ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে মাত্র দুটি দেশ আছে যারা দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। তার মধ্যে একটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , অন্যটি হলো বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের মিলিটারি বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। বাঙালির উপর নেমে আসে কালো রাত। সারাদেশব্যাপী হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগসহ নানা ধরনের বর্বরতা চালায়। পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাঙালির উপর যে অমানবিক নির্যাতন চালায় সেটা ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত।
বাঙালি আপামর জনতা কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারেনি। আর তাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সংগ্রাম। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম। এরপর প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসটি বিশেষ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। সে জন্য ববি (বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষার্থীদের রয়েছে স্বাধীনতাকে নিয়ে নানা ধরনের ভাবনা। সে সকল ভাবনা তুলে ধরছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মো: মিরান হোসেন।
তরুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস দৃঢ় ভাবে তুলে ধরতে হবেঃ
স্বাধীনতা হীনতায় কে বাচিঁতে চায়,
কে বাচিঁতে চায়!
দাসত্বের শৃঙ্খল কে পড়িবে পায়,
কে পড়িবে পায়!
স্বাধীনতা হীন হয়ে কেউই বেচেঁ থাকতে চায় না। একজন মানুষ কখনোই অন্য আরেকজন মানুষের দাস হয়ে থাকতে চাই না। এই স্বাধীনতা নিয়ে বাঙালির এক গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস আজও বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে ওতোপ্রোতোভাবে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পশ্চিম-পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মানুষের উপর নানা ধরনের নিপীড়ন শুরু করে। তারা বাংলার মানুষদের সকল অধিকার, মর্যাদা কেড়ে নিয়ে পরাধীনতার বেড়ি পরিয়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু বাংলার মানুষ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ২৩ বছরের পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত হয়ে বরণ করে স্বাধীনতাকে। তবে স্বাধীনতা অর্জন করার থেকে রক্ষা করা কঠিন। তাই তরুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস আরো প্রকট ও দৃঢ় ভাবে তুলে ধরতে হবে। স্বাধীনতার চেতনায় তাদেরকে উজ্জীবিত করতে হবে যাতে তারা দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় যথাযথ কর্তব্য পালন করতে পারে। এ বছর স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যয় হোক বাংলাদেশের সকল মানুষ শতভাগ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করার।
শিক্ষার্থী, জাকিয়া সুলতানা শিমু,
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও বাংলাদেশ নানা সমস্যায় জর্জরিতঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিশ্বের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। কোন জাতিকেই জন্মভূমির জন্য এমন ভাবে আত্মত্যাগ করতে হয়নি। তাই স্বাধীনতার ইতিহাসে বাঙালিরা এক গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করে। সেই সূচনা শুধু বাংলাদেশের মানুষেরই নয়, বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্যই এক অভিনব প্রেরণার উৎস। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও বাংলাদেশে এখনো নানা সমস্যায় জর্জরিত। যেমন:কলকারখানা অফিস-আদালত, স্কুল- কলেজ সর্বত্র শৃঙ্খলার অভাব প্রকট। অবৈধ প্রভাব স্বার্থান্বেষী মানুষ মাত্রই মেতে উঠেছে ক্ষমতাধর হওয়ার প্রতিযোগিতায়। কল্যাণমুখী রাজনীতি হয়ে পড়েছে কলুষিত। সমাজ জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির থাবা বিস্তৃত হচ্ছে। তরুণদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উশৃঙ্খলতা। তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে খুব সহজেই।অথচ এই তরুণরাই নাকি আগামীর বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিবে! এছাড়াও রয়েছে বেকারত্ব, সন্ত্রাসবাদ, দারিদ্র, খুন-রাহাজানি প্রভৃতি।এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার কামনা বাংলাদেশ এসব সমস্যাকে মোকাবেলা করে সামনের দিকে দুর্বার গতিতে অগ্রসর হোক। স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।
আয়শা সিদ্দিকা,
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।
সকল স্তরে বাঙ্গালি সংস্কৃতি এবং ইতিহাস চর্চা বাস্তবায়ন হোকঃ
২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই দিবসটিকে ঘিরে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতার সাথে পালন করা হয়। পতাকা উত্তোলন, প্যারেড, দেশাত্মবোধক গান, বক্তৃতাসহও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। যতটা আনুষ্ঠানিকতার সাথে আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করছি, ঠিক একই ভাবেই কি আমরা এই স্বাধীনতার পিছনে লুকিয়ে থাকা বাঙ্গালির ভয়াবহ ইতিহাসকে স্মরণ করি? বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা দেখি, ২৬শে মার্চ এই দিনটিতে অনেক স্কুল, কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হিন্দি গানের সাথে নৃত্যের মাধ্যমে খুবই বিকৃত ভাবে দিবসটি পালন করার আনুষ্ঠানিকতা চলে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে, আগামী প্রজন্ম এ দিনটিকে শুধুই একটি দিবস ও ছুটির দিন বলেই মনে করতে শুরু করবে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সকল স্তরে বাঙ্গালি সংস্কৃতি এবং ইতিহাস চর্চা পুরোপুরি ভাবে বাস্তবায়ন হোক। যাতে বিকৃত সাংস্কৃতিক ব্যাবস্থাপনা না থাকে। পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
শিক্ষার্থী,রাব্বি তালুকদার
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ।
স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্যঃ
স্বাধীনতা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। স্বাধীনতার জন্য পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি জাতিকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে। বাংলাদেশও এমনিভাবেই স্বাধীনতা পেয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের অন্তর্ভুক্তি ঘটে। এ দিনের নবীন সূর্যোদয়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এ স্বাধীনতা দিবসের আনন্দোজ্জ্বল মুহূর্তের মধ্যে প্রথমেই যে কথা মনে পড়ে, তা হলো এ দেশের অসংখ্য দেশপ্রেমিক শহিদের আত্মদান। আজ বাঙালি স্বাধীন। প্রতিবছর গৌরবময় এ দিনটি পালন করতে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হয়ে উঠে স্বাধীনতার স্বপ্ন ও সাধ আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, জাতীয় জীবনে আমাদের অর্জন কতটুকু, বিশ্বসভায় আমাদের অবস্থান কোথায় সেসব মিলিয়ে দেখা। স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের মৌল চেতনা সবাইকে অনুপ্রাণিত করুক- এটাই মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রত্যাশা।
শিক্ষার্থী,প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস প্রেমা।
সমাজকর্ম,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply