কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম যেন কিছুতেই থামছে না। দিনের পর দিন অনিয়ম চললেও কোন ভাবে এর প্রতিকার হচ্ছে না। এই নিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানি বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সময় এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলেও তেমন কেউ আমলে নেয়নি। এই ব্যাপারে বরাবরই নিশ্চুপ থেকে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এতে করে অনিয়মে জড়িত হাসপাতালের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বহাল তবিয়তে থেকে দেদাঁরসে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তাই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে রোগীসহ সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা। এই হাসপাতাল নিয়ে এক দীর্ঘ অনুসন্ধানে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। ভুক্তভোগীরাও দিয়েছেন এমন তথ্য। উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের নির্ভরযোগ্য একমাত্র চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বছরের পর বছর ধরে সিন্ডিকেট ভিত্তিক দুর্নীতির ভূতের কাছে নিমজ্জিত এই সরকারী প্রতিষ্ঠানটি। দৈনিক অর্ধসহস্রাধিক রোগির একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটির ধারণক্ষমতা রয়েছে ৫০ শয্যার। কিন্তু এই রোগীদের অজুহাতে বরাদ্ধকৃত ঔষধ পত্রগুলোর মধ্যে নয় ছয় করে লুটেপুটে খাচ্ছে একটি চক্র। জানাগেছে, হাসপাতালের ওয়ার্ড পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, ঔষধে নয় ছয়, নানা অব্যবস্থাপনা, এনজিওদের দখল, শিক্ষানবীশ ডাক্তার নির্ভরতা, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অশুভ আচরণ, প্রতিবাদ করলেই নাজেহাল, অভিজ্ঞ ডাক্তার সংকট, খাবারে ব্যাপক অনিয়ম, রোগিদের তদারকির অভাব। পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভোগান্তির আরেক নাম ডায়রিয়া ওয়ার্ড। গত ১নভেম্বর সরেজমিন গেলে দেখা যায়, মগনামা থেকে ৬ বছরের ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন তার অসহায় পিতা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও তার বাচ্চার জন্য কোন ধরনের চিকিৎসা না পাওয়ায় সুচিকিৎসার পেতে তদবির করান এক স্থানীয় নেতাকে দিয়ে। কিন্তু নেতাকে দিয়ে তদবীর করানোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্তব্যরত ডাক্তার জয়নাল আবেদীন। পরে ডায়রিয়া আক্রান্ত ঐ শিশুর পিতাকে হয়রানি করতে সুস্থ চিকিৎসা সেবা না দিয়ে রেফার করে দেয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়াও সরেজমিনে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, রোগিদের তীব্র হাহাকার। সরকারিভাবে সরবরাহকৃত প্যারসিটামলই যেনো একমাত্র ভরসা। অবশ্য কিছু কিছু রোগিদের ক্ষেত্রে ব্যাথার ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। এর বাহিরে কোনো ঔষধ রোগিদের দেওয়া হচ্ছে না। ফার্মেসীতে মিলছেও না প্রয়োজনীয় সব ঔষধ। এ বিষয়ে আরও জানতে হাসপাতালের ২য় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে গেলে দেখা যায়, অর্ধ শতাধিক রোগি সীটের অভাবে মেঝেতে পড়ে আছে। নেই কোনো চিকিৎসা। যেনো এক যুদ্ধবিধ্বস্ত মাঠে মানুষ ছটপট করছে! নেই কোনো ডাক্তার কিংবা শিক্ষানবীশ। এদিকে, এ হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) মুজিবুর রহমান সরকারি হাসপাতালে ডিউটি চলাকালীন সময়ে সকল স্টাফদের তার মালিকানাধীন প্রাইভেট প্রতিষ্টান নুর হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগি নিয়ে যেতে চাপ সৃষ্টি করে প্রতিনিয়ত। জানা যায়, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মুজিবুর রহমানের চেম্বার সহকারী খোকন, মিনারা বেগম, সাকিব, পুতুল ও মুস্তাকিমকে জরুরি বিভাগে নিয়োগ দেয় এবং তাদেরকে ব্যবহার করেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা প্রার্থীদের সুচিকিৎসা না দিয়ে তার মালিকানাধীন প্রাইভেট হাসপাতালটিতে রোগি পাঠানো হয়। অন্যদিকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের নুর হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করাতে পেকুয়া সরকারি হাসপাতাল প্রধানসহ মরিয়া। এছাড়াও অতি লোভের কারণে নুর হাসপাতালে গাইনি রোগীর অপারেশন করাতে সরকারি হাসপাতালের প্রধানসহ অপারেশনের ব্যবস্থা করছে বলেও জানা যায়। এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহি উদ্দিন মাজেদ মোবাইলে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং তার অফিসে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
Leave a Reply