জরুরি মুহূর্তে রোগী আনা কিংবা মৃত রোগীকে বাড়ি নেওয়া, ঈশ্বরদী সদর হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়েন অনেকেই। হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স একটি। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে অনেক অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেখানে বিপত্তির নাম ‘সিন্ডিকেট’।
জরুরি মুহূর্তে ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকা থেকে শুরু নানা অনিয়মের অভিযোগ এই অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সুযোগ পেলে রোগী ও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের রীতিমতো জিম্মি করেন এসব অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা। অন্যদিকে সবকিছু জেনেও উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অভিযোগের তীর উঠেছে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে।
জানা যায়, ঈশ্বরদী সদর হাসপাতালে সরকারী অ্যাম্বুলেন্স আছে মাত্র একটি তাও অবস্থা একদম খারাপ।উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত ইশ্বরদী উপজেলায় রুপপুর পারোমানোবিক ও ইপিজেড মিলে প্রায় চার হাজার বিদেশী সহ চল্লিশ হাজার ও ৪ লক্ষ স্থায়ী মানুষ ও অস্থায়ী প্রায় এক লক্ষ মানুষের জন্য ৫০ শয্যা হাসপাতালে একটি মাত্র সরকারী অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও প্রধান এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম।
অন্যদিকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সংকটের সুযোগ নেয় হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষায় থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো। এসব অ্যাম্বুলেন্সকে ঘিরে ঈশ্বরদী হাসপাতালে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এদিকে রোগীর স্বজনদের এ ব্যাপারে অভিযোগ অনেকদিনের হলেও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি ঈশ্বরদী হাসপাতাল প্রশাসন। তাই প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতাল প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও।
সম্প্রতি ঈশ্বরদী সরকারী এস এম স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেনীর ছাত্রের অক্সিজেন কনসেনটেটর আবিষ্কার করে আলোচনায় আসা তাহের মাহমুদ তারিফ জানান, আমার বাবাও এ-ই অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ে মারা যায়।তারিফ বলেন ২০২০ সালে ২ আগষ্ট আবার বাবা মারা যায়। ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জ খাজা ইউনুস আলী মেডিকেলে ছয় হাজার দুইশত টাকা ভাড়া দিয়ে বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়।কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জানি,ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জের ভাড়া তিন হাজার পাচশত টাকার মতো।অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আমার বাবা অক্সিজেনের অভাবে মারা যায় বলে তিনি জানান।কয়েক মাস আগে ঈশ্বরদী হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কাছে হয়রানি স্বীকার হওয়া আরও এক ভুক্তভূগী জানান,ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে জরুরী যাওয়ার জন্য ভাড়া দাবি করে তিন হাজার দুইশত টাকা।এই টাকায় তিনি যেতে না চাইলে, অপর আরেক চালক তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে যায় এবং সে দুই হাজার সাতশো টাকায় যেতে প্রস্তাব দেয়।পরে আরও একটু খোঁজাখুঁজি করে আরেক জন চালক দুই হাজার দুইশত টাকায় যেতে রাজি হয়।পরে আর খোঁজাঁখুজি না করে দুই হাজার দুই শত টাকা চুক্তিতে ওই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের পথে রওনা দেন তিনি।অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যায় সরকারী হিসেবে নির্ধারিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া চৌদ্দশো টাকা।
প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে ভুক্তভুগী বলেন, একই দূরত্বে দুটি অ্যাম্বুলেন্স কীভাবে দুইরকম ভাড়া দাবি করে, বলুন? আবার যেতে না চাইলে অশোভন আচরণও করে। এদের এসব স্বেচ্ছাচারিতা আর কতদিন চলবে?
এ বিষয়ে একজন অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়,ঈশ্বরদী হাসপাতালে প্রায় ২২ টির মতো অ্যাম্বুলেন্স আছে।এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাড়া চাওয়া হয়।আর ও জানা যায়, ঈশ্বরদী হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি নামে একটি সংগঠন ও রয়েছে যা নির্বাচিত এ-র মাধ্যমে সমিতি হয়েছে কিনা জানা নাই বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঈশ্বরদীর সচেতন মহলের নাগরিকরা জানান অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ভুক্তভুগী ও সচেতন মহলের বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ জানান,সকল শ্রেনীর মানুষের কথা চিন্তা করে উপজেলা প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমন্বয় করে একটি নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা তৈরী করে দেয়া হোক।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বেসরকারি এসব অ্যাম্বুলেন্সের কোনো-কোনোটির ফিটনেস গ্রহণযোগ্য অবস্থায় নেই। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের রোগীর সিটের নিচে রাখা হয় গ্যাস সিলিন্ডার। এসব সিলিন্ডার নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। ফলে এগুলো নিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় শঙ্কা থাকে। আবার অনেক অ্যাম্বুলেন্সে নেই কোনো ফাস্ট এইড বক্স।
জানা যায়, ফিটনেস এবং সিলিন্ডারের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সড়ক পরিবহন বিভাগ-বিআরটিএর। তবে বিআরটিএ এক্ষেত্রে নীরব দশর্কের ভূমিকা পালন করে। অভিযোগ রয়েছে, টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করা যায় তাদেরও।
এ বিষয়ে জানতে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা আসমা খানকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পি. এম.ইমরুল কায়েস বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তার পক্ষ থেকে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি,পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply