যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ও বৃদ্ধি। যাকাত প্রদানে মানুষের সম্পদ পবিত্রতা লাভ করে। এতে করে সম্পদ কমে না বরং আরও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আমাদের সমাজের সম্পদশালী ধনী মানুষেরা গরীবদেরকে কিছু দিতে কার্পণ্য করে। তারা মনে করে গরীবদেরকে দান করলে তাদের অর্থ সম্পদ কমে যাবে! এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন, মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা (যাকাত) দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে। (সুরা: আর-রুম, আয়াত: ৩৯)।
যাকাত গরিব মিসকিন ও বঞ্চিতদের হক। সেটি আপনি আমি কখনই আত্মসাৎ করতে পারি না। আমাকে আপনাকে আল্লাহ সম্পদশালী করেছে তার মানে এই নয় যে, সেই সম্পদে কারো হক নেই। বরং ইসলামী বিধি বিধান অনুসারে ধনীদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ গরিব অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করার নির্দেশনা রয়েছে। অথচ আমরা গরিব-মিসকিন ও অসহায় মানুষদেরকে দান করতে কার্পণ্য করি। যাকাত সম্পদের শতকরা আড়াই শতাংশ হিসাবে আল্লাহর নির্ধারিত খাতে এটি বণ্টন করতে হয়। যাকাত গরিবের প্রতি ধনীর অনুগ্রহ নয়; বরং এটি তাদের প্রাপ্য অধিকার। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তাদের (ধনীদের) ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।’ (আয-যারিআত, আয়াত: ১৯)
যারা যাকাত প্রদান করে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ, আর যারা যাকাত দিতে কার্পণ্য করে তাদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। এ বিষয়ে এক হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন বান্দা যখন যাকাত আদায় করেন, তখন আল্লাহর আদেশে একজন ফিরিশতা তার জন্য এভাবে দু‘আ করতে থাকেন, হে আল্লাহ, আপনার পথে যে দান-সদাকা, যাকাত দেয়, তার সম্পদকে আপনি বৃদ্ধি করে দিন, আর যে ব্যক্তি সম্পদ ধরে রাখে (যাকাত দেয় না) তার সম্পদ আপনি ছিনিয়ে নেন। (সহীহ বুখারী)
সম্পদশালী ব্যাক্তিরা মনে করেন যে, যাকাতের দ্বারা তাদের সম্পদ কমে যায়! এটা নিছক ভুল ধারণা। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন যে, যাকাত আদায়ের ফলে তিনি তার প্রিয় বান্দাদের সম্পদ দ্বিগুন করে দিবেন। যাকাত অর্থ-সম্পদকে পবিত্র করে, মানুষের মন-মস্তিস্ককে গর্ব-অহংকার, লোভ-লালসা, কৃপনতা ও মলিনতা থেকে পরিচ্ছন্ন করে রাখে। সেই সাথে নিজের উপার্জিত অর্থ সম্পদে সমাজের অসহায় ও অবহেলিত মানুষের উপকারে আসে। যাকাত আদায় করলে বাহ্যিকভাবে সংখ্যায় মনে হয় যেন সম্পদ কমে যাচ্ছে। কিন্তু পক্ষান্তরে যাকাত আদায় করলে আল্লাহ তা‘আলা অবশিষ্ট সম্পদে প্রভূত বরকত দান করেন। আবার যাকাতের মধ্যে যে সম্পদটুকু খরচ হয়, আল্লাহ তায়ালা ভিন্ন কোন উপায়ে সেই সম্পদ আবার ফিরিয়ে দেন।
হাদিস শরীফে যাকাতকে ইসলামের সেতুবন্ধন বলা হয়েছে। কারণ, এটি ধনী ও গরীবের মাঝে অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন। মুসলিম সমাজ থেকে দরিদ্রতা দূরীকরণে এবং সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে যাকাতের ভূমিকা অত্যধিক। যে ব্যাক্তি যাকাত দিতে কার্পণ্য করে সে মূলত আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করে নাফরমানী করছে। অপরদিকে মহান আল্লাহ যাদেরকে তার সম্পদের একাংশ দিতে বলেছিলেন তারা গরীবের সেই সম্পদ আত্মসাৎ করল।
ইসলাম ধর্মে ধনী-গরীবের ভেদাভেদ দূরীকরণের জন্য যাকাতের বিধান দেওয়া হয়েছে। ধনীরা যেন যাকাতের মাধ্যমে গরীবকে সহায়তা করে তাদের পাশে থাকে সেজন্য আল্লাহ তায়া’লা এটি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের পর সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ থাকলে অথবা এগুলোর সমমূল্যের ব্যবসার মালিকানা থাকলে মোট সম্পদের আড়াই শতাংশ হারে যাকাত দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মূলত রমাদান মাস আসলে ৭০গুণ সাওয়াবের আশায় মানুষ এই সময়ে বেশি যাকাত প্রদান করে থাকে। যাকাত দেওয়া ফরজ হয়েছে এমন প্রতিটি মুসলিম সমাজে যাকাত প্রদান করে গরীবের হক আদায় করে দরিদ্রতা দূরীকরণে এবং সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে ধনী মানুষেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদী। লোক দেখানো যাকাত প্রদান নয়, বরং অসহায় মানুষের প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হোক সকল মুসলমানদের মূখ্য উদ্দেশ্য।
লেখকঃ মুরতুজা হাসান,
শিক্ষার্থী,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
Leave a Reply