হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হকৃবি) মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল বাসেত স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা লেভেল-১, সেমিস্টার-২ এর বেশ কয়েকটি কোর্সের সমন্বয়ে ‘চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, কক্সবাজারে ফিল্ড ট্রিপ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। হকৃবি ক্যাম্পাস থেকে গত ৩০ জানুয়ারি রাত দশটায় আমরা সিভাসু’র উদ্দেশ্যে রওনা হই। পরের দিন ৩১ জানুয়ারি সকালে সেখানে পৌঁছানোর পর থেকে এই অনুষদের শিক্ষার্থীরা সিভাসু’র ভেটেরিনারি অনুষদের ল্যাবগুলো পরিদর্শন করে। এসময়ে আমরা ল্যাব সম্পর্কিত বিভিন্ন সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি এবং গবেষণা ও বাস্তব জীবনে প্রয়োগ সম্পর্কিত বিস্তারিত ধারণা লাভ করি।
‘সিভাসু’র সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল এনাটমি মিউজিয়াম। যেখানে প্রায় সকল প্রজাতির প্রাণীর কঙ্কাল, ভিসেরাল অর্গান সহ অনেক ড্যামি এনিম্যাল ও অর্গান চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এ সম্পর্কে আমাদের হকৃবির এনাটমি এবং হিস্টোলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. সালাউদ্দীন ইউছুপ স্যার এসব কঙ্কাল ও ভিসেরাল অর্গান গুলো সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপনা করেন। যার ফলে ছাত্রছাত্রীরা এনাটমির সবথেকে এই জটিল বিষয় গুলো অনেক সহজ, সরল ও সাবলীল ভাবে বুঝতে সক্ষম হয়।
এরপরে, সিভাসুর এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড নিউট্রিশন বিভাগ পরিদর্শন করার সময় সাবেক ভিসি ড. গৌতম বুদ্ধ দাসের সাথেও আমাদের শিক্ষার্থীদের পরিচয় হয়, এ সময় তিনি হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো আব্দুল বাসেত স্যারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এনিম্যাল সায়েন্স ও নিউট্রিশন বিভাগের সকল শিক্ষকগন অনেক আন্তরিকতার সাথে ল্যাবের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তাছাড়া, এ সময় হকৃবির এনিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের প্রভাষক ডা. জাকিয়া সুলতানা কলি ম্যাডাম নিজে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদেরকে হাতে ধরে উক্ত ল্যাবের সবকিছু চমৎকার ভাবে বর্ণনা করেন।
এরপর শিক্ষার্থীরা সিভাসুর ‘ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি’ বিভাগের ফিজিওলজি ল্যাব ভিজিট করে। এসময়ে উক্ত বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ডা. রিদুয়ান পাশা স্যার শিক্ষার্থীদেরকে ল্যাবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। উক্ত ল্যাবে সেসময়ে হকৃবির ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি এন্ড টক্সিকোলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. রহিমা আক্তার দীপা শিক্ষার্থীদের কে কোর্স রিলেটেড বিষয় গুলো অত্যন্ত যত্নসহকারে বর্ণনা করেন।
দিনশেষে, শিক্ষার্থীর সিভাসুর অত্যাধুনিক এস. এ. কাদেরী টিচিং ভেটেরিনারি হসপিটাল ঘুরে দেখে। এসময় তারা উক্ত হসপিটালের পেট ইউনিট সহ অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ভিজিট করে। দেশে ভেটেরিনারি চিকিৎসার এমন অত্যাধুনিক ব্যবস্থা দেখে শিক্ষার্থীরা চরম উচ্ছ্বসিত, যা তাদেরকে পরবর্তীতে ভেটেরিনারি পেশার প্রতি আরো একধাপ অনুরাগ বাড়িয়ে দিবে এবং একজন ভেটেরিনারিয়ান (ভেট) হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনুপ্রাণিত করবে।
রাতে শিক্ষার্থীরা রওনা দেয় কক্সবাজারের উদ্দেশে। কারণ চলমান সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের কোর্সগুলোর মধ্যে একটি কোর্স আছে পেট, জু, ল্যাবরেটরি এনিম্যাল এন্ড ওয়াইল্ড লাইফ ম্যানেজমেন্ট। এই কোর্সের প্রাক্টিক্যাল ফিল্ড হিসেবে শিক্ষার্থীরা ভিজিট করে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, ডুলহাজারা, কক্সবাজার। যেখানে এনিম্যাল সাইন্স বিভাগের প্রভাষক ডা. শিরিনা আক্তার তমা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে,পরিশ্রম করে প্রত্যেক প্রাণীর কাছে গিয়ে তাদের স্বভাব, বাসস্থান, খাদ্যতালিকা, কিভাবে আবদ্ধ অবস্থায় প্রাণী গুলো বেঁচে থাকে, তাদের খাদ্যাভ্যাস, এনক্লোজার(খাঁচা) ডিজাইন ইত্যাদি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা দেয় ফলে শিক্ষার্থীরা উক্ত কোর্সের বিষয়াবলি সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা পায়।
এরপরে, শিক্ষার্থীর রিফ্রেশমেন্টের জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ করে এবং রাতে আবার হকৃবির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য সিভাসু সকল ল্যাব পরিদর্শন করানো হয়েছিল বিশেষ করে প্যারাসাইটোলজি ও প্যাথলজি বিভাগ, মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীদের শিখানোর যে অভিপ্রায় তা ছিল বিমোহিত হওয়ার মতো।
শিক্ষার্থীরা বলেন, যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৪ থেকে ৫ বছরের শিক্ষাবর্ষ শেষে একটা ট্যুর পায়, সেখানে হকৃবির মাননীয় উপাচার্য মহোদয় শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি সেমিস্টারের কোর্স কারিকুলামে বিভিন্ন কোর্স রিলেটেড একাডেমিক ট্যুরের ব্যবস্থা রেখেছেন। ফলে, ভিসি স্যারের এমন যুগোপযোগী স্মার্ট চিন্তা চেতনার সুফল পেতে শুরু করছে দেশের অন্যতম নতুন এই সরকারি স্মার্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আশা, এমন স্মার্ট ভিসি স্যারের হাত ধরেই আরো বেশি স্মার্ট হবে হকৃবি এবং এর ধারাবাহিকতা অবদান রাখবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে।
সর্বোপরি, এই ফিল্ড ট্রিপটি অত্যন্ত চমৎকার ও পরিপাটি ভাবে পরিচালনা করার জন্য শিক্ষার্থীরা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ডা. রহিমা আক্তার দীপা ম্যাম, ডা. জাকিয়া সুলতানা কলি ম্যাম, ডা. শিরিনা আক্তার তমা ম্যাম ও ডা. সালাউদ্দীন ইউছুপ স্যারকে যাদের আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও তত্ত্বাবধানে এমন আকর্ষণীয় একটা শিক্ষামূলক সফর সম্পন্ন করতে পেরেছে। শিক্ষার্থীরা এমন সফর পেয়ে বেজায় খুশি। শিক্ষার্থীদের মতে, তারা সুন্দর একটা স্মৃতির সাক্ষী হয়েছে যা সারাজীবনেও ভুলবার নয় এবং এর সমস্ত কৃতিত্ব তারা হকৃবির মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল বাসেত স্যারকে দিতে চায়।
মোহাম্মাদ সাব্বির রহমান
শিক্ষার্থী, এএসভিএম অনুষদ, ২১-২২ শিক্ষাবর্ষ, হকৃবি, হবিগঞ্জ।
Leave a Reply