“আহলান সাহলান মাহে রমজান ”
আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাকে চির শান্তির আবাস জান্নাত দান করার জন্য কত সব বাহানা যে তৈরি করে রেখেছেন! তার অনেকগুলোর তো আমাদের খবরই নেই, আর অনেকগুলোর নেই কদর ও মূল্যায়ন। বান্দা ভুল করলে শুধরে নিবে। পাপ করলে অনুতপ্ত হবে। অভাবে আপদে আপন প্রভুর দুয়ারে ধর্না দিবে। আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করতে নিজ সামর্থ্য ব্যয় করবে।
আর মাবুদে এলাহি বান্দাকে শোধরানোর সুযোগ দিবেন। তার পাপ মোচন করবেন,তার প্রয়োজন মেটাবেন।
বান্দার ভাঙ্গাচোরা ইবাদত কবুল করে নিবেন এবং তিনি গর্বিত হবেন। কারণ তিনি গফুরুর রহিম(অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু), তিনি গনিয়্যুন কারীম(অভাবমুক্ত ও মহামহিম) তিনি শাকুরুন হালীম(গুণগ্রাহী ও অতি সহনশীল)।
বছর ব্যাপী তাঁর ক্ষমা,দয়া ও দানের সকল দ্বার উন্মুক্ত। তা সত্বেও ভোগবিলাস আর দুনিয়ার মোহে বিভোর বান্দা যখন তাঁর মহান প্রভুকে ভুলতে বসে, বিতাড়িত শয়তানের ধোঁকায় আর কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় তারই প্রদত্ত এবং তারই কুদরতে সচল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মহামূল্যবান মন-মেধা-যবানকে কলুষিত করে, তখন অকৃতজ্ঞ, অবাধ্য ও উদাসীন বান্দাকে কৃতজ্ঞতা, বাধ্যতা ও সর্তকতায় ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি বান্দার দুয়ারে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাসব্যাপী মেলা লাগিয়ে দেন। শয়তান ও দুষ্ট জ্বিনদের পায়ে বেড়ি লাগিয়ে দেন, যেন মেলায় আগত বান্দার গতিরোধ করতে না পারে। সিয়াম-কিয়ামের উসিলা ধরিয়ে দেন যেন কুপ্রবৃত্তির মাথা তুলতে না পারে। আর প্রতিনিয়ত তার হাবিবের মাধ্যমে শোনাতে থাকেন অসংখ্য বিচিত্র আশার বাণী ও লোভনীয় অকল্পনীয় আশ্বাস ধ্বনি!।
রমজানের রোজা ফরজ হওয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেনঃ হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।!
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন: রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে পবিত্র কোরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত, সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে অবশ্যই রোজা রাখবে। তবে যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকবে, সে পরবর্তী সময় তা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না; যাতে তোমরা গণনা করে তা পূরণ করো। আল্লাহ তাআলা তোমাদের (কোরআনের মাধ্যমে) যে পথ দেখিয়েছেন, তার জন্য তোমরা তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করো এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।
রমজান সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেন
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের নিকট বরকতময় রমজান আগমন করেছে। আল্লাহতায়ালা তার রোজাকে তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয় এবং তাতে রয়েছে আল্লাহর জন্য এমন রাত যা হাজার রাত থেকে উত্তম। যে এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো- সে প্রকৃতার্থেই বঞ্চিত হলো।’ -(সুনানে নাসায়ি)
অন্য হাদিসে এসেছে, রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও দুষ্টু জিনদের বন্দী করে রাখা হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া এবং তার কোনো দরজা খোলা থাকে না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং তা আর বন্ধ করা হয় না। একজন আহবানকারী আহবান করে, হে কল্যাণ প্রয়াসী অগ্রগামী হও এবং হে অকল্যাণের অনুগামী নিবৃত্ত হও। (প্রতি রাতে) আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেন। (-সুনানে ইবনে মাজাহ)
রমজান নামক এই রহমত, মাগফেরাত, নাজাতের মেলা পাওয়ার মত সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে! আমরা যদি এ মাসের প্রতিটি আমল সুন্নাহ পদ্ধতিতে করতে পারি তবেই আমাদের রমজান পাওয়া সার্থক হবে।কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক।’’ [শারহুস সুন্নাহ ]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার তাওফীক দিন। আমিন
পরিশেষে…সমাজের সর্বস্তরে রমজানকে বরণ করতে তথা রমজানের ব্যাপারে সচেতনা তৈরি করতে এবং রমজানের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণে বিশ্ব মুসলিমের নিকট রমজানের আগমনী বার্তা পৌছিয়ে দেয়া ঈমানের একান্ত অপরিহার্য দাবি।
গোনাহমুক্ত জীবন লাভে রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজানকে জানাই শুভেচ্ছা ও সুস্বাগত।
Leave a Reply