১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার যে লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, ১৯৭১ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হ্যামিলিওনের বাশিওয়ালার বাঁশির সুরের মত দ্বীধাবিভক্ত জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ করে ঐশ্বরিক নেতৃত্বে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালী জাতিকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করে সেই অস্তমিত লাল সূর্যকে প্রজ্জ্বলিত করে এনে দিয়েছিলেন আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা ।
সদ্য স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া একটি রাষ্ট্রকে যখন জাতির পিতা তার নিজ হাতে পুনর্গঠন করে অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা পিতা মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে ৩০লক্ষ শহীদের রক্তের দামে কেনা বাংলাকে আবার পাকিস্থানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে স্বাধীন বাংলাকে পরিনত করে পশ্চিম পাকিস্তানে ।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কে নেতৃত্ব শুন্য করার এক ধারাবাহিক ঘৃন্য অপচেষ্টা পাকিস্তানপন্থী দেশীয় দোশরদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।তা না হলে ১৫ আগস্ট একরাতে তিনটি পরিবারের সব সদস্যদের এক সাথে হত্যা করা হতো না,এমনকি পৃথিবীর ইতিহাসে জেলখানার ভিতরে ঢুকে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মতো নজীরবিহীন ঘটনা সংগঠিত না।
৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালো রাতে পিতা মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে শুধু বঙ্গবন্ধু শুন্যই করা হয়নি পরিনত করা হয়েছে মেধাহীন জ্ঞানহীন সংস্কৃতিহীন উদ্ভট শোষণ আর শাসনের দেশে। যেখানে অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করা যেত,রাস্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বসে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা ব্যবহার করে দল গঠন করা যেত,জনগনের সাথে সম্পৃক্ততাহীন একটি নবগঠিত দলকে হ্যা/না ভোটের মাধ্যম রাস্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করে মিডিয়াকে কু করে ক্ষমতার মসনদে আসীন করা যেত।
সেই কালোরাতে দৈবক্রমে বেচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে ৭৫ পরবর্তী অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখলের রাজনীতির বদলে যখন জনগনের ভোট ও ভাতের অধীকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতির সূচনা করলেন তখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ঘাতকদের বন্ধুকের টার্গেটে পরিনত হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে অন্তত আরো এগারবার বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।এসব হামলায় তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও এ পর্যন্ত নিহত হন ৩৯ জনের মত দলীয় নেতাকর্মী।একুশে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বিকেলে একটি ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চে যখন শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন আকস্মিক এই হামলায় বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে গেলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান সহ ২৩ জন নেতা-কর্মী নিহত হন।এছাড়াও এই হামলায় আরো ৪শ’ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।২১শে আগস্টের ঘঠনাটি আসলেই ১৯৭৫ এর ১৫আগস্টের অসমাপ্ত নাটকের সফল সমাপ্তির একটি ঘৃন্য অপচেষ্টা।
১৫ই আগস্ট ও ২১শে আগস্ট বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কালো অধ্যায়ে একই সূত্রে গাঁথা। এই কালো অধ্যায় দুটি এদেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় নিয়ামক।যতদিন অবধি না এদেশে ১৫ ই আসস্ট ও ২১এর আগস্টের চিহ্নিত সন্ত্রাসী নেতারা তাদের পাপের জন্য জাতির কাছে নি:শর্ত ক্ষমা না চাইবে,যতদিন না তারা উপলব্ধি করবে এদেশে রাজনীতি করতে হলে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করতে হবে এবং অবৈধ পথে ও ষড়যন্ত্রের চোরবালির মাধ্যমে কাওকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা আসলে গণতান্ত্রিক রাজনীতির রীতি হতে পারে না, ততদিন এদেশের রাজনীতি আসলেই মোটা দাগেই বিভক্ত থাকবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক গণতান্ত্রিক কাঠামোর বদলে ক্ষত বিক্ষত গনতন্ত্রের মধ্য দিয়েই আমাদের অগ্রসর হতে হবে।
লেখকঃ ইমদাদুল হক সোহাগ
প্রভাষক, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply