মানুষের মৌলিক চাহিদার গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে চিকিৎসা। আর এই চিকিৎসা সেবা সকলের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সরকার উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতলের পাশাপাশি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছেন। যার বাৎসরিক ব্যয় প্রায় সাড়ে চৌদ্দ-শ কোটি টাকা। কিন্তু এতো টাকা ব্যয় করেও কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারীদের দ্বারা সঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে কি প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ রোগীরা? এই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে জনমনে। আর জনমনে এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে অনুসন্ধানে নামে প্রতিবেদক টিম। এসময় প্রতিবেদক টিম সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানতে পারে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র চলছে অনিয়মের মধ্য দিয়ে। সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও বন্ধ হয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই। এতে করে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ রোগীরা। যার ফলে তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালের উপর। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হারবাং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির স্বাস্থ্য সহকারীর দায়িত্বহীনতার গল্প। এ বিষয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করলে তারা অভিযোগের ঝড় তুলে ধরে বলেন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী ডাঃ সুজন ত্রিপুরা নিয়মিত ক্লিনিকে আসে না। মাঝে মাঝে আসলেও সকাল ১১টার পর এসে দুপুর একটার আগেই চলে যায়। এমনকি এ স্বাস্থ্য সহকারী এক্কেবারে অনুপস্থিত থাকারও নজির রয়েছে। ফলে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা রোগীদের প্রায়ই চিকিৎসা ও ঔষধ না নিয়ে খালি হাতে বাড়ী ফিরতে হয়। এদিকে, স্বাস্থ্য সহকারীর বিষয়ে হারবাং ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইউসুফের সন্তান মোঃ মিরান বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীর অনিয়মে অতিষ্ঠ হারবাং ইউনিয়নের মানুষ। যার অনিয়মের স্বীকার সে নিজেও। গত ২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলেও স্বাস্থ্য সহকারী ডা: সুজন ত্রিপুরা না থাকায় চিকিৎসা সেবা না নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে তাকে। পরে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে তার মেয়েকে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। এছাড়াও তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও স্বাস্থ্য সহকারী ডাঃ সুজন ত্রিপুরা সরকারি নিয়মকানুন যেন কিছুই মানছে না। সপ্তাহে মাত্র দুইদিন রোগী দেখলেও বাকী ৫ দিন চকরিয়া পৌরশহরের বেসরকারি একটি ক্লিনিকে তিনি রোগী দেখেন। যেদিন দুইদিন রোগী দেখেন তাতেও তিনি কোন ধরনের সময়ের বাধ্যবাধকতা বা নিয়মকানুন মানেননা। অন্যদিকে, প্রতিবেদক টিমের সরেজমিন পরিদর্শন ও সাধারণ জনগণের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সহকারী ডাঃ সুজন ত্রিপুরার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং পরে প্রতিবেদকের প্রশ্নের তোপের মুখে তিনি বলেন, চকরিয়ার একাধিক সাংবাদিককে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ও তারা তার বক্তব্য রেকর্ড ও করেছেন বলে জানান। তাই প্রতিবেদককে তিনি অন্য সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য শুনে লিখতে বলেন। পরে এ প্রতিবেদক তার উত্তরের বিপরীতে গিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি তখন এসব বিষয় তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদীতভাবে করছে বলে জানান। এবিষয়ে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি অফিসিয়াল হওয়ায় অফিস টাইমে তার অফিসে গিয়ে সরাসরি কথা বলার আমন্ত্রণ জানান এ প্রতিবেদককে। অপরদিকে, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ঐ স্বাস্থ্য সহকারীকে নিয়মিত হওয়ার জন্য বলা হবে। এরপরও যদি সে নিয়মিত না হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply