উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়ম যেন কিছুতেই থামছে না। দিনের পর দিন অনিয়ম চললেও কোন ভাবে এর প্রতিকার হচ্ছে না। এই নিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানি বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সময় এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেও তেমন কেউ আমলে নেয়নি। এই ব্যাপারে বরাবরই নিশ্চুপ থেকে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এতে করে অনিয়মে জড়িত হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বহাল তবিয়তে থেকে দেদাঁরসে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তাই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত ১০০ শয্যার এই হাসপাতালের প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে রোগীসহ সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা। এই হাসপাতাল নিয়ে এক অনুসন্ধানে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। ভুক্তভোগীরাও দিয়েছেন এমন তথ্য। উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষের নির্ভরযোগ্য একমাত্র চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্টান চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বছরের পর বছর ধরে সিন্ডিকেট ভিত্তিক দুর্নীতির ভূতের কাছে নিমজ্জিত এই সরকারী প্রতিষ্ঠানটি। দৈনিক অর্ধসহস্রাধিক রোগির একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটির ধারণক্ষমতা রয়েছে ১০০ শয্যার। কিন্তু এই রোগীদের অজুহাতে বরাদ্ধকৃত ঔষধ পত্রগুলোর মধ্যে নয় ছয় করে লুটেপুটে খাচ্ছে একটি চক্র। জানাগেছে, হাসপাতালের ওয়ার্ড পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, ঔষধে নয় ছয়, নানা অব্যবস্থাপনা, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অশুভ আচরণ, প্রতিবাদ করলেই নাজেহাল, অভিজ্ঞ ডাক্তার সংকট, খাবারে ব্যাপক অনিয়ম, রোগিদের তদারকির অভাব। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভোগান্তির আরেক নাম ডায়রিয়া ওয়ার্ড। আর প্রতিনিয়ত এমন একাধিক অভিযোগে চলছে উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি। রোগিদের এই চরম ভোগান্তি কমাতে চূড়ান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবী করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, রোগিদের তীব্র হাহাকার। সরকারিভাবে সরবরাহকৃত প্যারসিটামলই যেনো একমাত্র ভরসা। অবশ্য কিছু কিছু রোগিদের ক্ষেত্রে ব্যাথার ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। এর বাহিরে কোনো ঔষধ রোগিদের দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ইনজেকশনের সিরিঞ্জটাও বাহিরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের। এ বিষয়ে আরও জানতে হাসপাতালের ৪র্থ তলার পুরুষ ওয়ার্ডে গেলে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক রোগি সীটের অভাবে মেঝেতে পড়ে আছে। নেই কোনো চিকিৎসা। যেনো এক যুদ্ধবিধ্বস্ত মাঠে মানুষ ছটপট করছে! নেই কোনো ডাক্তার কিংবা শিক্ষানবীশ। মেঝেতে পড়া থাকা এক ডায়রিয়া রোগী জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৩দিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছি। এখানে কোনো ডাক্তারের দেখা মিলে না। সকাল সন্ধ্যায় কয়েকজন নার্স এসে ফাইল খোঁজে। যার কারণে আমি তাদের কথিত সেবায় অতিষ্ঠ হয়ে বাহিরের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছি। এদিকে আউটডোরের ফার্মেসীতে গিয়ে দেখা মেলে রোগিদের দীর্ঘ লাইন। তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে প্যারাসিটামলসহ আরও কিছু নরমাল ঔষধ। সেখানেও একই অভিযোগ। আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের জন্য অপেক্ষা আর অপেক্ষা করছে উপজেলার বিভিন্ন স্থান হতে আসা শতশত রোগি। তাদের অভিযোগ দুপুরেও ডাক্তার চেম্বারে আসেনা। কারন একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক একাধিক হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। উপজেলার ঢেঁমুশিয়া থেকে আসা রোগি আব্দুল করিম জানান, সম্প্রতি হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার নিরীক্ষার জন্য নতুন মূল্য তালিকা ঝুলে দেওয়া হয়েছে। মূল্যটি সাধারণ রোগিদের জন্য অতিরিক্ত হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আরেক রোগী আবু তালেব জানান, সরকারি নাম দিয়ে এধরণের কসাইখানা খুলে বসেছে সিন্ডিকেটটি। উপজেলার ফাঁসিয়াখালী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক সেবাপ্রার্থী জানান, ১০০ বেডের হাসপাতালে প্রায় ২০০/৩০০জনের অধিক রোগির চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এমন অজুহাতে ঔষধ, খাবারসহ সরকারি নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেবাপ্রার্থীরা। হারবাং হতে বড় ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে আসে মাহামুদুল করিম। তিনি জানান, তার রোগি প্রচন্ড মাথা ব্যাথাসহ একাধিক রোগ নিয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ হতে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ৪র্থ তলার পুরুষ ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। তারপর শুরু হলো অপেক্ষা, নেই কোনো চিকিৎসক। পৌরসভার আবুল কালাম জানান, হঠাৎ মাথায় আঘাত জনিত রোগে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছি। গেল ৪দিন ধরে চিকিৎসা চলছে। খাবারের ব্যাপারে প্রতিবেদক তার কাছ থেকে জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, খুবই নিন্মমানের খাবার দেওয়া হয়। অপরদিকে সাংবাদিকরে সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে সেখানে দায়িত্বরত নার্সদের সাথে রোগী স্বজন সেজে কথা বলতে চাইলে তখন সাংবাদিকরা তাদের কাছে অপরিচিত হওয়ায় তাদের সাথেও করে অসদাচরণ। এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোভন দত্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাসপাতালে ডাক্তাররা দিনে দুইবার রোগীদের কাছে যান। এমনকি ৪র্থ তলায় ২৪ ঘন্টা একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার থাকেন। রোগীদের সমস্যা অনু্যায়ী তিনি জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এদিকে প্রতিবেদক গতকাল রাত ৮টার পরে সরেজমিন গিয়েও রোগীদের রিপোর্ট দেখতে সন্ধ্যা ৭টায় যে ডাক্তার যাওয়ার কথা তিনি কেন যাননি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন রাত ৮টায় ও রোগীদের রিপোর্ট দেখতে যায়নি এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে জানান তিনি।
Leave a Reply