যেক সেক্টরেই। আপনি একটা ব্যবসা থেকে শুরু করে যেকোনো খাতের কথাই বলুন না কেন; কন্টেন্ট সম্পর্কে আপনার জ্ঞান যদি অল্প থাকে, তাহলে আপনি অদূর ভবিষ্যতে ধাক্কা খাবেনই। আর কন্টেন্টের কোনো ক্ষমতাই থাকে না, যদি সেটা ডিস্ট্রিবিউশন ঠিকভাবে না করা হয়। আর এটাই কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের কাজ, যা মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে জটিল ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেপ। অথচ আমি যখন মার্কেটিং শিখতে গিয়েছিলাম, তখন এই মেথড নিয়ে কোনো ভালো বাংলা কোর্স কিংবা বই পাইনি।”
তার শেখার আগ্রহ থেকেই তিনি তার শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কেটিং, সেলস ও ব্যবসা নিয়ে একেবারে ব্যসিক থেকে কোর্স তৈরি করেন ও সেগুলো একেবারে অল্পমূল্যে সবার অন্য উন্মুক্ত করে দেন।
যদিও একেবারে অল্পমূল্যে সবার জন্য তার নিজের কোর্স উন্মুক্ত করে দেওয়াটা তাকে বেশ ভোগান্তিতে ফেলেছিল। কারণ, মানুষের দু’পক্ষ চিন্তা না করে, না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার সমস্যাটা।
মাত্র ছয় মাসেই তার কোর্সগুলো করেছেন প্রায় ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। আর এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং, ব্যবসা ও নিজেদের ব্র্যান্ড ডেভেলপ করে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করছেন।
তিনি সামনে এগিয়ে কী করতে চান, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এখন যেটা করছি, সামনেও সেটাই করতে চাই। আরও বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে চাই, আর সেটার জন্য ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সিলেটের সবচেয়ে সেরা ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট লঞ্চ করতে যাচ্ছি। আর আমি নিজে কখনো সাপোর্ট পাইনি। ত্রিশটা ক্লাসের জন্য হাজার দশেক টাকা সাধারণ মানুষের কাছে কতটা বোঝা, সেটা শুধু আমিই জানি।’
Leave a Reply