আজ ১০ জানুয়ারি। বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে এই দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিনও বলা বটে।
যিনি বাঙ্গালী কে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। যে স্বপ্ন হাজারো বছর ধরে বাঙ্গালী দেখে এসেছে।যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে নাই- ক্ষুদিরাম, তিতুমীর, সূর্যসেন সহ হাজী শরিয়াতুল্লাহরা। বাঙ্গালীর যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে নাই নেতাজী সুভাষ বোস, শেরে বাংলা,হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছিলেন টুঙ্গীপাড়ার বাইগার নদীর তীরে বেড়া উঠা শেখ মুজিব। যিনি শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু হয়েছিলেন। যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জীবনের ১৪ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রোকষ্টে কাটিয়েছেন। জীবনের যৌবন ব্যয় করেছেন বাঙ্গালী জাতির মুক্তির জন্য। যার ডাকে সাড়া দিয়ে স্বদেশ রক্ষার সংগ্রামে বাঙ্গালী জাতি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলো।
এ জাতির বিবেক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন বাংলাদেশে পদার্পন আজ। মহান এই নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস নিয়ে কিছু কথা।
বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১০ জানুয়ারী এক অনন্য দিন। মহান স্বাধীনতার স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কারাগার থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। এর আগে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বসম্মানে মুক্তি দেয়। ৮ই জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডন-দিল্লি হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছান ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি।
অবশ্য বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন শুধু এই কথাটি প্রকাশ পেলো ৮ই জানুয়ারি। মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ২২ দিন পরে এ জাতি স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো এবং স্বাধীনতার পূর্ণাজ্ঞ স্বাদ পেলো।
১৬ই ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অবস্থান ঘটলেও বঙ্গবন্ধু তখনো বন্দি ছিলেন পাকিস্তানের হায়েনাদের কারাগারে।কিন্তু বঙ্গবন্ধু আদৌ বেঁচে আছেন কিনা বেঁচে থাকলেও পাকিস্তান তাকে ফিরিয়ে দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের দানা বেধে উঠেছিলো। ৮ জানুয়ারি বিবিসি প্রথম খবর প্রকাশ করেছে যে, বঙ্গবন্ধু লন্ডনে আসছেন। কারণ,সরাসরি দেশে আসা সম্ভব ছিল না। মুক্তি পাওয়ার পর পরই তিনি যেতে চেয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন দেশ তার স্বপ্নের বাংলাদেশে কিন্তু,জেনেভা কনভেন্সেশন অনুযায়ী সেটা সম্ভব ছিল না। সম্ভব ছিল না প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের আকাশ সীমা ব্যবহার করা। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে তৃতীয় দেশ ইরান অথবা তুরস্ককে বেছে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে বঙ্গবন্ধু তা নাকচ করে দেন।এরপর তাকে লন্ডন হয়ে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হলো আত্মিক যোগাযোগ সেই ১৯৫৬ সন থেকেই তিনি যখন প্রথম বিলেতে এসেছিলেন।তাই তিনি বেছে নিয়েছিলেন লন্ডনকে।অপরদিকে, পাকিস্তান সরকার কিন্তু এই সংবাদটি প্রচার করতে পারেনি।কারণ, বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা অনুযায়ী মুক্তির খবর সংবাদ মাধ্যমে পাকিস্তান প্রচার করেনি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,আমি নিজেই বিশ্বকে জানাতে চাই আমার মুক্তির বার্তা। অবশেষে তাই হলো, জাতির পিতা মাত্র ১ দিনের যাত্রা বিরতি করেছিলেন লন্ডনে। সেখান থেকেই বিশ্বকে জানিয়েছেন তার মুক্তির বার্তা।
সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, আমরা জানতাম না বঙ্গবন্ধু ফিরেছেন কিনা। ২৯ ডিসেম্বর প্রথম বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত হয় বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবছেন ভুট্টো।
৮ তারিখ সকালে বিবিসি প্রথম ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত হয়ে লন্ডনে আসছেন। সকাল ৭ টায় হিথ্রো বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী পাকিস্তানি একটি বিশেষ ফ্লাইট ৬৩৬ এ অবতরণ করে। অবতনের সাথে সাথেই প্রথমে সেখানে ছুটে আসেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র অফিসের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা স্যার ইয়ার মাদারল্যান্ড।
কিন্তু,জাতির পিতা উদগ্রীব ছিলেন কখন বাংলাদেশ ফিরবেন। সেখান থেকেই দেশে টেলিফোনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। হোটেলে অবস্থান কালেই আমেরিকার সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেভি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর সাথে টেলিফোনে কথা বলেন। তাছাড়া হোটেলে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট বলেন ব্রিটেনের বিরোধী দলীয় নেতা- হ্যারল্ড উইলিয়াম যিনি পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। শুধু কি তাই! বিশ্ববাসীকে অবাক করে সমস্ত প্রোটকল উপক্ষে করে রাষ্ট্রীয় সফর এবং যাবতীয় কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করে সেদিন জাতির পিতার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন ব্রিটেন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ শুধু মাত্র বঙ্গবন্ধুকে সন্মান জানাতে। ৮ তারিখ বিকেল ৫ ঘটিকাউ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে এক বৈঠকে মিলিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাবতীয় রীতি উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বঙ্গবন্ধুকে বহন করা গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়েছিলেন যতক্ষন না বঙ্গবন্ধু গাড়িতে উঠেন।
লেখকঃ এম.এম.ইব্রাহীম পলাশ।
মাঠকর্মী,বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রলীগ।
সভাপতি,মধুমতি এ্যাসোসিয়েশন, বশেমুরবিপ্রবি।
Leave a Reply