রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন
নোটিশ ::
বাংলাদেশ সারাবেলা ডটকমে আপনাদের স্বাগতম। সারাদেশের জেলা,উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে  প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে, আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন - ০১৭৯৭-২৮১৪২৮ নাম্বারে
সংবাদ শিরোনাম ::
বশেমুরবিপ্রবি’তে তিন দিনব্যাপী সাইকোমেট্রিক টুলস ও সাইকোলজিক্যাল এসেসমেন্ট ট্রেনিং সম্পন্ন চকরিয়ায় মাষ্টার মাইন্ড অটো ব্রিকস ফ্যাক্টরিতে ২ নির্মাণ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু নোবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ হলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ কেআইবি’তে এলডিডিপির মিডটার্ম রিভিউ কর্মশালা বশেমুরবিপ্রবি রোভার-ইন-কাউন্সিলের সভাপতি অনিক সম্পাদক ফারিহা চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনালে ব্যাপক পরিবহন চাঁদাবাজি, অতিষ্ঠ চালক-মালিকসহ সাধারণ যাত্রীরা রবিতে ইকোন ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত  ডেঙ্গারগ্রাম ডিগ্রি কলেজে অভিভাবক ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক উপায়ে শেরপুর জেলা ছাত্র কল্যাণ সংসদ বশেমুরবিপ্রবির নয়া নেতৃত্ব নির্বাচিত রবির অর্থনীতি বিভাগে সেমিনার অনুষ্ঠিত  চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে বিক্ষোভ কয়রায় খাস জমিতে ভবন নির্মাণ, ব্যবস্থা নেয়নি ইউএনও চকরিয়ায় বিএনপি নেতার উপর সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী হামলা; চমেকে প্রেরণ লামায় জায়গা-জমির বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ আহত ৭ স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে রবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন শিক্ষার্থীর আকস্মিক মৃত্যুতে নোবিপ্রবি প্রশাসনের অনুদান সাম্য ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ছাত্রদলের নতুন সাংগঠনিক টিম গঠন চকরিয়ায় বিএনপির ঘরে আওয়ামীগের গোপন সোর্স বশেমুরবিপ্রবি সেইভ ইয়ুথের নেতৃত্বে সজল-সামিরা পরীক্ষা শেষে ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী ২ বন্ধু নিহত গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি)’র চকরিয়া উপজেলা কমিটি গঠন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের ফ্রেশার্স ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত দখলের সংবাদ প্রচার করায় সাংবাদিক কে মারধর করলো বিএনপি নেতা

অমিক্রন নিয়ে জানা-অজানা

বাংলাদেশ সারাবেলা বিশেষ রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০২২
  • ৩৯০ ০০০ বার

               অমিক্রন নিয়ে জানা অজানা

অমিক্রন নামকরণ

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের হদিস মিলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা এবং হংকং-এ। সকলেই ভেবেছিলেন এবারের স্ট্রেনের নাম হবে Nu। কিন্তু, দু’ ধাপ এগিয়ে ওই ভ্যারিয়েন্টের নাম দেওয়া হয়েছে Omicron। বিষয়টি একটু খোলসা করে বলা যাক। SARS-CoV-2 -এর প্রতিটি ভ্যারিয়েন্টের নাম গ্রীক অক্ষরের নামে দেওয়া হয়েছে। হিসাব মতো, B.1.1.529 এর নাম হওয়া উচিত ছিল Nu। আদতে সেটা হল না। বরং WHO (World Health Organization) -এর প্যানেল সিদ্ধান্ত নিল যে নয়া স্ট্রেনের নাম দেওয়া হবে Omicron। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এও বলেছে যে ওই স্ট্রেন ‘ভয়াবহ’। ফলত তা যে চিন্তা বাড়াবে এটা স্পষ্ট।

কিন্তু, কেন Nu এবং Xi এই দু’টি অক্ষর টপকে Omicron -কে বেছে নেওয়া হল? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল বিভিন্ন মহলে। এবার এর উত্তর দিয়েছেন মহামারী বিশেষজ্ঞ মার্টিন কুলডর্ফ। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক জানিয়েছেন, ঘটনাটির যথাযথ কারণ রয়েছে। তাঁর দাবি, নয়া ভ্যারিয়েন্টের নাম যদি Nu দেওয়া হত, তাহলে পরবর্তীতে কোনও স্ট্রেন প্রকাশ্যে এলে নাম Xi দিতে হত। আর সেই কারণেই আলফা থেকে ল্যাম্বডার যাত্রাপথ পেরোনোর পর Nu -কে ব্রাত্য করে দেওয়া হল, যাতে Xi -এর কাঁটা এড়ানো যায়।এবার প্রশ্ন, Xi -কে এড়িয়ে চলা হচ্ছে কেন? মার্টিনের দাবি, যেহেতু চিনের প্রেসিডেন্টের নাম Xi Jinping সেই কারণেই ওই অক্ষরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম রাষ্ট্রনেতার নামে করোনাভাইরাসের স্ট্রেনের নামকরণ করতে চায়নি WHO। সৌজন্যের খাতিরেই ওই কাজ করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এদিকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিও চিনেই (China Wuhan City)। উহান শহরেই প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির হদিস মেলে।২৬ নভেম্বর ২০২১-এ, ডব্লিউএইচও ভাইরাস বিবর্তনের Technical Advisory Group on SARS-CoV-VirusEvolution(TAG-VE)বিষয়েডব্লিউএইচও-এর প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা গ্রুপের পরামর্শে B.১.১.৫২৯ উদ্বেগের একটি Variant , যার নাম ওমিক্রন, মনোনীত করেছে। এই সিদ্ধান্তটি TAG-VE-এর কাছে উপস্থাপিত প্রমাণের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল যে অমিক্রন এর বেশ কয়েকটি মিউটেশন রয়েছে যা এটি কীভাবে আচরণ করে তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, উদাহরণস্বরূপ, এটি কতটা সহজে ছড়িয়ে পড়ে বা অসুস্থতার তীব্রতার উপর। Global Initiative on Sharing All Influenza Data(GISAID) প্রকল্প এটিকে ক্লেড শনাক্তকারী GR/৪৮৪A, বরাদ্দ করেছে এবং নেক্সটস্ট্রেন প্রকল্প এটিকে ক্লেড শনাক্তকারী ২১K এবং২১L বরাদ্দ করেছে, উভয়ই একটি বৃহত্তর ওমিক্রন গ্রুপ ২১M এর অন্তর্গত।দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সারা বিশ্বের গবেষকরা অমিক্রন-এর অনেক দিককে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য প্রজেক্ট পরিচালনা করছেন। অমিক্রন ভ্যারিয়্যান্টের বেশ কয়েকটি মিউটেশন রয়েছে যা ভ্যারিয়্যান্টটি কীভাবে আচরণ করে তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এসব প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অমিক্রনের ধরণটিকে উদ্বেগের একটি কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। অমিক্রন সম্পর্কে এখনও যথেষ্ট অনিশ্চয়তা রয়েগেছে। এর সংক্রমণ-ক্ষমতা, তীব্রতা এবং পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য বেশ কিছু গবেষণা চলছে।বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন। যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়ে চলেছে।বিশ্বের অন্যান্য দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, আগের ধরনগুলোর মতো অমিক্রনের কারণে মানুষ অনেক বেশি অসুস্থ হয় না। কিন্তু যেভাবে অনেক বেশি মানুষ এই ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে অনেকে আইসোলেশনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।বর্তমানে বিশ্বের ১৬৭টি দেশে অমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে।

অমিক্রণের ট্রান্সমিসিবিলিটি
ভাইলার লোডের তুলনা করার জন্য গবেষকরা সংক্রমিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগৃহীত নাক ও গলার সোয়াব এর পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল গুলি খতিয়ে দেখেছিলেন। মূলত ডেল্টা আর ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেই এই তুলনামূলক পরীক্ষা করা হয়েছিল।পরীক্ষায় দেখা গেছে যারা ডেল্টায় আক্রান্ত তাদের তুলনায় যারা ওমিক্রনে আক্রান্ত তাদের মধ্যে ভাইরাল লোড তুলনায় কিছুটা বেশি।ওমিক্রন (Omicron) ও ডেল্টার (Delta) ভাইরাল লোড (Viral Load) প্রায় একই একই। নতুন গবেষণায় এমনই তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু করোনাভাইরাসের (Coronavirus) নতুন রূপ ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে এটি ডেল্টার মত প্রভাবশালী নয়। নেচার পত্রিকায় দুটি গবেষণা রিপোর্ট নিয়ে একটি আলোচনা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানেই বলা হয়েছে কোভিড -১৯ (Covid-19) ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে বেশি পরিমাণে ভাইরাল লোড প্রকাশ করে না। এটি বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে (heavy spread)- কারণ এটি অনাক্রম্যতা এড়াতে সক্ষম।
গবেষণায় খতিয়ে দেখা গিয়েছে ওমিক্রন হাইপার-ট্রান্সমিসিবিলিটি সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে প্রচুর পরিমাণে ভাইরাসের মুক্তি থেকে উদ্ভূত হয় । বার্লিংটনের ভার্মেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাইরোলজিস্ট এমিলি ব্রুস জানিয়েছেন ওমিক্রন দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়াতে পরে। এটির টিকা বা প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি অনাক্রম্যতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। নেচারের প্রতিবেদনে ভাইরাল লোডেরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে একজন ব্যক্তির মধ্যে থাকা ভাইরাসের পরিমাণ। আরটি পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে একজন সংক্রমিতের শরীরে কী পরিমাণে ভাইরাস রয়েছে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় সিটি মান হল ভাইরাল লোড। মান যত কম হবে ভাইরাল লোড তত বেশি হবে। ভাইরাল লোডের তুলনা করার জন্য গবেষকরা সংক্রমিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগৃহীত নাক ও গলার সোয়াব এর পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল গুলি খতিয়ে দেখেছিলেন। মূলত ডেল্টা আর ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেই এই তুলনামূলক পরীক্ষা করা হয়েছিল।পরীক্ষায় দেখা গেছে যারা ডেল্টায় আক্রান্ত তাদের তুলনায় যারা ওমিক্রনে আক্রান্ত তাদের মধ্যে ভাইরাল লোড তুলনায় কিছুটা বেশি। ম্যাসাচুসেটসের এক রোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন তিনি এই পরীক্ষার ফলাফল কখনই আশা করেননি। সুইজার ল্যান্ডের জেনেভার ভাইরালোজিস্ট বেঞ্জামিন মায়ার বলেন স্বাভাবিকভাবেই তিনি মনে করেন উচ্চতর সংক্রমণযোগ্যতা অবশ্যই একটি উচ্চ ভাইরাল লোডের কারণ হতে পারে।
নভেম্বরে ২০২১-এ ওমিক্রন  এ প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। ভাইরাসটি এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সর্বশেষ রূপ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এটি দ্রুত বিশ্বের অন্য দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের কথায় গত ৫ মাসে অমিক্রন বিশ্বে প্রভাবশালী একটি স্ট্রেইন হিসেবে পরিণত হয়েছে। এটি মহামারির নতুন তরঙ্গকেও ডেকে এনেছে। অনেক বিজ্ঞানীর মতে অমিক্রন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি মহামারি। এর সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনও মিল লেই। করোনাভাইরাসের রোগের উপসর্গের থেকেও অমিক্রনের উপসর্গ অনেকটাই আলাদা বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেল্টার মত এটি আক্রান্তদের ফুসফুসকে প্রভাবিত করে না। যার জন্য অমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও গোটা বিশ্বেই হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা অনেকটাই কম। ডেল্টা সহ অন্যান্য ভেরিয়েন্টের তুলনায় অমিক্রন বেশি সংক্রমণযোগ্য (যেমন, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে আরও সহজে ছড়িয়ে পড়ে) কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই ভেরিয়েন্টেদ্বারা প্রভাবিত দক্ষিণ আফ্রিকার অঞ্চলে ইতিবাচক পরীক্ষা করা লোকের সংখ্যা বেড়েছে, তবে এটি ওমিক্রন বা অন্যান্য কারণে হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য মহামারী সংক্রান্ত গবেষণা চলছে।

কীভাবে অমিক্রন ভ্যারিয়্যান্ট এর বিকাশ হয়েছিল?
যখন একটি ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং অসংখ্য সংক্রমণ ঘটায়, তখন ভাইরাসের মিউটেশন বা পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একটি ভাইরাস যত বেশি ছড়ায়, ততো বেশি সেটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। অমিক্রনের মতো করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়্যান্টগুলো মনে করিয়ে দেয় যে, কোভিড-১৯ মহামারী এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এ কারনে কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণের সুযোগ পাবার সাথে সাথে এটি গ্রহণ করা সবার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এছাড়াও সকলের উচিত শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং ঘরের ভিতরের জায়গাগুলোতে যেন ভালভাবে বায়ু-চলাচল করতে পারে তা নিশ্চিত করা সহ ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিদ্যমান নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা।অনেক মানুষের কাছে অমিক্রন সাধারণ ঠাণ্ডার মতো মনে হবে। অনেকে বলেছেন, অমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের গলা শুকিয়ে যাওয়া, সর্দি লাগা, শরীরের জয়েন্টে ব্যথা বা মাথা ব্যথা হয়েছে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুনশি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন,  ”অমিক্রনের লক্ষণগুলো খুবই হালকা ধরনের হয়। ডেলটা বা অন্য ধরনগুলোর মতো অতোটা প্রকট নয়। অনেকের ফুসফুসের ওপরের দিকে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত সিকোয়েন্সিং করে এটা শনাক্ত করা যায়।”তবে তিনি বলছিলেন, , করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা গেলেই যেসব সতর্কতা নেয়ার কথা বরাবর বলা হয়েছে, সবাইকে সেগুলো নিতে হবে। শুধু অমিক্রনের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা নেয়ার নেই।এর আগের করোনাভাইরাসের ধরনগুলোয় আক্রান্ত হলে স্বাদ বা গন্ধ চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটতো। এছাড়া কাশি এবং উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর হতো। এখনো করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এই কয়েকটি প্রধান লক্ষণ।চিকিৎসকরা বলছেন, অমিক্রনে আক্রান্ত হলে অনেক সময় হালকা ঠাণ্ডা বা সাধারণ অসুস্থতার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
এছাড়া আরো যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে:

বুকের ওপরের অংশে ব্যথা

মাথা ব্যথা, জ্বর

ক্লান্ত লাগা

শরীরে ব্যথা

গলা শুকিয়ে যাওয়ার অনুভূতি

পিঠেব্যথা।

দুর্বলতা।

মাঝেমাঝে কাশি।

স্বাদ, গন্ধ না থাকা।

অমিক্রণের তীব্রতা
ডেল্টা সহ অন্যান্য রূপের সংক্রমণের তুলনায় ওমিক্রনের সংক্রমণ আরও গুরুতর রোগের কারণ কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা গিয়েছিল যে দক্ষিণ আফ্রিকায় হাসপাতালে ভর্তির হার বাড়ছে, তবে এটি ওমিক্রনের নির্দিষ্ট সংক্রমণের ফলে সংক্রামিত হওয়ার সামগ্রিক সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে হতে পারে। অমিক্রন-এর সাথে সম্পর্কিত লক্ষণগুলি অন্যান্য রূপগুলির থেকে আলাদা বলে পরামর্শ দেওয়ার জন্য বর্তমানে কোনও তথ্য নেই। প্রাথমিক রিপোর্ট করা সংক্রমণগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে ছিল – অল্পবয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের হালকা রোগের প্রবণতা রয়েছে – তবে অমিক্রন ভেরিয়েন্টের তীব্রতার মাত্রা বুঝতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে । বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী ডেল্টা ভেরিয়েন্টে- সহ COVID-19-এর সমস্ত রূপগুলি গুরুতর রোগ বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে, বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য।

পূর্ববর্তী SARS-CoV-2 সংক্রমণের কার্যকারিতা
প্রাথমিক প্রমাণগুলি পরামর্শ দেয় যে উদ্বেগের অন্যান্য রূপের তুলনায় অমিক্রনের সাথে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে (অর্থাৎ, যাদের আগে COVID-19 ছিল তারা অমিক্রন দিয়ে আরও সহজে পুনরায় সংক্রমিত হতে পারে), তবে তথ্য সীমিত। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা: ডব্লিউএইচও কারিগরি অংশীদারদের সাথে কাজ করছে যাতে ভ্যাকসিন সহ আমাদের বিদ্যমান প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর এই ভেরিয়েন্টে এর সম্ভাব্য প্রভাব বোঝা যায়। প্রভাবশালী সঞ্চালন ভেরিয়েন্টে ডেল্টা সহ গুরুতর রোগ এবং মৃত্যু কমাতে ভ্যাকসিনগুলি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ভ্যাকসিনগুলি গুরুতর রোগ এবং মৃত্যুর বিরুদ্ধে কার্যকর রয়েছে।বর্তমান পরীক্ষার কার্যকারিতা: ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত পিসিআর পরীক্ষাগুলি অমিক্রনের সংক্রমণ সহ সংক্রমণ সনাক্ত করে চলেছে, যেমনটি আমরা অন্যান্য রূপগুলির সাথেও দেখেছিলাম । দ্রুত অ্যান্টিজেন সনাক্তকরণ পরীক্ষা সহ অন্যান্য ধরণের পরীক্ষার উপর কোন প্রভাব আছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য গবেষণা চলমান  রয়েছে ।বর্তমান চিকিৎসার কার্যকারিতা: কর্টিকোস্টেরয়েড এবং IL6 রিসেপ্টর ব্লকারগুলি এখনও গুরুতর COVID-19 রোগীদের পরিচালনার জন্য কার্যকর । অমিক্রন ভেরিয়েন্টে ভাইরাসের কিছু অংশের পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য চিকিৎসাগুলি এখনও কার্যকর কিনা তা দেখতে গবেষণা চলমান রয়েছে।

বর্তমানে, ডব্লিউএইচও ওমিক্রনকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক গবেষকের সাথে সমন্বয় করছে। বর্তমানে চলমান বা শীঘ্রই চলমান অধ্যয়নগুলির মধ্যে রয়েছে সংক্রমণযোগ্যতার মূল্যায়ন, সংক্রমণের তীব্রতা (লক্ষণগুলি সহ), ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসার কার্যকারিতা। ডব্লিউএইচও দেশগুলিকে ক্লিনিকাল বৈশিষ্ট্য এবং রোগীর ফলাফলগুলি দ্রুত বর্ণনা করার জন্য ডব্লিউএইচও COVID-19 ক্লিনিকাল ডেটা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ডেটা সংগ্রহ এবং ভাগ করে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে।যেহেতু অমিক্রনকে উদ্বেগের একটি ভেরিয়েন্টে মনোনীত করা হয়েছে, তাই ডব্লিউএইচও দেশগুলিকে গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে, নজরদারি বাড়ানো এবং পরীক্ষাসমূহের ক্রমবিন্যাস সহ; GISAID(Global initiative on sharing all influenza data)-এর মতো সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ ডাটাবেসে জিনোম সিকোয়েন্স শেয়ার করা; ডব্লিউএইচও কে প্রাথমিক কেস বা ক্লাস্টার রিপোর্ট করা; অমিক্রন এর বিভিন্ন সংক্রমণ বা রোগের বৈশিষ্ট্য আছে কিনা বা ভ্যাকসিন, থেরাপিউটিকস, ডায়াগনস্টিকস বা জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক ব্যবস্থার কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে কিনা তা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য ক্ষেত্রের তদন্ত এবং পরীক্ষাগারের মূল্যায়নের ধরনগুলো মুক্ত রাখতে বলেছেন।  ২৬ নভেম্বর ২০২১ থেকে ঘোষণায় আরও বিশদভাবে ঝুঁকি বিশ্লেষণ এবং বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সামগ্রিকভাবে COVID-19 সঞ্চালন কমানোর জন্য দেশগুলির কার্যকর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা চালিয়ে যেতে হবে। ডব্লিউএইচও দেশগুলিকে প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়া উভয়ের জন্য সমর্থন এবং নির্দেশিকা প্রদান।

অমিক্রন কিছুটা অস্বস্তিকর, তবে ভীতিকর কিছু নয়
অমিক্রণ ভাইরাসের বিস্তার কমাতে ব্যক্তিরা সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে তা হল অন্যদের থেকে কমপক্ষে ১ মিটার শারীরিক দূরত্ব রাখা; একটি ভাল ফিটিং মাস্ক পরেন; বায়ুচলাচল উন্নত করতে জানালা খুলুন; খারাপভাবে বায়ুচলাচল বা জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলুন; হাত পরিষ্কার রাখুন; বাঁকানো কনুই বা টিস্যুতে কাশি বা হাঁচি এবং টিকার ব্যবহার।TAG-VE-এর নিম্নলিখিত মিটিং সহ আরও তথ্য উপলভ্য হওয়ার সাথে সাথে ডব্লিউএইচও আপডেট প্রদান করা চালিয়ে যাবে। এছাড়াও, ডব্লিউএইচও এর ডিজিটাল এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তথ্য পাওয়া বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রম আর উদ্যোগের কারণে আমাদের এই পৃথিবীর ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে ঘাতক সার্স-কভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা তৈরি করা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এসব টিকা তাদের নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে যখন করোনার সংক্রমণ প্রায় ঠেকিয়ে ফেলেছে, ঠিক তখনই গত ২৬ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খবর দিল সার্স-কভ-২ ভাইরাসের নতুন একটি ধরনের।সার্স-কভ-২ ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স হওয়া দুই ডজনের অধিক মিউটেশন, আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে বটে, কিন্তু তা কোনোভাবেই উৎকণ্ঠার নয়। ডব্লিউএইচও-ঘোষিত ‘অমিক্রন’ নামক ধরনটি শনাক্তের পর বিশ্বের নানা দেশ তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল । অনেকেই আংশিকভাবে নির্দিষ্ট জাতির নাগরিকদের প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছিল । এমনকি দ্রুততম সময়ে বিশ্বনেতারা দফায় দফায় বৈঠক বসে অমিক্রন ঠেকানোর মন্ত্র খুঁজছেন। গণমাধ্যমও বিষয়টি নিয়ে এমনভাবে খবর প্রকাশ করছে, যেন এ ধরনটি ‘দানব’ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি কি আসলেই তাই? সত্যিই কি অমিক্রন দানবীয় শক্তি নিয়ে মানবজাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে ?সত্যি কথা বলতে কি, আমরা যাঁরা করোনা নিয়ে কাজ করছি, তাঁদের কাছে অমিক্রন কিছুটা অস্বস্তিকর, তবে ভীতিকর কিছু নয়। বিজ্ঞান কখনোই প্রমাণ ছাড়া কথা বলতে চায় না, এমনকি আমরাও সাধারণ মানুষের মনে ভয়ের সঞ্চার করে এমন কিছু বলতে বা লিখতে রাজি নই। গণমাধ্যমের ভূমিকাও তা-ই, সেটাই হওয়া উচিত। তবে গণমাধ্যমের চেয়ে বিশ্বনেতাদের কর্মকাণ্ড অমিক্রন গবেষণার ফলাফল আসার আগেই কিছুটা দানবীয় রূপ দিয়ে ফেলেছিল ।

মিউটেশন অমিক্রণের শক্তি কমিয়ে ফেলতে সক্ষম
অমিক্রন শনাক্তের অনেক আগে সার্স-কভ-২ ডজনখানেক ভেরিয়েন্ট বা ধরন আমরা পেয়েছি। সব ধরন কিন্তু শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। কোনো কোনো ধরন মিউটেশন ঘটালেও তার কার্যকারিতা উহানে পাওয়া মূল ধরনটির মতোই ছিল কিংবা কম ছিল। তবে কেবল আলফা, বেটা, ডেলটার দাপট আমরা কিছুটা দেখেছিলাম। এসব ধরনে যেসব মিউটেশন (জিনোম সিকোয়েন্স নির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিবর্তন) ঘটিয়েছিল, তার চেয়ে কিছুটা বেশি মিউটেশন হয়তো অমিক্রনে রয়েছে। তবে এসব মিউটেশন কতটা সংক্রামক হতে পারে, তার জন্য ওয়েট ল্যাব টেস্ট জরুরি, যা ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হচ্ছে।করোনার সব মিউটেশনই খারাপ ফল বয়ে আনে না। কিছু কিছু মিউটেশন ভাইরাসটির শক্তি কমিয়ে ফেলতে সক্ষম। আমরা কম্পিউটারে প্রোটিন বিশ্লেষণের বিভিন্ন সফটওয়্যারে দেখতে পাচ্ছি, আরবিডিতে এস৩৭১এল, এস৩৭৩পি, কিউ৪৯৩আর, কিউ৪৯৮আর, টি৪৭৮কে এবং এন৫০১ওয়াই মিউটেশনগুলো এসিই-II(ACE-II) প্রোটিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব শক্তিশালী করছে, যার দ্বারা বেশিসংখ্যক সংক্রমণশীল হওয়ার প্রমাণ পাওয়া সম্ভব।আরবিডিতে যদি কেবল এই কয়েকটি পরিবর্তন ঘটত, তাহলে অমিক্রন আমাদের জন্য ত্রাস হিসেবে আসত।আমরা এমন এক সময় করোনার আগের ধরনগুলো পেয়েছি, যখন নানা দেশে টিকা দেওয়া মাত্র শুরু হচ্ছিল। তবে ডেল্টার আগ্রাসন কিছুটা দানবীয় পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এখন অমিক্রনের আবির্ভাব এমন এক সময় এসেছে, ঠিক তখন অনেক দেশেই ২৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ৯০ শতাংশই টিকা প্রদান হয়ে গেছে। বাংলাদেশও অনেক দূর এগিয়েছে। ফলে টিকাগ্রহীতাদের মনে কিছুটা হলেও সাহস সঞ্চার হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অমিক্রন কি টিকাগ্রহীতাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে? আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হবে? আর যদিও সেটা হয়েও, অমিক্রন কি শক্তিশালী হস্তান্তরক  হতে পারে? কথা হচ্ছে, করোনার সব মিউটেশনই খারাপ ফল বয়ে আনে না। কিছু কিছু মিউটেশন ভাইরাসটির শক্তি কমিয়ে ফেলতে সক্ষম। তবে আরবিডি সাইটের বাইরে মিউটেশন হওয়া এইচ৬৫৫ওয়াই, এন৬৭৯কে এবং পি৬৮১এইচ মিউটেশনগুলো কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ বটে। এসব মিউটেশন স্পাইক প্রোটিনে স্বয়ংক্রিয় প্রোটিয়েজ দ্বারা খসে পড়তে পারে।

ডেলটা ধরন যে হারে ছড়িয়েছে, অমিক্রন তার চেয়ে দুর্বল
আমি জানি, ওপরের আলোচনা হয়তো অনেকের কাছে বোধগম্য হবে না, তবে নন-একাডেমিক পাঠকদের শুধু এটুকু আশ্বস্ত করতে চাই, যে গতিতে ডেলটা ধরন ছড়িয়েছে, সেই গতি আমরা এখন পর্যন্ত অমিক্রনে দেখতে পাইনি। নভেম্বরের ১১,২০২১তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকায় এ ধরনটির জিনোমে মিউটেশন শনাক্তের পর সেই দেশে সংক্রমণ কিছুটা বাড়লেও নভেম্বরের আগে সংক্রমণ ঠিক এমনই ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুই বা তিনজন করে অমিক্রনে শনাক্ত হওয়ার খবর এরই মধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। তবে সেই সংখ্যা খুবই কম। সংক্রমণের হারও আমরা তেমন লক্ষ করতে পারিনি। এর কয়েকটি কারণ থাকতে পারে: এক. সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি কমিটি দ্রুততার সঙ্গে অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ট্রেসিং করে আইসোলেশন করতে সক্ষম হয়েছে, অন্যটি টিকাগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হয়তো অমিক্রন তেমন কার্যকর হয়ে ওঠেনি।বিষয়টি যেটাই হোক, অমিক্রন মাত্র ধরা পড়েছে। তবে গত দুই সপ্তাহে সারা বিশ্বে সংক্রমণের হারে তেমন পরিবর্তন লক্ষ আমরা করতে পারিনি। এর মধ্যে একটা সুখকর বার্তা হয়তো আমাদের মধ্যে এসেছে। আমরা জানি না আমাদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে, তবে এ ধরনটি যদি আমাদের শরীরের অ্যান্টিবডিকে উপেক্ষা করে সেটি আমাদের কিছুটা হলেও খারাপ বার্তা এনে দিতে পারে। প্রাথমিকভাবে কিছু গবেষণা আসছে, যেখানে বলা হচ্ছে অমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার আগে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে তারও পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি যদিও বিতর্কিত, তবে আমরা দেখছি, টিকা গ্রহণের পরও অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ, এখন পর্যন্ত বাজারে আসা টিকাগুলো করোনার ধরনগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যবস্থা হিসেবে কাজ করলেও নির্দিষ্ট ধরনের জন্য তৈরি করা হয়নি।ফলে আমাদের অনেকের শরীরের দুর্বল প্রতিরোধব্যবস্থা ভেদ করে আক্রান্ত হয়েছে। তবে অমিক্রনের ক্ষেত্রে কী হবে, তা বলতে কিছুটা হলেও আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে একজন গবেষক হিসেবে আমি এটুকু বলতে পারি, অমিক্রনের জন্য হয়তো আমাদের নতুন করে আর কোনো টিকার প্রয়োজন পড়বে না। কারণ, অমিক্রনের সংক্রামকের ব্যাপকতা যদি বাড়েও সেই ক্ষেত্রে টিকা ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। তাই কেউ যদি পুনঃ আক্রান্ত কিংবা নতুন করে আক্রান্তও হয়, সেই ক্ষেত্রে টিকা সুরক্ষা দেবে। যদিও এরই মধ্যে টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো অমিক্রনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী টিকা তৈরি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অমিক্রন আসবে, তার ১১,২০২১ বিভিন্ন ভেরিয়েন্ট আসবে, মোদ্দা কথা হচ্ছে, যত দিন না বিশ্বের প্রতিটি নাগরিক টিকা না পায়, তত দিন আমরা কেউ সুরক্ষিত নই।ভেরিয়েন্টে অনেক মিউটেশন আছে, যার মধ্যে কিছু বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন।  অমিক্রন ভেরিয়েন্টে রেফারেন্স পূর্বপুরুষ ভেরিয়েন্টে তুলনায় মোট ৬০ মিউটেশন আছে। ৫০ সমার্থক মিউটেশন, ০৮ সমার্থক মিউটেশন, এবং ০২ নন-কোডিং মিউটেশন। ৩২টি মিউটেশন স্পাইক প্রোটিনকে প্রভাবিত করে, যা সংক্রমণের দ্বারা উৎপন্ন অ্যান্টিবডিগুলির প্রধান অ্যান্টিজেনিক লক্ষ্য এবং ব্যাপকভাবে পরিচালিত অনেক টিকা এই মিউটেশনগুলির অনেকগুলি অন্যান্য স্ট্রেনে পরিলক্ষিত হয়নি। ভেরিয়েন্টিতে ৩০টি অ্যামিনো অ্যাসিড পরিবর্তন, তিনটি ছোট মুছে ফেলা এবং মূল ভাইরাসের তুলনায় স্পাইক প্রোটিনে একটি ছোট সন্নিবেশ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে ১৫টি রিসেপ্টর-বাইন্ডিং ডোমেনে অবস্থিত (৩১৯-৫৪১ অবশিষ্টাংশ)। এটি অন্যান্য জিনোমিক অঞ্চলে অনেকগুলি পরিবর্তন এবং মুছে ফেলাও বহন করে। অতিরিক্তভাবে, ভেরিয়েন্টিতে ফুরিন ক্লিভেজ সাইটে তিনটি মিউটেশন রয়েছে। ফুরিন ক্লিভেজ সাইট SARS-CoV-2 সংক্রামকতা বাড়ায়।

ওমিক্রনের ঘরোয়া চিকিৎসা

সারা বছরই জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, বমিভাব লেগেই থাকে। এসব ‌উপসর্গ নিয়ে আগে মাথাব্যথা না থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা এসব উপসর্গ করোনা মহামারির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সাথে হুবহু মিলে যায়। এসব উপসর্গ দেখা দিলে বা ওমিক্রন হলে বাড়িতেই যেভাবে চিকিৎসা নেবেন আসুন তা জেনে নেই আজকের আয়োজনে-সম্প্রতি গবেষণা করে লন্ডনের কিংস কলেজের জেনেটিক এপিডেমিওলজির অধ্যাপক টিম স্পেক্টর জানিয়েছেন, সাধারন ফ্লু থেকে অমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের সহজেই যে দুটি উপসর্গ দেখে আলাদা করা যায় তা হলো বমি বমি ভাব এবং খিদে হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে মাথা ঘোরানো। এ দুটি উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব করোনা টেস্ট করিয়ে নেবেন।করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে তার মানে এই নয় অমিক্রনে আক্রান্ত হলে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের শরীর অমিক্রনে আক্রান্ত হলে দীর্ঘমেয়াদে এর কী প্রভাব পড়বে তা বোঝার জন্য গবেষণায় নির্দিষ্ট সময় পার করতে হবে বলে গবেষকরা মনে করছেন।অমিক্রন পজিটিভ হলে কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এটা সর্দি, কাশির পাশাপাশি বমিভাব দূর করবে। দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য কিছুক্ষণ পরপর খাবার গ্রহণ করুন। ডায়েটে রাখুন রঙিন সালাদ ও ফলমূল। প্রতিদিন ভিটামিন এ, সি, ডি সমৃদ্ধ খাবার খান।লেবুর রস আর আয়ুর্বেদ মশলা চা বা আদা চা পান করুন। তুলসি পাতার পেস্টের সঙ্গে মধু খেলে এ সময় দারুণ উপকার পাবেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অমিক্রন থেকে বাঁচতে চাইলেও মানতে হবে করোনাবিধি। এক্ষেত্রে মাস্ক পরা হল বাধ্যতামূলক। তবে মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে তৈরি হওয়া উদাসীনতা দেখে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁদের কথায়, এভাবে দিন এগতে থাকলে, আর অল্প সময়ের মধ্যেই নেমে আসতে পারে সমস্যার ঝড়। তখন অবস্থা সামলানো হবে ভীষণই কঠিন। মাস্ক পরার পাশাপাশি আপনি অবশ্যই নিয়মিত হাত ধুয়ে নিন। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সাবানের ব্যবস্থা না থাকলে অবশ্যই স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। অপরদিকে এই সময়টায় একটু শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করুন। তবেই এই অমিক্রন থেকে নিজেকে ও পরিবারকে বাঁচতে পারেন।

ওমিক্রন আক্রমণ প্রতিরোধকারী ভেষজ শরবত খান

একটা বাটিতে ১ লিটার পানি নিয়ে এর ভেতর ৪ টুকরা আদা, ১০টি লবঙ্গ,২টি লম্বা দারুচিনির টুকরা,১টি বচ ও ৫টি গোলমরিচ দিয়ে দিন এর পর পানি আধা লিটার হওয়া পর্যন্ত ফুটাতে থাকুন।পানি আধা  লিটার হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। চায়ের কাপে এককাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ এই পানি নিন সাথে সাধারণ গরম পানি মিশিয়ে কাপ পূর্ণ করুন। এতে মধু বা আঁখের গুড় মিশিয়ে গরম গরম খেয়ে ফেলুন চায়ের মত করে।ইচ্ছে করলে এতে চায়ের লিকার মিশিয়ে নিতে পারেন।এর ফলে গলায় যে ভাইরাসগুলো থাকে সেগুলো মারা যায়। এছাড়াও গলায় গরম লাগার ফলে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে গলায় যে চুলকানির মত সমস্যা দেখা দেয় তা ভালো হয়ে যায়।

গরম ভাপ আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারবে

চুলা বা ইলেক্ট্রিক হিটারে পানি গরম করে বাটিতে নিন তারপর একটি কাপর দিয়ে গরম পানির বাটি ও মাথা ঢেকে নিন তার পর গভীরভাবে শ্বাস টানুন। এ রকম করে ৫ মিনিট শ্বাস নিন। পানির মধ্যে এক ফোঁটা মেন্থল দিলে আরও ভালো হয়। মেন্থলের ঝাঁঝালো গন্ধের কারণে নাক বেশি পরিষ্কার হবে এতে নাকের গহ্বরে ভাইরাস ঢুকলেও সুবিধা করতে পারবে না বেরিয়ে যাবে। মেন্থল না থাকলেও সমস্যা নেই একটু লবণ যোগ করতে পারেন পানিতে।

লাল চা আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারবে

লাল চা অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারবে
কম লিকারের হালকা লাল চা দিনে ৪ বার খেতে পারেন।লাল চায়ের মধ্যে জীবাণুনাশক বা এন্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্য আছে। বারবার শুকনো কাশির ফলে গলার টিস্যু ফেটে যেতে পারে। চা এই ইনফেকশন রোধ করে। অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণে গলার ভেতর চুলকানির মত অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। এটি দূর করতে খুব ভালো একটি উপায় লাল চা খাওয়া। গ্রীন টি খেতে পারেন। গ্রীন টি তে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট আছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

আক্রমণ প্রতিরোধে গড়গড়া কুলি করুন

অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণ প্রতিরোধে গড়গড়া কুলি করুন
গরম পানি দিয়ে গড়গড়া কুলি করুন। গলা ব্যথা হোক বা না হোক সকালে ঘুম থেকে উঠে, দুপুরে এবং সন্ধ্যায় গড়গড়া কুলি করা উচিত। এতে গলার ভেতর জীবাণু বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারবে না।

জিঙ্ক ট্যাবলেট খাবেন

অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ঘরোয়া চিকিৎসায় জিঙ্ক ট্যাবলেট খাবেন
রাতে শোয়ার আগে একটি করে জিঙ্ক ট্যাবলেট খাবেন।জিংক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সতেজ, সজীব রাখে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ভাইরাস ঠেকানোর জন্য এই মুহূর্তে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা বেশি জরুরী।

Vitamin-C খেতে হবে

অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ঘরোয়া চিকিৎসায় Vitamin-C খেতে হবে।
Vitamin-C সমৃদ্ধ ফল ও সব্জি খেতে হবে।পেয়ারা, লেবু, আমলকি, আপেল,কমলা,কাঁচা মরিচ,কিসমিস ইত্যাদি ফলে প্রচুর ভিটামিন-C আছে। এই Vitamin-C কোষের এন্টি অক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।ভিটামিন ‘সি’ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সতেজ, সজীব রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে ভাইরাস সহজে আক্রমণ করে দেহের ক্ষতি করতে পারবে না। আবার এন্টি অক্সিডেন্ট কোষে ভাইরাস প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করবে।
ভিটামিন ‘ডি’ খেতে হবে
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণ প্রতিরোধে ভিটামিন ‘ডি’ খেতে হবে
যেসব খাবারে প্রচুর ভিটামিন ‘ডি’ আছে সেগুলো বেশি করে খাবেন। ডিমের কুসুম,দুধ,কড মাছের তেল,তৈলাক্ত মাছ,কলিজা, মাখন, উন্নত প্রজাতির মাশরুম Vitamin-D তে ভর্তি। ভিটামিন ডি-র সবচেয়ে ভালো উৎস সূর্য। দ্রুত ভিটামিন ডি পেতে চাইলে বাজার থেকে ট্যাবলেট কিনে খেতে পারেন।
করবে।

লেখকঃ আবুল বাশার রিপন খলিফা, 
সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ। 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..